গ্রাম দেশে প্রবাদ আছে, `ডিম পাড়ে হাসে, খায় বাঘডাসে’ । কথাটি খেটে যায় দেশের রাজনীতিতে। এনালগ বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরে এগিয়ে আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আর এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন তার ছেলে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য-প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়। ইন্টারনেটেরে দাম আরও কমছে না কেন , অন্য দেশের তুলনায় দাম বেশি, ফোরজি চালু হলেও গতি বাড়ছে না, অনেক অভিযোগই তোলা যায়, কিন্তু শুধু শ্লোগানই নয়, দেশ যে তথ্য প্রযুক্তিতে অনেকটাই এগিয়েছে তা নিয়ে বিতর্ক কম।
কিন্তু সেই ডিজিটাল বাংলাদেশেই সুযোগ করে দিল বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানকে। দুর্নীতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে দলীয় প্রধান বেগম খালেদা জিয়া কারাগারে থাকায় স্কাইপিতে দলীয় মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন ২১ আগস্ট মামলাসহ আরও মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত তারেক রহমান। এ কথাতো ঠিক যে দলের মনোনয়ন প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার কে নিবেন সেটা একান্তই বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্ত। দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হয়তো সঠিকই বলেছেন। কিন্তু তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার নেওয়ার আইনগত ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।
এ ব্যাপারে তিনি নির্বাচন কমিশনের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। একাধিক মামলায় সাজা পাওয়ার আগেই ২০০৮ সাল থেকে লন্ডনে অবস্থান করছে তারেক রহমান। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ই বিদেশ চলে যান তারেক রহমান। তারপর একাধিক মামলায় আদালত তাঁকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেয়। সর্বশেষ ২১ আগস্টের গ্রেনেড মামলায় তার যাবজ্জীবন হয়। পুলিশের খাতায় তিনি পলাতক ও দণ্ডিত আসামি।
আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের তারেক রহমান সম্পর্কে যে প্রশ্ন তুলেছেন তার জবাবও আমরা তাৎক্ষণিক পেলাম নির্বাচন কমিশনের কাছ থেকে। আওয়ামী লীগ কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করেনি। নির্বাচন কমিশন তাই গণমাধ্যমেই ওবায়দুল কাদেরের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন । নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম তার তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন ‘সাজা পাওয়া আসামিদের জেল থেকে নির্বাচন সংক্রান্ত বিষয়ে প্রার্থীদের নির্দেশনা দেওয়ার সুযোগ নাই। কিন্তু তারেক রহমান যেহেতু দেশের বাইরে সেক্ষেত্রে এ নিয়ে তথ্যপ্রমাণসহ কেউ অভিযোগ করলে তা খতিয়ে দেখবে কমিশন।
প্রশ্ন ওঠে আওয়ামী লীগের তরফ থেকে নির্বাচন কমিশনে কোনো আনুষ্ঠানিক অভিযোগ করা হবে কি না? আরও একটি প্রশ্ন ওঠে নির্বাচনী আচরণবিধি এবং নির্বাচন সংক্রান্ত অপর কোনো অপরাধ যদি কেউ নির্বাচন কমিশনের গোচরে না আনেন, তাহলে কি নির্বাচন কমিশন নিজে থেকে কোনো উদ্যোগ নিবে না? এটা কিন্তু ভোট গ্রহণের দিন বা তার আগে পরের ব্যাপারেও প্রযোজ্য । অনেক সময় আচরণবিধি লঙ্ঘনসহ নির্বাচনী প্রক্রিয়ার নানা অনিয়ম তুলে ধরে দেশের গণমাধ্যম। সেগুলো কি নির্বাচন কমিশন আমলে নিবে না?
সেটা দেখার অপেক্ষায় রইলাম আমরা। তবে এটা বলতে চাই যে বিএনপি সরকারের সময় (১৯৯১-১৯৯৬) বিনা খরচে সাবমেরিন কেবলের সঙ্গে বাংলাদেশ যুক্ত হওয়ার সুযোগ পেলেও ‘সব তথ্য বাইরে চলে যাবে’ এমন কথা বলে সেই সুযোগ কাজে লাগানো হয়নি। আওয়ামী লীগ সরকারের দেশ পরিচালনার নানা নীতি নিয়ে অনেক সমালোচনা হয়তো করাই যায়। কিন্তু এটাতো ঠিক যে, মোবাইল টেলিফোনের একচেটিয়া মনোপলি ভেঙে দিয়েছেন শেখ হাসিনার সরকারই।
এরপর ক্রমশই কমেছে মোবাইল ফোনে কথা বলার খরচ। তবে এখনো যা আছে তাও আর কমানো যায় কি না সেটাই বলতেই পারি। কিন্তু একথাও স্বীকার করতে হবে যে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট সহজ হওয়াতে এখন সাধারণ মানুষ ব্যাপকহারে তা ব্যবহার করতে পারছে। স্কাইপি, ফেসবুক লাইভ বা ভাইবার ও হোয়াটসআপে সবাই যে দূর-যোগাযোগে অনেক বেশি সুফল পাচ্ছে তা সবাই স্বীকার করবেন। আর এসবই সম্ভব হচ্ছে ইন্টারনেটের দাম হাতের নাগালে আসার জন্য।
আর সেই সুযোগই নিলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দলীয় নেতাদের কাছে মনোনয়নপ্রার্থীরা সাক্ষাত দিতে এসে যখন ভিডিও কলে তারা দলীয় প্রধানের বক্তব্য শুনেছেন, বা দু-একটি কথপোকথন হয়েছে,সেটা বিএনপির মাঠ পর্যায়ের নেতাদের উজ্জীবিত করেছে। এজন্য বলছি যে আওয়ামী লীগের ডিজিটাল বাংলাদেশের সুবিধা পেলেন তারেক রহমান। আসন্ন নির্বাচনেও আমরা ডিজিটাল প্রচারের নানাকিছু দেখতে পারছি। শুধু ডিজিটাল ইভিএম নিয়েই বিএনপির যত আপত্তি !
উল্লেখ্য, আজ সন্ধ্যায় আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য লে. কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল নির্বাচন কমিশনে (ইসি) যান। বিএনপির মানোনয়ন বোর্ডে তারেক জিয়ার অংশগ্রহণের বিষয়ে ইসিতে লিখিত অভিযোগ করেছে আওয়ামী লীগ। আর ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, মনোনয়ন বোর্ডে তারেক জিয়ার অংশগ্রহণ স্পষ্টতই নির্বাচনী আচারণবিধির লঙ্ঘন।