স্বপ্ন থেকে বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করা বাবার করুণ কাহিনি

রাজধানীর সুপারশপ স্বপ্ন থেকে নিজের শিশু সন্তানের জন্য দুধ চুরি করতে গিয়ে আলোচনায় আসা সেই বাবার করুণ কাহিনি জানা গেছে। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের খিলগাঁও জোনের সহকারী কমিশনার জাহিদুল ইসলাম সোহাগ বলেন, সামাজিক কারণে আমরা ওই যুবকের নাম, বর্তমান ঠিকানা, স্থায়ী ঠিকানা কিছুই প্রকাশ করছি না। তবে কেউ চ্যালেঞ্জ করলে আমাদের কাছে এসে প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে যেতে পারেন।

তিনি বলেন, এইচএসসি পাস করে এক বুক স্বপ্ন নিয়ে ওই যুবক বিদেশে চাকরি করতে যান। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে তাকে সেই চাকরি হারাতে হয়। ফিরে আসতে হয় বাংলাদেশে।

জাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘বাংলাদেশে এসে রাজধানীর হোসাফ টাওয়ারে একটি মোবাইল সারাইয়ের দোকানে সে কাজ নেয়। কিন্তু তার কপাল খারাপ যে, ওই দোকানটি তাদের ঠিকানা পরিবর্তন করে। এতে সে চাকরি হারায়।’

এই পুলিশ কর্মকর্তা জানান, তিন মাস নয় ওই যুবক মূলত ছয় মাস বেকার রয়েছেন। তার একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে যার বয়স ১১ মাস। নিজে একবেলা-আধবেলা খেয়ে থাকলেও বাচ্চার কষ্ট মেনে নিতে পারছিলেন না।

তাই তিনি শুক্রবার রাতে স্বপ্ন সুপার শপ থেকে বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করতে যান বলে জানান জাহিদুল ইসলাম। রোববার ওই যুবককে স্বপ্ন সুপার শপে চাকরি দেওয়া হয় জানিয়ে তিনি বলেন, তবে চাকরির পদবি ও বেতন নির্ধারিত হবি সন্ধ্যায়।

এদিকে ওই যুবক রোববার নিয়োগপত্র গ্রহণের পর সাংবাদিকদের বলেন, তিনি ছয়-সাত মাস বেকার। কাজের জন্য বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেছেন, কিন্তু ইতিবাচক সাড়া কেউ দেয়নি। কেউ কেউ এমন বেতন দিতে চেয়েছেন যা গ্রহণযোগ্য নয়। তিনি স্বপ্ন এবং পুলিশ কর্মকর্তা জাহিদুলের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

জাহিদুল ইসলাম এর আগে এ ঘটনা ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়ে জানান, তিনি ফেসবুকে লেখেন- ‘গতকাল (শুক্রবার) রাত আনুমানিক ৮.৪৫ মিনিট, বাকি সড়কে চেকপোস্ট ডিউটি তদারকি করছিলাম। হঠাৎ এক জায়গায় মানুষের হট্টগোল দেখতে পেলাম। ঘটনা কি তা দেখার জন্য আমার এক সাব-ইন্সপেক্টরকে পাঠালাম।

কিছুক্ষণ পর বেশ কিছু লোক ২৫-৩০ বছর বয়সী একজন লোককে টেনে-হিচড়ে আমার সামনে নিয়ে আসলো। ঘটনা জানতে চাইলাম’।

”একজন বললো, “স্যার, লোকটা চোর, চুরি করে পালাচ্ছিল”। পাশে লোকটাকে শক্ত করে ধরে রাখা এক সিকিউরিটি গার্ড আমাকে বললো, “স্যার, লোকটা স্বপ্ন সুপার শপ থেকে চুরি করে পালাচ্ছিল”।”

”আমি জিজ্ঞেস করলাম, কি চুরি করেছে? সিকিউরিটি গার্ড বললো, “স্যার, সে এক প্যাকেট দুধ চুরি করে পালাচ্ছিল”। আমার খটকা লাগলো, আমি জিজ্ঞেস করলাম “দুধ”? তখন সিকিউরিটি গার্ড অতি উৎসাহ নিয়ে বলল, “স্যার বাচ্চাদের ন্যান দুধের প্যাকেট”।

আমি লোকটার দিকে তাকালাম। আমার বয়সেরই হবে। দেখতে ভদ্রলোকই মনে হলো। তাকে জিজ্ঞেস করলাম, চুরি করলেন কেন? সে কেঁদে ফেলল। তারপর বললো, “স্যার, তিনমাস হল চাকরি নাই, বেতন নাই। ঘরে ছোট বাচ্চা, দুধ কেনার টাকা নাই।”

‘সাথে সাথে আমার ছেলের চেহারা মনে পড়ল!! মনে হল কতটা নিরুপায় হলে একজন বাবা এই কাজ করতে পারে!! ওর জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই কাজ করতাম।

সিকিউরিটি গার্ডকে জিজ্ঞেস করলাম, দুধের প্যাকেটের দাম কত? সে বললো, ৩৯০ টাকা স্যার। আমি তাকে ৫০০ টাকা দিয়ে বিল রাখতে বললাম এবং লোকটিকে ছেড়ে দিতে বললাম।”

‘আজ আমাদের দেশের এক অসহায় বাবা তার বাচ্চার জন্য দুধ চুরি করে…কত মানুষ বেকারত্বের অভিশাপ ঘোচাতে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে… হয়ত আমি ভালো চাকুরী করে আজ ভাল আছি, কিন্তু সমাজের কত মানুষ আজ এই বাবার মত নিরূপায়!!! এর দায়ভার কার??!!’

শেয়ার করুন: