এসএসসির ফল পুনঃনিরীক্ষা করবেন যেভাবে

এসএসসির ফল প্রকাশ করা হয়েছে। সোমবার (৬ মে) সকাল সাড়ে ১১টায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলন করে মাধ্যমিকের ফল ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে না থাকায় আনুষ্ঠানিকভাবে ফলাফল প্রকাশ করেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

ঘোষিত ফলে দেখা গেছে, গত বছরের তুলনায় এবার পাসের হার বেড়েছে, তবে জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় দশ বোর্ডে গড় পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছর গড় পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। এবার পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ।

মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল এক লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। এবার জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৫ হাজার ৩৫ জন।

এবার আটটি সাধারণ বোর্ডে ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৮৩ দশমিক ০৩ শতাংশ এবং কারিগরি শিক্ষা ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে।

ফলের পরিসংখ্যান থেকে জানা গেছে, রাজশাহী বোর্ডে পাসের হার ৯১ দশমিক ৬৪ শতাংশ। এ বোর্ডে গত বছর পাসের হার ছিল ৮৬ দশমিক ০৭ শতাংশ। ৭০ দশমিক ৮৩ শতাংশ পাসের হার নিয়ে সবার নিচে অবস্থান করছে সিলেট বোর্ড।

আট বোর্ডের মধ্যে এবার ঢাকায় পাসের হার ৭৯ দশমিক ৬২, কুমিল্লায় ৮৭ দশমিক ১৬, বরিশালে ৭৭ দশমিক ৪১, যশোর বোর্ডে ৯০ দশমিক ৮৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭৮ দশমিক ১১ ও দিনাজপুর বোর্ডে ৮৪ দশমিক ১০ শতাংশ।

জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এবারও যথারীতি সেরা ঢাকা বোর্ড। এ বোর্ডে ২৯ হাজার ৬৮৭ জন শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। গত বছর ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৪১ হাজার ৫৮৫ জন।

এছাড়া রাজশাহী বোর্ডে ২২ হাজার ৭৯৫, কুমিল্লা বোর্ডে ৮ হাজার ৭৬৪, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৯৪৮, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৭ হাজার ৩৯৩, বরিশাল বোর্ডে ৪ হাজার ১৮৯, সিলেট বোর্ডে ২ হাজার ৭৫৭ ও দিনাজপুর বোর্ডে ৯ হাজার ২৩ জন পরীক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে।

প্রাপ্ত ফলাফলে ছাত্রদের চেয়ে ছাত্রীদের পাসের হার বেশি। ছাত্রদের তুলনায় ১.৫৩% ছাত্রী বেশি পাস করেছে।

এবারের পরীক্ষায় যাদের ফল প্রত্যাশিত হয়নি, তারা চাইলে পুনঃনিরীক্ষা করাতে পারবেন

পুনঃনিরীক্ষা জন্য আগামী ৭-১৩ মে পর্যন্ত এ পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। টেলিটক সংযোগ থেকে RSC <স্পেস> বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর <স্পেস> রোল নম্বর <স্পেস> বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করা যাবে।

একই এসএমএসে একাধিক বিষয়ের জন্য আবেদন করা যাবে, এ ক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে ‘কমা’ দিয়ে লিখতে হবে।

ফিরতি এসএমএসে ফি বাবদ কত টাকা কেটে নেয়া হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর (পার্সোনাল আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) দেয়া হবে।

আবেদনে সম্মত থাকলে RSC <স্পেস> YES <স্পেস> পিন নম্বর <স্পেস> যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে।

প্রতিটি বিষয় ও প্রতি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা হারে চার্জ কাটা হবে। যেসব বিষয়ের দুটি পত্র (প্রথম ও দ্বিতীয় পত্র) রয়েছে, সেসব বিষয়ের ফল পুনঃনিরীক্ষার আবেদন করলে মোট ২৫০ টাকা ফি কাটা হবে।

আজ সকালে শিক্ষামন্ত্রীর হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে ধরেন বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা।

সাধারণত প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন বোর্ড চেয়ারম্যানরা। পরে সচিবালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে শিক্ষামন্ত্রী ফলাফলের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে চোখের চিকিৎসায় অবস্থান করায় এবার বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা শিক্ষামন্ত্রীর কাছে ফল হস্তান্তর করেন।

ফলাফল প্রকাশ উপলক্ষে লন্ডন থেকে পাঠানো প্রধানমন্ত্রীর বাণী পড়ে শোনান শিক্ষামন্ত্রী। পরে প্রধানমন্ত্রী মোবাইল ফোনে শুভেচ্ছা জানিয়ে কথা বলেন। তা মাইকে শোনানো হয়।

ফলাফল জানবেন যেভাবে

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল মোবাইলে এসএমএসের মাধ্যমে পাওয়া যাবে। এ জন্য SSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে আবার স্পেস দিয়ে পাসের বছর লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে।

আর মাদরাসা বোর্ডের ক্ষেত্রে Dakhil লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে আবার স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পাসের সাল লিখে পাঠাতে হবে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।

এছাড়া কারিগরি বোর্ডের এসএসসি ভোকেশনাল পরীক্ষার ফল জানতে ssc লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে পাসের সাল লিখে পাঠাতে হবে ১৬২২২ নম্বরে।

এছাড়াও www.educationboardresults.gov.bd ওয়েবসাইটে গিয়ে ফল ডাউনলোড করা যাবে।

প্রসঙ্গত, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ২১ লাখ ৩৫ হাজার ৩৩৩ শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬৪ হাজার ৮৯২ ছাত্রী এবং ১০ লাখ ৭০ হাজার ৪৪১ ছাত্র।

এসএসসিতে সাধারণ শিক্ষা বোর্ডগুলোর তত্ত্বীয় পরীক্ষা ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৬ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ৫ মার্চ শেষ হবে।

মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডের তত্ত্বীয় পরীক্ষা ২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে ২৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হয় এবং ব্যবহারিক পরীক্ষা ২৮ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়ে শেষ হয় ৬ মার্চ।

শেয়ার করুন: