১১ হাজার কেভি বিদ্যুতে মৃত্যুমুখী পারভেজ, পল্লী বিদ্যুৎ বলছে, তাদের কেউ না!

পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির আওতায় ভাড়াটে ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে কাজ করত বরগুনার বামনা উপজেলার ডৌয়াতলা ইউনিয়নের পাকাপোল এলাকার মো. পারভেজ হোসেন (২৫)। ঘূর্ণিঝড় ফণীর কারণে বামনা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যাওয়ায় সংযোগ বন্ধ থাকে।

এ কারণে উপজেলার রামনা ইউনিয়নের বলইবুনিয়া গ্রামে প্রায় পাঁচ দিন ধরে বিদ্যুৎ ছিল না। স্থানীয় পল্লী বিদ্যুতের নিযুক্ত ইলেকট্রিশিয়ান মো. রাব্বানীর মাধ্যমে ওই এলাকায় ১১ হাজার কেভি লাইনের তার জোড়া লাগানোর কাজে যায় পারভেজ।

লাইনে কোনো বিদ্যুৎ সংযোগ নেই বলে রাব্বানী ও সেখানের বিদ্যুতের কর্মকর্তারা তাকে নিশ্চয়তা প্রদান করার পর সে ওই ছিঁড়ে যাওয়া তার জোড়া লাগাতে খুঁটি বেয়ে ওঠে।

কিন্তু তখন লাইনে ১১ হাজার ভোল্টের বিদ্যুৎ থাকায় একটি তার ধরার সাথে সাথে তাকে অন্যতারের ওপর ছিটকে ফেলে দেয়। সেখানে তারের ওপরই কিছুক্ষণ তাঁর শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে যাওয়ার পর প্রায় ২০ ফুট ওপর থেকে নিচে পড়ে যায়। তার মাথায়, বুকে, পায়ে ও শরীরের বিভিন্ন অংশে গুরুতর আঘাত লাগে।

পারভেজ মাটিতে পড়ার সাথে সাথে স্থানীয়রা তাকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। সেখানকার চিকিৎসকরা অবস্থা খারাপ দেখে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠায়। পারভেজ বর্তমাতে ঢামেকের ২০১ নম্বর ওয়ার্ডের ২১৬ নম্বর বেডে চিকিৎসাসাধীন। তার শরীরের প্রায় ৬০ শতাংশ পুড়ে গেছে।

ঘটনাটি ঘটে গত ৭ মে মঙ্গলবার সকাল ১১টায় বলইবুনিয়া গ্রামে। পারভেজ ডৌয়াতলা ইউনিয়নের পাকাপোল এলকার জামাল আকন ও রিনা বেগমের একমাত্র ছেলে।

এ ব্যাপারে পারভেজ এর মা রিনা বেগম বলেন, আমার একমাত্র ছেলে পারভেজ কারেন্টের কাজ ভালো করে বলে সবাই ওকে দিয়া কাজ করায়। এতে অনেকের হিংসা জন্মেছে। এরাই আমার বাপধনরে খাম্বায় উঠাইয়া পুড়াইয়া মারতে চাইছে।

আপনারা আমার একমাত্র সন্তানরে বাঁচান। পল্লী বিদ্যুতের লোকেরা কেউ কোনো খোঁজ নেয়না। মোর পোলাডা আছে না মরছে কোনো খবর নাই। আপনারা মোর পোলাডারে বাঁচান। টাকার অভাবে মোর পোলাডারে এহন চিকিৎসাও করাইতে পারি না। বিদ্যুতের কেউ কোনো খোঁজ নেয় না।

বর্তমানে পারভেজ এর সাথে থাকা মামা লিটন হাওলাদার জানান, রামনা ইউনিয়নের পল্লী বিদ্যুতের ডিলার রাব্বানী ও বামনা উপজেলার পল্লী বিদ্যুতের ইনচার্জ ইচ্ছা করে ওকে বিদ্যুৎ থাকা অবস্থায় খুঁটিতে উঠিয়েছেন। তারা জানত তারে বিদ্যুৎ আছে। তার ভাগিনাকে তারা কোনো রকম চিকিৎসা সহায়তা না দিয়ে ডিলার রাব্বানী ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ থেকে পালিয়ে যায়।

পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ এর কোনো কর্তাব্যক্তিরা অদ্যবধি তাদের চিকিৎসার কোনো খোঁজ খবর নেয়নি। টাকার অভাবে পারভেজের এখন চিকিৎসা প্রায় বন্ধ হওয়ার উপক্রম। তিনি সমাজের বিত্তবানদের কাছে পারভেজের সাহায্য চেয়ে আবেদন জানিয়েছেন। পারভেজ কে সাহায্য পাঠানোর বিকাশ নম্বর ০১৭১০০৬৮৬৮ ও ০১৭১৪৪৪৫৩৬৫ পার্সোনাল।

পল্লী বিদ্যুতের অনুমোদিত বিদ্যুৎকর্মী মো. রাব্বানী বলেন, পারভেজকে আমি কোনো কাজে রাখিনি। ও কার আদেশে খুঁটিতে উঠেছে আমি জানি না। তবে আমি ওর দুর্ঘটনার কথা শুনে ওকে নিয়ে বরিশাল ও পরে ঢাকা যাই। ঢাকায় আমার সাথে ওর পরিবার খারাপ ব্যবহার করায় আমি চলে আসি।

পল্লী বিদ্যুৎ বামনা উপজেলা ইনচার্জ শফিকুর রহমান জানান, পারভেজ আমাদের কোনো নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মচারী নয়। জনবল সংকটের কারণে তাকে মাঝে মাঝে আমরা বিভিন্ন কাজে লাগাই। তবে ঘটনার দিন তাকে আমরা কেউ খুঁটিতে উঠতে বলিনি। সে আমাদের কারো কাছে কিছু না বলেই খুঁটিতে উঠে তার জোড়া লাগাতে যায়।

আমি ঘটনা শুনে তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে গেলে তাকে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে চিকিৎসার জন্য পাঠাই। এর আগে যার বাসার সামনে (ফজলুল হক) সে কাজ করছিল সেই ব্যক্তি তাকে নিশ্চিত করে বলেন যে লাইনে বিদ্যুৎ আছে। অথচ সে কথা শোনেনি। যাই হোক, সে ফিরে আসলেই জানা যাবে প্রকৃত ঘটনা।

মঠবাড়িয়া পল্লী বিদ্যুতের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. জুলফিকার রহমান বলেন, আমি ঘটনাটি শুনেছি। পারভেজকে চিকিৎসার জন্য বামনার ইনচার্জ প্রাথমিক সহায়তা করেছেন। সে আমাদের নিয়োগপ্রাপ্ত না হলেও মানবিক কারণে তাকে দিয়ে কাজ করানো হতো।

আমরা তার চিকিৎসার খোঁজ খবর নেব এবং পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি তার পরিবারকে চিকিৎসার জন্য সহায়তা করবে। পিরোজপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজার প্রকৌশলী মো. মফিজুর রহমান বলেন, এ বিষয়ে এখন পর্যন্ত কেউ তাকে অবহিত করেনি।

শেয়ার করুন: