শতাধিক মন্ত্রী-এমপি ও নেতার বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাচ্ছে আ’লীগ

স্থানীয় সরকার নির্বাচন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্বের নজরের বাইরে ছিল না। এটা তৃণমূল নেতাকর্মী সমর্থকরা অল্প কয়েক দিনের মাঝেই দেখতে পাবেন। তবে মাঝে মাঝে তৃণমূলের নেতাকর্মী সমর্থকরা দৃশ্যমাণ কিছু দেখতে না পাওয়ায় অনুশোচনায় ভোগেন। দল করে আদৌ কোন লাভ আছে? দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী নেতাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। এবার কর্মীদের সেই আশা পূরণ হতে যাচ্ছে।

উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে যে সকল মন্ত্রী-এমপিরা নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে আনারস, ঘোড়ার গাড়ি প্রতীকের হয়ে কাজ করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে দলের হাইকমান্ড। আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনুমোদন দিয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে অ্যাকশনে যাওয়ার।

আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারণী পর্যয়ের এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, স্থানীয় সরকার নির্বাচন, বিশেষ করে উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে দলের প্রার্থীর বিরুদ্ধে গিয়ে যে সকল মন্ত্রী-এমপি এবং জেলার সভাপতি-সাধারণ সম্পদাক নৌকার বিপক্ষে গিয়ে বিদ্রোহী প্রার্থীর আনারস, ঘোড়ার গাড়িসহ অসংখ্য প্রতীকের প্রার্থীদের পক্ষে মাঠে সক্রিয় ভাবে কাজ করেছেন, তাদের বিরুদ্ধে অচিরেই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ইতোমধ্যে তাদের তালিকাও হয়ে গেছে, তবে এসব নেতাদের বিষয়ে বেশি কথা বলতে চাননি তিনি। সকলেই তাকিয়ে আছেন নেত্রীর দিকে। কী ব্যবস্থা নেন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নেওয়া মন্ত্রী-এমপিদে বিষয়ে। এ তালিকায় মন্ত্রী-এমপিসহ স্থানীয় পর্যায়ের শতাধিক নেতার নাম এসেছে।

এদিকে গত রোববার (১৯ মে) প্রধানমন্ত্রী গণভবনে আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের যৌথ সভায় এ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়েছে। আলোচনায় উঠে এসেছে, দলের সুসময়েই এমন বিদ্রোহ!

তবে দুঃসময়ে তারা যে দলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিবে না, তার কি প্রমাণ আছে? দলের অনেক নেতাই প্রধানমন্ত্রীর প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য। প্রধানমন্ত্রী এ প্রসঙ্গে বলেন, নৌকা প্রতীকের বিরোধিতাকারীদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিকভাবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোন ছাড় নয়। দল আগে, তার পর নেতা।

আওয়ামী লীগের একটি সূত্রে থেকে জানা যায়, যারা উপজেলা ও পৌরসভা নির্বাচনে দলের মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি, অনেক জায়গায় দেখা গেছে নির্বাচনী প্রচারনায় নিজের কর্মী সমর্থকদের বাধ্য করেছেন বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে অবস্থান নিয়ে প্রচারণায় অংশ গ্রহণ করতে। অতি শীঘ্রই দলের শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রেরিত চিঠি পৌঁছে যাবে। চিঠিতে স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকবে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য কারণ দর্শাতে বলা হবে।

আওয়ামী লীগের স্থানীয় পর্যায়ের নেতা ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মোয়াজ্জেম হোসেন বাবুল বলেন, আমি শুনেছি, স্থানীয় সরকার নির্বাচেন দলের বিদ্রোহী প্রার্থীদের পক্ষে অবস্থান নেওয়া নেতাদের বিরুদ্ধে কারণ দর্শাণ নোটিশ পাঠানো হবে।

যে বা যারাই দলের নৌকা প্রতীকের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসময় তাকে প্রশ্ন করা হয় ময়মনসিংহ জেলার ত্রিশাল উপজেলর নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থীর বিপক্ষে ময়মনসিংহ জেলার একাধিক শীর্ষ নেতা নৌকার বিপক্ষে প্রচারণায় অংশগ্রহণ করেছেন। এরপরই এ বিষয়ে কোন উত্তর না দিয়ে ফোন কেটে দেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মেসবাহ উদ্দিন সিরাজ বলেন, উপজেলা নির্বাচনে দলের মাঝে যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নীতিগত সিদ্বান্ত সর্বশেষ কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠক থেকেই নেওয়া হয়েছে।

কাদের ভাই সুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর পরই এই চিঠি প্রেরণ করা হবে বলে জানি। অচিরেই সেই চিঠি প্রেরণ হচ্ছে। কেউ দলের উর্দ্ধে নয়, একথাটা সকল নেতাকে উপলব্ধি করতে হবে। বিশেষ করে এবার দেখা গেছে অনেক উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষে মন্ত্রী-এমপিদের অবস্থান নিতে, এটা কিন্তু দলের জন্য খারাপ নজির।

শেয়ার করুন: