ডিম খেতে কার না ভাল লাগে। পুষ্টিকর এই খাবারের গুণাগুণের কথা আমরা কম বেশি সবাই জানি। `ডিম` ও `দুধ` এ দুটো খাবারকে আমরা সুপারফুড বলি। কারণ, আমাদের শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন ও ক্যালসিয়ামের অনেকখানি আমরা এই দুটি খাবার থেকে পাই। আমরা আজকে ডিমের পুষ্টিগুণের পাশাপাশি ডিম কোন সময় খেতে হবে, কোন বয়সী মানুষের কয়টা ডিম খাওয়া উচিত, ডিম কী সেদ্ধ করে খাওয়া ভাল নাকি ভাজি করে খেতে হবে, কুসুম খাব কী খাবনা- এসব নিয়ে বিস্তারিত আলাপ করব।
আপনি যখন বাচ্চাদের ডিম খেতে দিবেন তা সেদ্ধ করে দিতে পারেন। চাইলে পোচ, অয়েল পোচ বা পানি পোচ করেও দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখব ক্যালরিটা যাতে ঠিক থাকে। বাচ্চারা যেহেতু দৌড়ঝাঁপ বেশী করে তাই তার ক্যালরি বেশি লাগে। একটা ডিম সেদ্ধ করে খেলে সেখান থেকে যে ক্যালরি পাওয়া যায় অয়েল পোচ করে খেলে তার ক্যালরিটা অনেক বেড়ে যায়। সেটা বাচ্চাদের জন্য অনেক উপযোগী।
কিন্তু যারা ওজন কমাতে চাচ্ছেন তাদের জন্য ডিম অয়েল পোচ না খেয়ে সেদ্ধ খাওয়া উচিত। যাদের কোলস্টেরলের সমস্যা তারা অনেক সময় কুসুমটা ফেলে দিয়ে শুধু সাদা অংশ খেয়ে থাকেন। তাদের জন্য সুখবর হলো দেশে এখন ওমেগা- ৩ সমৃদ্ধ ডিম পাওয়া যাচ্ছে যা খেলে আপনার কখনো হৃদরোগের সমস্যা হবে না বরং হার্ট থাকবে ভাল।
ওমেগা -৩ হলো এক ধরনের অসম্পৃক্ত চর্বি। স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ মাত্রই জানেন, সম্পৃক্ত চর্বি হৃদযন্ত্রের জন্য ক্ষতিকর। তেল-চর্বিযুক্ত খাবার একটা বয়সের পর সে কারণে খেতে মানা। কিন্তু অসম্পৃক্ত চর্বিযুক্ত খাবার খেতে বাধা নেই,বরং এটি রক্তে উপকারি চর্বির পরিমাণ বাড়ায় এবং দেহের নানা উপকার করে। প্রকৃতিতে কয়েক ধরনের ওমেগা-৩ চর্বি আছে।
গর্ভাবস্থায় ডিম খাওয়া খুব জরুরি। কারণ, অনেকে মাছের গন্ধটা নিতে পারছেন না কিন্তু তার প্রোটিনটা নিশ্চিত করতে হবে। সেক্ষেত্রে ডিম খাওয়া উচিত। আবার যদি এমন হয় বারবার মাছ বা মাংস খেতে ভাল লাগছে না সেক্ষেত্রেও ডিম খেতে পারেন যা আপনার প্রয়োজনীয় প্রোটিনের চাহিদা পূরণ করবে। যারা লিভার, হার্ট বা ডায়াবেটিক সমস্যায় ভুগছেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই- যখন আপনি ডিম খাবেন তখন আপনাকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে এ্যালবুমিনের পরিমাণটা কত আছে।
এ্যালবুমিনের পরিমাণ যদি কম থাকে তাহলে দৈনিক চারটা ডিম খেতে পারেন। তবে তার আগে অবশ্যই কনসালটেন্টের পরামর্শ নিতে হবে। এখানে বলে রাখা আবশ্যক, অন্য সব খাদ্য উপাদান বিকল্প উৎস থেকে পাওয়া গেলেও এ্যালবুমিন অন্য কোন খাদ্য উৎস থেকে পাওয়া সম্ভব নয়। এ্যালবুমিন শুধু মাত্র ডিমে পাওয়া যায়। তাই প্রত্যেকের সুস্থ সুন্দর জীবন যাপনের জন্য প্রত্যেকদিন একটা করে ডিম খাদ্য তালিকায় রাখা উচিত। লেখক: নিউট্রিশিয়ানিস্ট ও ডায়াটেশিয়ান, বিআরবি হাসপাতাল, ঢাকা।