সৃষ্টিকর্তার সঙ্গে আলাপের সেরা সুযোগ ইতিকাফ

সিয়াম শুধু আল্লাহর জন্য। বান্দা ক্ষুধা-তৃষ্ণা, দুনিয়াবি কামনা-বাসনা ছেড়ে সৃষ্টিকর্তার রঙে রঙিন হবেন, তার গুণে গুণান্বিত হবেন, তাতেই সায়েমের সার্থকতা মিলবে মহাপ্রভুর সন্তুষ্টি। আল্লাহর প্রেমে বান্দা আত্মহারা হয়ে তার রঙে বিলীন হবেন।

এর জন্য প্রয়োজন গভীর এশক, প্রত্যয় ও প্রচেষ্টা। যার অন্যতম উপায় ইতেকাফ। পরম প্রেমাস্পদের জন্য প্রেমিকের ব্যাকুলতা প্রদর্শনের অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় ইতেকাফ। রমজানের ২১তম রাত থেকে ২৯তম রাত পর্যন্ত সাংসারিক যাবতীয় ঝামেলা থেকে মুক্ত হয়ে ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে অবস্থান করাই ইতেকাফ।
এর বহুবিধ উদ্দেশ্য রয়েছে- দুনিয়াদারির ঝামেলামুক্ত হয়ে একান্ত নিরালায় মহাপ্রভুর ধ্যানে প্রেম নিবেদন করা, রমজানের শেষ দশকে লাইলাতুল কদর তালাশ করা, ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে রমজানের পুণ্যময় সময়ে গুনাহ মাফ এবং নেকির পাল্লা ভারি করা।

সহিহ রেওয়ায়েতে আছে রাসূল পাক (সা.) রমজানের শেষ দশকে নিয়মিত ইতেকাফ করতেন এবং তার ইন্তেকালের পর উনার স্ত্রীগণ ইতেকাফ করতেন।

যারা নিয়ত করেছেন ইতেকাফে বসবেন, আজ সন্ধ্যাতেই তারা মসজিদে চলে যাবেন। পরিবারের ভরণ-পোষণের বন্দোবস্ত করা, চাকরি কিংবা ব্যবসায়িক ঝামেলা থেকে মুক্ত থাকা, খাবার ও প্রয়োজনীয়সামগ্রী সময়মতো মসজিদে পৌঁছানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করেই আল্লাহর ধ্যানে বসবেন তারা।

১০ দিন ইতেকাফ করা অত্যন্ত মর্যাদাপূর্ণ। রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করবে, সে ব্যক্তি দুটি হজ ও দুটি ওমরার সমান সওয়াব হাসিল করবে।’ তিনি আরও বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি ইবাদতের নিয়তে সওয়াবের আশায় ইতেকাফ করবেন তার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।’ তা ছাড়া যিনি ইতেকাফ করবেন, তিনি নিশ্চয়ই ‘লাইলাতুল কদর’র মর্যাদা লাভ করবেন।

পুরুষ ইতেকাফের জন্য নিয়মিত নামাজ হয় এমন কোনো মসজিদে যাবেন আর মহিলারা আপন ঘরে পর্দার সঙ্গে ইতেকাফ করবেন। ইতেকাফকারীকে সব সময় পাক-পবিত্র থাকতে হবে। ফরজ ইবাদতের পাশাপাশি বেশি বেশি আল্লাহর জিকির-আজকার, নফল নামাজ আদায়, কোরআন তেলাওয়াত, দরুদ শরিফ পাঠ, মোরাকাবা-মোশাহাদা ও অন্যান্য ইবাদতে সময় কাটাতে হবে।

ইতেকাফ স্মরণ করিয়ে দেয় রাসূল (সা.)-এর হেরা গুহায় ধ্যানমগ্ন থাকার ঐতিহাসিক ঘটনা। তিনি সেখানে দীর্ঘ ১৫ বছর গভীর প্রেম সাধনায় কাটিয়েছিলেন এবং লাভ করেছিলেন ঐশীগ্রন্থ আল কোরআন। যা নাজিল হয়েছিল মাহে রমজানের পবিত্র কদরের রাতে। সেই ঐশ্বরিক ধ্যানের মর্ম উপলব্ধি করতে এবং শবে কদরের বিশেষ মুহূর্তে প্রেমময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে প্রেমালাপের সুর্বণ সুযোগ পেতে রমজানের তৃতীয় দশকে ইতেকাফের বিধান এসেছে।

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে সামর্থ্যবানরা ২১-৩০ রমজান কাবা ও মসজিদে নববীর প্রেমকাননে হাজির হন। সেখানে লাখ লাখ ইতিকাফকারীর চোখে-মুখে দেখেছি ঐশী প্রেমের উচ্ছ্বাস। আল্লাহ যাদের সামর্থ্য দিয়েছেন, তারা জীবনে একবারের জন্য হলেও যেন কাবা বা মসজিদে নববীতে ইতেকাফ করেন। প্রেমময়ের সঙ্গে প্রেমালাপের শ্রেষ্ঠ সময় ইতেকাফ।

লেখক : ইসলামী চিন্তাবিদ

শেয়ার করুন: