বিএনপিকে নিয়ে ড. কামালের ‘রাজচালাকি’ সফল!

জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া বা জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মধ্যদিয়ে দেশের অন্যতম প্রধান বিরোধী দল বিএনপিকে নিয়ে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন ‘রাজচালাকি’ করেছেন। বিএনপিকে নিয়ে তার সব উদ্দেশ্য সফল হয়েছে। সরকারি রোষানল, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার জেল, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অগ্রহণযোগ্যতা, নেতাদের অবিশ্বস্ততাসহ নানা কারণে বর্তমানে চরম বিপর্যয় পার করছে একাধিকবার রাষ্ট্রক্ষমতায় আসীন হওয়া বিএনপি।

বিপর্যস্ত বিএনপি ড. কামাল হোসেনের উদ্দেশ্য বা কৌশলের কাছে সম্পূর্ণভাবে ধরাশায়ী হয়েছে। গণফোরামের ৪ জন নেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব তথ্য জানা যায়। নাম না প্রকাশের শর্তে ওই ৪ নেতা দৈনিক জাগরণকে বলেন, ড. কামাল হোসেন সুদূরপ্রসারী উদ্দেশ্য নিয়ে বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণে তার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা সফল করেছেন।

গণফোরাম সূত্রে জানা যায়, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘনিষ্ঠ সহযোগী সাবেক আওয়ামী লীগার ড. কামাল হোসেন বিএনপির বিপর্যয়ের সুযোগকে কাজে লাগিয়েছেন।

বিগত জাতীয় নির্বাচনের আগে সরকারের শীর্ষ মহলের সঙ্গে সংলাপ প্রক্রিয়ার যে উদ্যোগ ড. কামাল হোসেন নিয়েছিলেন, তা ছিল লোক দেখানো। একইসঙ্গে সরকারের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী। তিনি বিএনপিকে যেকোনোভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণের ‘মিশন’ নিয়ে মাঠে নেমেছিলেন। তার সেই মিশন শতভাগ সফলও হয়েছে।

সূত্র জানায়, সংলাপে অংশ নেয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার (প্রধানমন্ত্রী) নেতৃত্বে আস্থা রেখে সকলের অংশগ্রহণে দেশে একটি নির্বাচনের বিষয়ে ড. কামাল হোসেনের কাছে সহযোগিতা চান।

কামাল হোসেন প্রধানমন্ত্রীকে সব দলের অংশগ্রহণে একটি নির্বাচনে তার পক্ষ থেকে সকল প্রকার সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। যে কারণে তিনি নির্বাচনকালীন বেশিরভাগ সময়ে প্রায় নিশ্চুপ থাকেন।

পরে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট টিকিয়ে রাখার স্বার্থে মাঝে মাঝে কিছু সরকারবিরোধী কড়া কথা বলেন। আর বিএনপিও দলীয় চেয়ারপারসনের অবর্তমানে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে দিকভ্রান্ত অবস্থায় ড. কামাল হোসেনের ইশারায় সকল সিদ্ধান্ত নিতে থাকে।

মূলত, গণফোরাম করলেও গত নির্বাচনে ড. কামাল হোসেন ক্ষমতাসীন দলের স্বার্থরক্ষা করেছেন। বলা যায়, বিএনপির মতো বৃহৎ একটি রাজনৈতিক দল ড. কামাল হোসেনের রাজনৈতিক কৌশলের নাগাল ধরতে ব্যর্থ হয়েছে।

গণফোরামের এক নেতা দৈনিক জাগরণকে জানান, বিএনপিকে ঘিরে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের স্বপ্ন কাজ করে। তার মতে, দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল বিএনপি বর্তমানে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় আছে।

নানা কারণে আগামীতে দলটি আরও দুর্বল হয়ে পড়ার সম্ভাবনা আছে। সেসময় আওয়ামী লীগ বিরোধী প্লাটফর্ম হিসেবে গণফোরাম আরও শক্তিশালী হবে। বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদেরও গণফোরামে যোগ দেয়ার সম্ভাবনা দেখা দেবে।

