শুধু ডেঙ্গু নয়, এ ছাড়াও মশার কামড়ে ভয়াবহ সব রোগের সৃষ্টি হতে পারে। বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেকেই। শিশু থেকে বয়স্ক, সবাই এখন ডেঙ্গু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। বর্ষাকাল হলো মশার প্রজননের জন্য শ্রেষ্ঠ সময়। তাই এ সময় মশার উপদ্রবও বাড়ে। মশার কামড়ে শুধু ডেঙ্গু নয় হতে পারে চিকনগুনিয়া, ম্যালেরিয়া-সহ নানা ভয়াবহ রোগ। তাই করোনাভাইরাসের মহামারির এ সময় মশাবাহিত রোগ থেকে দূরে থাকতে সবাইকে সচেতন ও সাবধান হতে হবে। জেনে নিন মশাবাহিত ভয়াবহ ৮টি রোগ-
লাইশম্যানিয়াসিস: গর্ভবতী নারী মশাদের কামড়ে এই রোগ ছড়ায়। ৩০ ধরনের ভিন্ন প্রজাতির লাইশম্যানিয়াসিস জীবাণু আছে। এর মধ্যে ১০টি মানবদেহে রোগ ছড়ায়। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর ও মাথা ব্যাথা দেখা দেয়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে স্কিন আলসার হয়ে ক্ষত সৃষ্টি হয়। এই রোগটি এতোই ভয়াবহ যে দ্রুত ডাক্তার না দেখালে যকৃত, বৃক্কসহ বিভিন্ন অভ্যন্তরীণ অঙ্গে তা ছড়িয়ে পড়তে পারে। চিকিৎসার অভাবে মশাবাহিত এ রোগ মৃত্যুও ডেকে আনতে পারে।
সিন্ডবিস: কুলেক্স নামের নিশাচর মশা এই রোগের ভাইরাস বহন করে। মূলত আফ্রিকায় পাওয়া গেলেও সম্প্রতি ইউরোপের বিভিন্ন স্থানে মানবশরীরে এই জীবাণুর অস্তিত্ব পেয়েছেন। এই মশার কামড়ে তীব্র জ্বর ও মস্তিষ্কে প্রদাহ দেখা দেয়। পুরো শরীরে এই রোগের জীবাণু ছড়িয়ে পড়লে বিভিন্ন হাড়ের সংযোগেও প্রদাহের সৃষ্টি হয়। কয়েক সপ্তাহ পর যদিও এ রোগ সেরে যায়। এখনও এ রোগের কোনো ওষুধ নেই।
ইয়েলো ফিভার: টাইগার মশা এবং এডিস প্রজাতির আরো কিছু মশার মাধ্যমে ইয়েলো ফিভার ছড়ায়। সাধারণভাবে একে ফ্লাভিবাইরাসও বলা হয়ে থাকে। আফ্রিকার ৩৪টি এবং দক্ষিণ ও মধ্য অ্যামেরিকার ১৩টি দেশে ইয়েলো ফিভারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। এ রোগের লক্ষণ হিসেবে শুরুতে জ্বর এলেও পরে তা বমি দেখা দেয়। একসময় মেনিনজাইটিসে রূপ নেয়। গুরুত্বপূর্ণ প্রত্যঙ্গ আক্রান্ত হওয়া, এমনকি সম্পূর্ণ নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায় এই রোগে।
ডেঙ্গু: বর্তমানে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। এডিস ইজিপ্টাই নামের মশার কামড়ে ডেঙ্গু রোগের সৃষ্টি হয়। এ রোগে আক্রান্ত হলে শরীরে ব্যাথা হয়, লাল গুটি দেখা দেয়, মাংসপেশী ও হাড়ের জোড়াতেও ব্যাথা হয়। চূড়ান্ত পর্যায়ে গেলে রক্তক্ষরণের ফলে এ রোগে মৃত্যুও হতে পারে। প্রথমবারের ধাক্কা সামলে উঠলেই যে মুক্তি তা কিন্তু নয়। ডেঙ্গু রোগে কেউ দ্বিতীয়বার আক্রান্ত হলে তা প্রথমবারের চেয়েও মারাত্মক হতে পারে৷।
জিকা: এডিস ইজিপ্টাই, টাইগার মস্কিউটো এবং এডিস আলবোপিকটাস জিকা ভাইরাস ছড়ায়। ২০১৫ সালে মহামারি আকারে ছড়িয়ে পড়ে এই রোগ। জিকার আক্রমণে ব্রাজিলে অসংখ্য শিশু ক্ষতিগ্রস্ক হয়। মাইক্রোসিফেলি নামের ভয়াবহ প্রতিবন্ধিত্ব নিয়ে জন্মায় তারা। এর ফলে শিশুদের মাথার আকৃতি বিকৃত হয়ে যায়। বিশেষ করে গর্ভবতী মায়েরা জিকায় আক্রান্ত হলে শিশুদের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে বেশি।
ওয়েস্ট নাইল ফিভার: বয়স্ক বা দুর্বল রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতার মানুষের শরীরে এই রোগ ভয়াবহ ক্ষতি করে। এর ফলে মেনিনজাইটিস ও মায়োকার্ডিটিস হতে পারে। অন্যান্য মশাবাহী রোগের মতো কাঁপুনি, ঠান্ডা লাগা, জ্বর, মাথা ব্যাথা, ঝিমুনি এবং ব়্যাশ দেখা দিতে পারে। এর কোনো ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি।
চিকুনগুনিয়া: কয়েক বছর আগেও চিকুনগুনিয়া রোগটি দেশে মারাত্মকভাবে ছড়িয়ে পড়েছিল। এ রোগের প্রভাবে জ্বর কাটিয়ে উঠতে তিন-চার দিন লাগে। তবে এরপর হাড়ের জোড়ায় ভয়াবহ ব্যথা কয়েক সপ্তাহ স্থায়ী হতে পারে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে চামড়ায় ক্ষত দেখা দিতে পারে। তবে আশার কথা, একবার চিকুনগুনিয়া হয়ে গেলে দ্বিতীয়বার এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই কমে যায়।
ম্যালেরিয়া: মশাবাহী রোগের মধ্যে ম্যালেরিয়া সবচেয়ে বেশি পরিচিত। খুবই মারাত্মক এই রোগটি। অ্যানোফিলিস নামের মশার মাধ্যমে এই রোগ ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্ত হলে স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি হতে পারে। ম্যালেরিয়ার কার্যকর ওষুধ এখনো আবিষ্কার হয়নি। তবে আগে থেকে সতর্ক থাকলে এতে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা কমানো যেতে পারে।