না, নির্বাচন আর পেছাবে না। বৃহস্পতিবার বিকেলে সাফ জানিয়ে দিয়েছেন নির্বাচন কমিশন সচিব হেলালুদ্দিন। আগের দিনই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা নির্বাচন কমিশনে গিয়ে দাবি জানিয়েছিলেন তফসিল সংশোধন করে নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার জন্য। কিন্তু নির্বাচন কমিশন সচিব বলেছেন ‘নির্বাচন পেছানোর আর কোনো সুযোগ নাই । কমিশনের বৈঠকে আলোচনা হয়েছে যে নির্বাচন পেছানোর কোনো যৌক্তিক কারণ নেই।’
আমরা ধরেই নিতে পারি যে তাহলে আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশে একাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। গতকাল আরেকটি বিষয়ও পরিষ্কার হয়েছে যে ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টভুক্ত সব কটি রাজনৈতিক দলই বিএনপির প্রতীক ‘ধানের শীষ’ নিয়ে নির্বাচনে অংশ নিবে। গতকালই লিখেছিলাম যে ৩০ ডিসেম্বরের ভোটে গণফোরাম সভাপতি ও ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন কি বিএনপির ধানের শীষ নাকি গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে প্রার্থী হবেন।
সত্য হচ্ছে, এখন পর্যন্ত এটাই পরিষ্কার নয় যে, ড. কামাল হোসেন প্রার্থী হবেন কি না, বা হলেও কোন আসনে তিনি লড়বেন তার পুরোনো প্রতীক নৌকার বিরুদ্ধে। জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বুধবার নির্বাচন কমিশনে গিয়ে তফসিল পুন:নির্ধারণের অনুরোধ জানিয়েছিলেন কমিশনকে। বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশনের সচিবের বক্তব্যে বোঝা গেলো এটা বিবেচনায় নিচ্ছে না কমিশন।
অবশ্য আওয়ামী লীগের পক্ষে এইচ টি ইমাম বুধবার কমিশনে গিয়ে নির্বাচন পেছানোর বিরোধিতা করে বলেছিলেন, ‘এক ঘণ্টা, এক দিনের জন্যও নির্বাচন পেছানো ঠিক হবে না।’ অবশ্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট বিদেশিদের বড়দিন পালনের যে কারণ দেখিয়ে নির্বাচন পেছানোর কথা বলেছিলেন সেটাও হালে পানি পায়নি। কারণ দেশবাসীর জানা যে, ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোটগ্রহণ হয়েছিল ২৯ ডিসেম্বর।
বলা যায়, দেশ এখন নির্বাচনের পথেই হাঁটছে। বুধবার বিএনপির নয়াপল্টনের কার্যালয়ের সামনের সংঘর্ষ ছাড়া মোটামুটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশেই চলছে রাজনৈতিক দলগুলোর মনোনয়ন প্রক্রিয়া। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনোনয়ন ফরম বিক্রি শেষে নিজেদের মনোনয়ন বোর্ডের বৈঠক করছেন। বিএনপি ও জাতীয় পার্টি গতকাল পর্যন্ত ফরম বিক্রি করেছে। বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বলে দিয়েছেন ‘কোনো ষড়যন্ত্রই নির্বাচন বানচাল করতে পারবে না।’ আমরাও চাই ঘোষিত তফসিলেই নির্বাচন হোক।
এটা ঠিক যে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠন এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে তাঁদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে ২০ দলীয় জোটের নেতাদের সংলাপ দেশে চট করেই একটি নির্বাচনী আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। হেমন্তের হাওয়ার সঙ্গে নির্বাচনী সুবাতাস দেশবাসীকে এই আভাষ কি দিচ্ছে যে আর ৪৫টি দিন বাংলাদেশ কাটিয়ে দিবে হাল্কা শীতে ভোটের গরম রাজনীতির স্বল্প উষ্ণতায় ।
প্রায় ১০ বছর পরে দেশবাসী আবারো একটি অংশগ্রহণমূলক প্রতিযোগিতাপূর্ণ নির্বাচন দেখতে চায় । এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে , দেশে মোটা দাগে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ দুটি ধারা। একটি আওয়ামী লীগ ধারা আর অপরটি আওয়ামী লীগ বিরোধীধারা। আর যখনই এই দুটি দল নির্বাচনে অংশ নেয় তখনি সেই নির্বাচন দেশবাসীর কাছে গ্রহণযোগ্য হয় ।
দেশে ১৯৯১ সালে সংসদীয় গণতন্ত্র পুন:প্রবর্তনের পর ১৯৯৬,২০০১ এবং ২০০৮ সালের নির্বাচন নিয়ে পরাজিত পক্ষ নানা অভিযোগ তুললেও তাতে দেশবাসীর তেমন সাড়া মেলেনি। এই সময়ের মধ্যে ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি এবং ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোট নিয়ে তাই প্রশ্ন উঠেছে। যদিও ১৫ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনে গঠিত সংসদ দেড় মাসের মাথায় অক্কা পেয়েছিল। আর ৫ জানুয়ারি ভোটে গঠিত সংসদ তার মেয়াদ পূরন করতে যাচ্ছে ।
আসলে আগামী ৩০ ডিসেম্বরের ভোট যুদ্ধও হবে নৌকা ও ধানের শীষের মধ্যেই। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশ স্বাধীন করার মুক্তিসংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী দল। ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ থেকেই তারা দুটি ( ১৯৮৮ ও ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারি ) ছাড়া সব কটি নির্বাচনে অংশ নিয়েছে । আর বিএনপি ১৯৭৯ সালের দ্বিতীয় জাতীয় সংসদ নির্বাচন থেকে ভোটে অংশ নিচ্ছে ।
তারা ১৯৮৬ , ১৯৮৮ ও ২০১৪ সালের নির্বাচনে অংশ নেয়নি। পরিসংখ্যান বলছে সর্বশেষ ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি প্রাপ্ত ভোটের মধ্যে প্রায় এক কোটি ভোটের পার্থক্য ছিল। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নৌকা প্রতিকে সর্বমোট ভোট পেয়েছিল ৩ কোটি ৩৬ লাখ ৩৪ হাজার ৬২৯। ২৩০ টি আসন পেয়েছিল ,আর মোট ভোটের শতকরা ৪৮.০৪ শতাংশ।
অন্যদিকে বিএনপির মোট ভোট ছিল ২ কোটি ২৭ লাখ ৫৭ হাজার ১০১। শতকরা ৩২.৫০ ভাগ ভোট পেয়ে আসন ছিল ৩০টি। আর ১৯৭৩ সালের প্রথমবার অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ১ কোটি ৩৭ লাখ ৯৩ হাজার ৭১৭ ভোট। আসন ছিল ২৯৩টি। তখন প্রধান বিরোধী দল জাসদ পেয়েছিল ১২ লাখ ২৯ হাজার ১১০ ভোট। আসন ১টি। তখন বিএনপির জন্ম হয়নি। ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মত জাতীয় সংসদ নির্বাচন করে বিএনপি পেয়েছিল ৭৯ লাখ ৩৪ হাজার ২৩৬ভোট। আসন ২০৭টি। ঐ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পেয়েছিল ৫২ লাখ ৬৯ হাজার ৭০৩ ভোট। আসন ছিল ৩৯টি। তখন অবশ্য দেশের জনসংখ্যা ও ভোটার দুইই কম ছিল।