এসব নেতারা গণফোরামে যোগ দিলে তাদের অনুসারীরাও গণফোরামের সঙ্গে থাকবে। তাই গণফোরামকে আরও শক্তিশালী করতে ও গণফোরামের রাজনীতিতে আরও সক্রিয় হতে দলের বিভিন্ন মিটিংয়ে ড. কামাল হোসেন নেতাদের বারবার তাগিদ দিয়ে থাকেন।

গণফোরামের ওই নেতা বলেন, একাদশ জাতীয় নির্বাচনে কী ঘটেছে তা দেশবাসী খুব ভাল করেই জানে। নির্বাচনের আগের রাতে ভোট গ্রহণ মোটামুটি শেষ করা হলেও, এ প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বা ফ্রন্টের প্রধান হিসেবে ড. কামাল হোসেনের যে ভূমিকা নেয়া উচিত ছিল তা তিনি নেননি।

এছাড়া, নির্বাচনের দিন সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যিনি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র তিনি ঠাকুরগাঁওয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশ্যে বললেন, এখন পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে আমরা সন্তুষ্ট।

এটা চরম বোকামি। নির্বাচনের আগের রাতে কী ঘটেছে তা সারা দেশবাসী জানলেও তিনি কীভাবে বা কেন এ ধরনের বক্তব্য গণমাধ্যমে রাখলেন, তা একটা রহস্যও বটে ! হয়ত মির্জা ফখরুল কৌশলের কাছে ধরাশায়ী হয়েছেন !

গণফোরামের এক নেতা জানান, নিজে সবসময় গণতন্ত্রের কথা বললেও দল পরিচালনায় ড. কামাল হোসেন কখনও ভিন্নমত পছন্দ করেন না। দল চালান তিনি একক সিদ্ধান্তে। উদাহরণ হিসেবে তিনি গত ৫ মে (রোববার) জাতীয় প্রেসক্লাবে দলের নতুন কমিটি ঘোষণার কথা উল্লেখ করেন।

সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেয়ায় বহিষ্কারের নোটিশ পাওয়া মোকাব্বির খানকে দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য করা নিয়ে গণমাধ্যমকর্মীরা বারবার প্রশ্ন করলেও তিনি কোনো উত্তর দেননি।

এছাড়া, ঘোষিত কমিটিতে দীর্ঘ প্রায় ২৮ বছর ধরে যারা গণফোরামের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত তাদের মূল্যায়ন না করে দলে সদ্য যোগ দেয়া নেতাদের শীর্ষ পদে আসীন করেছেন।

প্রবীণ নেতা ও দলের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করা মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে অবমূল্যায়ন করে নির্বাচনের ৮/১০ দিন আগে যোগ দেয়া রেজা কিবরিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করেছেন। প্রথম নির্বাহী সভাপতি করেছেন অধ্যাপক আবু সাঈদকে, যিনি নির্বাচনের মনোনয়নের ঠিক একদিন আগে গণফোরামে যোগ দিয়েছেন।

গণফোরামের বিগত কমিটির প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক রফিকুল ইসলাম পথিক এসব বিষয়ে বলেন, ড. কামাল হোসেন রাজনীতিতে দ্বৈত চরিত্রের মানুষ। তিনি মুখে বলেন এক কথা, করেন আরেক।

তিনি কোনো কথা বা বিষয় কখনও পরিষ্কার করেন না। দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়িত রাজনীতির বিরুদ্ধে সুস্থধারার রাজনীতির কথা বললেও তিনি সেই অবস্থান থেকে সরে এসেছেন।

তাছাড়া, সম্পূর্ণ বিপরীত আদর্শের রাজনৈতিক দল বিএনপিকে সঙ্গে নিয়ে তার যে রাজনীতি তাতে অবশ্যই তার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থাকাটাই সমীচিন। এর বেশি বলাটা শোভন হবে বলে আমি মনে করি না।

-দৈনিক জাগরণ

শেয়ার করুন: