গলায় কামড় দিয়ে ধর্ষণ করে মাদ্রাসা মালিকের ছেলেরা, সহযোগীতা করে হুজুররা

চোখের জলে এখনও বুক ভেজে মা সীমা আক্তারের। আর্তনাদ আর আহজারি থামছেই না তার। গত ২২শে সেপ্টেম্বর রাজধানীর রামপুরার উলনে জাতীয় মহিলা মাদ্রাসার ছাদের অজুখানা থেকে উদ্ধার করা হয় ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী সানজিদা রশিদ মিমের মরদেহ। পরিবারের অভিযোগ, মীমকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে। অভিযোগ এসেছে, টাকার বিনিময়ে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পাল্টে দেয়ারও।

পিবিআই এটিকে আত্মহত্যা বলে তদন্ত প্রতিবেদন দিলেও আদালতে নারাজি আবেদন দিতে যাচ্ছে নিহতের পরিবার। তাদের দাবী, অর্থের প্রভাবে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা হচ্ছে। পরিবারটি বলছে, তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। মাদ্রাসার পরিচালক ও তার ছেলেসহ ৮ জনকে সন্দেহ তাদের।

সীমা আক্তার বলেন, ‘ওর (মিম) শরীরের বাম পাশে বারির দাগ ছিলো। পায়ের তলা কাটা ছিলো, গলায় কামরের দাগ ছিলো। এই কাজ করেছে মালিকের ছেলেরা, হুজুররা সহযোগীতা করেছে।’

এদিকে, ঘটনা ধামাচাপা দিতে মোটা অংকের অর্থ দেয়ার প্রস্তাব করা হয়েছিল বলে জানান মিমের বাবা-মা। মীমের বাবা হারুণ মোল্লা বলেন, একজন ২০ লাখ টাকা দিতে চায়, আরেক জন ৫০ লাখ টাকা দিতে চায়।

মরদেহের ময়নাতদন্তে মিমকে ধর্ষণের কোন প্রমাণ নেই উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের অভিযোগ, টাকার বিনিময়ে অভিযুক্তদের পক্ষে দেয়া হয়েছে এই রিপোর্ট।

মিমের মা বলেন, সে (ফরেন্সিক বিভাগের কর্মকর্তা) আমাকে রিপোর্টের জন্য আড়াই মাস ঘুরিয়েছে। তার পর এক দিন ফোন করে বলে এই মাদ্রাসা দেখতে আসবেন তিনি। ঢাকা মেডিকেলে আমার চোখের সামনে টাকা দেয়া হয়েছে, সিকান্দারের হাতে।

অভিযোগ অস্বীকার করলেও এ নিয়ে ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হননি, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ ও মীমের ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসক প্রদীপ বিশ্বাস।

মিমের বাবার অভিযোগ, মিমের মরদেহ দেবার কথা বলে ঘটনার দিন সাদা কাগজে সই নিয়ে নিজেদের মত মামলা সাজায় হাতিরঝিল থানা পুলিশ। পরে আদালতে মাদ্রাসার পরিচালকসহ আটজনকে আসামী করে মামলা করেন মিমের মা। আদালত সেই মামলার তদন্তের নির্দেশ দেয় পিবিআইকে।

পিবিআই তাদের প্রতিবদেনে এটিকে আত্মহত্যা বলে উল্লেখ করে। পিবিআই’র এই তদন্ত প্রতিবদেনের বিরুদ্ধে নারাজি দিতে যাচ্ছে মিমের পরিবার।

মিমের পরিবারের আইনজীবী মো: লিটন মোল্লা বলেন, আমরা এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে নারাজি দেব। যদি এর সঠিক তদন্ত আসে, তবে যারা আসামি আছেন তারা অবশ্যই দায়ী হবে।

এদিকে, পিবিআই বলছে,তাদের তদন্ত নির্ভূল। তবে নারাজির পর আদালত নির্দেশ দিলে আবারও তদন্ত করতে আপত্তি নেই তাদের।

পিবিআই এর ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার বলেন, আদালত আমাদের কু দিতে পারে, অথবা অন্য সংস্থাকে দিয়ে তারা যাচাই করে নিতে পারে। অথবা নতুন কোনো প্রশ্ন উঠলে সেটাও আমাদের দিতে পারে।’

রামপুরায় মিমের মাদ্রাসায় গিয়ে পাওয়া যায় আদালতে দায়ের করা মামলার তিন নম্বর আসামী মাদ্রাসার শিক্ষা সচিব হোসাইন আহমদকে। তিনি সব অভিযোগ অস্বীকার করেন।

হোসাইন আহমেদ বলেন, তারা যে বলছে, বিভিন্ন যায়গায় টাকা দিয়ে মামলা আমাদের মত করে নেয়া হচ্ছে এটা হাস্যকর কথা। এটা কোনোভাবেই সম্ভব না।

শেয়ার করুন: