নকলে বাধা দেওয়ায় শিক্ষককে মারধর

পরীক্ষার হলে নকল করতে না দেওয়ায় পাবনার শহীদ বুলবুল সরকারি কলেজের শিক্ষক মাসুদ আহমেদকে প্রকাশ্যে মারধর করা হয়েছে। মাসুদ আহমেদ ৩৬তম বিসিএসে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন। তিনি বাংলা বিভাগের শিক্ষক।

গত ৬ মে এইচএসসি পরীক্ষার উচ্চতর গণিত পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা চলার সময় দুজন শিক্ষার্থী নকল করার চেষ্টা করলে শিক্ষক মাসুদ আহমেদ তাদের বাধা দেন। এ ঘটনায় গত ১২ মে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হলে কলেজের প্রধান গেইটের সামনে মাসুদ আহমেদকে আটকায় কিছু বহিরাগত যুবক।

তারা তাকে মারধর করেন। এক পর্যায়ে তার পিঠে লাথি মারেন এক যুবক। মারধরের সেই ঘটনাটি একটি সিসিটিভির ফুটেজে ধরা পড়ে। এ ঘটনার ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সারাদেশে নিন্দার ঝড় উঠে।

সিসি ক্যামেরা ফুটেজে দেখা যায়, ওইদিন এইচএসসির ব্যবহারিক পরীক্ষা শেষে মোটরসাইকেলে বাড়ি ফিরছিলেন সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক মাসুদুর রহমান।

এ সময় কলেজের মূল ফটকের সামনে অতর্কিত হামলা চালিয়ে মাসুদুরকে মারধর শুরু করে একদল যুবক। তখন ওই কলেজের সভাপতি শামসুদ্দীন জুন্নুনকে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করতে দেখা গেলেও, শিক্ষকদের অভিযোগ জুন্নুনের নির্দেশেই এ হামলার ঘটনা ঘটে।

এদিকে, এ ঘটনার পর থানায় অভিযোগ তো দূরের কথা নিরাপত্তার অভাবে ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না শিক্ষক মাসুদুর রহমান। কলেজ সূত্রে জানা যায়, গত ৬ মে (সোমবার) এইচএসসি পরীক্ষার ডিউটি করছিলেন প্রভাষক মাসুদুর রহমান।

এ সময় তিনি দেখতে পান তার কক্ষের দুই জন পরীক্ষার্থী অসদুপায় অবলম্বন করছেন। এ ঘটনায় তিনি ওই দুই শিক্ষার্থীর খাতা কেড়ে নেন এবং নিয়মানুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। এ ঘটনার জেরে ১২ মে (রোববার) এইচএসসি পরীক্ষা শেষে কেন্দ্র থেকে বের হওয়ার পথে হামলার শিকার হন প্রভাষক মাসুদুর রহমান।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী শিক্ষক প্রভাষক মাসুদুর রহমান বলেন, গত ৬ মে কলেজের ১০৬ নম্বর কক্ষে উচ্চতর গণিত পরীক্ষায় পরীক্ষকের দায়িত্ব পালন করছিলাম। এ সময় দুইজন পরীক্ষার্থী দেখাদেখি করায় তাদের সতর্ক করি।

এতেও তারা বিরত না হওয়ায় কিছু সময়ের জন্য খাতা নিলে ছাত্রলীগের ছেলেরা আমার ওপর ক্ষুব্ধ হয়। এর জের ধরে গত রোববার বাড়ি ফেরার সময় কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি শামসুদ্দীন জুন্নুনের নির্দেশে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা আমাকে কিল, ঘুষি, লাথি দিয়ে ফেলে দেয়। পরে শিক্ষকরা এসে আমাকে উদ্ধার করে।

তিনি বলেন, ঘটনার পর আমি ভয়ে বিষয়টি কাউকে জানাইনি। থানায় অভিযোগ করারও সাহস হয়নি। গত রাতে ফেসবুকে বিষয়টি ছড়িয়ে পড়ার পর অনেকেই আমাকে সাহস দিয়েছেন।

শিক্ষক মাসুদুর আরও বলেন, আমাকে মারধরের পর ঘটনা আড়াল করতে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা যৌন হয়রানির কথা বলা হচ্ছে। যে নারী শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করেছে তারাও আমাকে বলেছে তাদের অভিযোগ দিতে বাধ্য করা হয়েছে। আমি সরকারি চাকরিজীবী হিসেবে কর্মরত অবস্থায় লাঞ্ছিত হলাম। এরপরেও যদি বিচার না পাই তবে আর কিছুই বলার নেই।

তবে, এ অভিযোগ অস্বীকার করে সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজের ছাত্রলীগের সভাপতি শামসুদ্দিন জুন্নুন বলেন, ‘আমি বা আমার সংগঠনের কেউ এর সঙ্গে জড়িত না। এর সঙ্গে যারা জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’

এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি নিশ্চিতে আইনের আশ্রয় নেওয়া হবে বলে জানান সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজ অধ্যক্ষ। অধ্যাপক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, আইনগত ব্যবস্থা নিব, এ ব্যাপারে আমরা শিক্ষক সমিতিকে জানিয়েছি। মাসুদুর রহমান সরকারি শহীদ বুলবুল কলেজে বাংলা বিভাগের একজন প্রভাষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

শেয়ার করুন: