১৪ বছরেও হাসপাতালটি উদ্বোধনের সময় পাচ্ছেন না নেতারা

সুপ্রিমকোর্টের আইনজীবী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনালের প্রসিকিউটর ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন সামাজিক কাজের জন্য ব্যাপকভাবে প্রশংসিত একজন ব্যাক্তি। বিভিন্ন অসঙ্গতি ও জনদুর্ভোগের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুক লাইভ করে থাকেন।

এবং ইদানিং তার এ লাইভ বিষয়টি একটি নিরব আন্দোলনে রূপ নিয়েছে। যে কোনো বিষয়ে তার প্রতিবাদের পর খুব তাড়াতাড়ি সময়েই সে ব্যাপারে যথাযোগ্য পদক্ষেপ নিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এবার তিনি নিজ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এর অচল অবস্থা নিয়ে লাইভে এসেছেন।

হবিগঞ্জ জেলার চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বাইরের গেটে সাইনবোর্ড দেওয়া হয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, অথচ বাস্তবে ৩০ শয্যার সিটই নেই এখানে। ফলে রোগীরা সেবা গ্রহণ করে থাকেন মেঝেতে শুয়ে বা হাসপাতালের বারান্দায়।

অপরদিকে জনবল নিয়োগ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বরাদ্দ না দেওয়ায় সাড়ে ৩ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৫০ শয্যাবিশিষ্ট চুনারুঘাট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেটি নির্মাণকাজ সম্পন্নের ৭ বছর পরও চালু করা যায়নি। এর মধ্যে পুরাতন হাসপাতালে ডাক্তার সংকটসহ নানা সমস্যা তো রয়েছেই। এ অবস্থায় চুনারুঘাটের ৪ লাখ জনগোষ্ঠী চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।

এসব সমস্যা নিয়ে বেশ কয়েকবার গণমাধ্যমে প্রতিবেদন হলেও সমস্যার কোনো সুরাহা হয়নি তাই আজ শুক্রবার (১০মে) চুনারুঘাট উপজেলা স্বাস্থ্য কম্পপ্লেক্সের এসব সমস্যা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লাইভে এসে সমস্যাগুলো পূনরায় একবার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন।

তিনি তার স্বভাবজাত ভঙ্গিতে ফেসবুকে লাইভে এসে হাসপাতালটির করুণ দশা ঘুরে ঘুরে দেখিয়েছেন। দেখিয়েছেন পড়ে থাকা একটি জীর্ণশীর্ণ অ্যাম্বুলেন্সও। মানুষ যেখানে অ্যাম্বুলেন্সের অভাবে স্বাস্থ্যসেবা নিতে পারছে না সেখানে হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স পড়ে আছে অযত্নে অব্যহেলায়।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে চুনারুঘাটে ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণকাজ শুরু হয়। সাড়ে তিন কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হাসপাতালের কাজ সম্পন্ন হয় ২০০৯ সালের জুন মাসে। নির্মাণকাজ শেষ হলেও হাসপাতালটি চালুর ব্যাপারে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

মূল ভবন ছাড়াও সার্জন, ডাক্তার, নার্স ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য তৈরি করা হয় আরও তিনটি তিনতলা বিশিষ্ট ভবন। ভবন তৈরির পর হাসপাতালে প্রয়োজনীয় সার্জন, ডাক্তার, নার্সসহ কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়নি ৭ বছরেও। ফলে চালু করা যায়নি ৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটি। ফলে নতুন ভবনটি নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পুরাতন ভবনে রোগীরা সিট পাচ্ছে না। অথচ গেটের সাইনবোর্ডে ঠিকই লেখা রয়েছে ৫০ শয্যার হাসপাতাল।

এদিকে ৩১শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে ডাক্তার সংকট, কর্মকর্তা/কর্মচারী সংকট, দায়িত্বে অবহেলাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। ৯ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও আছেন মাত্র ৬ জন। অথচ চা বাগান, পাহাড়ি ও সীমান্ত এলাকা বেষ্টিত চুনারুঘাটের লোকজন চিকিৎসাসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতাল চালুর প্রস্তাব পাঠিয়েছেন বলে গণমাধ্যমে জানিয়েছিলেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. দেবাশীষ দেবনাথ।

তিনি তখন আরও জানান, বর্তমান হাসপাতালে সিট সংকটসহ নানা সমস্যার কথা জানিয়ে দ্রুত জনবল নিয়োগ ও যন্ত্রপাতি বরাদ্দ দিয়ে ৫০ শয্যার হাসপাতাল চালু করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে লিখিতভাবে আবেদন জানিয়েছেন। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে তা কার্যকর হচ্ছে না।

এদিকে ভবনগুলো চালু না হওয়ার কারণে দিন দিন নষ্ট হচ্ছে। এছাড়া তিনি দায়িত্ব নেয়ার ওটি চালুর ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিতভাবে জানিয়েছেন। কিন্তু কাজ হয়নি।

শেয়ার করুন: