একে একে পাঁচ বিয়ে, ৬ষ্ঠ বিয়ে করতে না পেরে বিয়েপাগল নিজামের কান্ড!

প্রথম স্ত্রী থেকে তৃতীয় স্ত্রীর সঙ্গে এখন সম্পর্ক নেই। থাকেন চতুর্থ ও পঞ্চম স্ত্রীর সঙ্গে। সম্প্রতি আবারও বিয়ে করার অনুমতি চান বর্তমান দুই স্ত্রীর কাছে। পঞ্চম স্ত্রীর অনুমতিও পান তিনি। কিন্তু বাধ সাধেন চতুর্থ স্ত্রী।

আর ষষ্ঠ বিয়েতে অনুমতি না দেওয়ায় চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা আক্তারকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেছেন নিজাম মাতুব্বর নামের এক গরু ব্যবসায়ী। এ ঘটনা বরগুনার আমতলী উপজেলার কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামের।

জানা গেছে, আমতলীর কুকুয়া ইউনিয়নের পূর্ব চুনাখালী গ্রামের লেদু মাতুব্বরের ছেলে নিজাম মাতুব্বর পেশায় গরু ব্যবসায়ী। ১৯৯৫ সালে তিনি জাহানারা বেগমকে প্রথম বিয়ে করেন। প্রথম স্ত্রীর ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। তাদের রেখেই নিজাম প্রথম স্ত্রীকে তালাক দেন। এরপর খাদিজা নামের একজনকে দ্বিতীয় বিয়ে করেন।

দ্বিতীয় ঘরে তিনটি পুত্র সন্তান রেখে তাকে তাড়িয়ে দেন। এরপর মারুফা বেগমকে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন। সেই তৃতীয় স্ত্রীকে আগুনে পুড়িয়ে মেরে ফেলার চেষ্টার অভিযোগ ওঠে নিজাম মাতুব্বরের বিরুদ্ধে। তার ছেলে রিয়ন এই অভিযোগ করেন। পরে তৃতীয় স্ত্রীকেও তাড়িয়ে দেন নিজাম মাতুব্বর।

২০০৭ সালে নাসিমা বেগমকে চতুর্থ স্ত্রী হিসেবে বিয়ে করেন নিজাম মাতুব্বর। নাসিমার ঘরে জন্ম নেয় এক কন্যা সন্তান। এ বছর জানুয়ারিতে চতুর্থ স্ত্রী নাসিমাকে না জানিয়ে পঞ্চম স্ত্রী হিসেবে একই এলাকার ১৩ বছরের নিলা নামের এক মেয়েকে গোপনে বিয়ে করেন তিনি। বর্তমানে ষষ্ঠ বিয়ের জন্য চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা ও পঞ্চম স্ত্রী নিলার সম্মতি চান ওই ব্যবসায়ী। পঞ্চম স্ত্রী নিলা সম্মতি দিলেও চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা ষষ্ঠ বিয়েতে সম্মতি দেয়নি।

চতুর্থ স্ত্রী নাসিমা স্বামীর ষষ্ঠ বিয়েতে বাধা দেওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে নিজাম মাতুব্বর গত ৬ মে ঘরে আটকে রেখে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করেন। ধারালো অস্ত্রের আঘাতে নাসিমার বাহু, কোমর, পিঠ ও রানে গুরুতর জখম হয়। এ ছাড়া নাসিমার স্পর্শকাতর স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে নাসিমাকে ওইদিন আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। গত ছয়দিন ধরে নাসিমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।

নাসিমার বাবা সফেজ খলিফা অন্ধ। মা চলাফেরা করতে পারেন না। অর্থের অভাবে নাসিমার চিকিৎসা হচ্ছে না। গতকাল শনিবার রাতে নাসিমা বেগম বাদী হয়ে নিজাম মাতুব্বরকে প্রধান আসামি করে চারজনের নামে আমতলী থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

রোববার আমতলী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ঘুরে দেখা গেছে, নাসিমা শরীরের যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছেন। তার শরীরে বিভিন্ন স্থানে সেলাই করা হয়েছে। নাসিমা শরীরের যন্ত্রণায় চলাফেরা করতে পারছেন না।

নিজাম মাতুব্বরের প্রথম স্ত্রীর ছেলে রিয়ন বলেন, বাবা এ পর্যন্ত পাঁচটি বিয়ে করেছে। আবার ষষ্ঠ বিয়ে করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছেন। তার ষষ্ঠ বিয়েতে আমি বাধা দেওয়ায় আমাকে পিটিয়ে হাত ভেঙে দিয়েছে। বাবার এসব কাজের জন্য আমরা সমাজে মুখ দেখাতে পারি না।

একাধিক বিয়ে ও স্ত্রী নাসিমাকে মারধরের কথা স্বীকার করে গরু ব্যবসায়ী নিজাম মাতুব্বর বলেন, আমার ছেলে ও স্ত্রী আমাকে নির্যাতন করে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিতে চায়।

আমতলী থানার ওসি মো. আবুল বাশার বলেন, নিজাম মাতুব্বর একের পর এক বিয়ে করছে। আবার বিয়ে করতে বাধা দেয়ায় চতুর্থ স্ত্রীকে মারধর করেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

শেয়ার করুন: