নির্বাচন

ঘোষিত তফসিল বা পুন:তফসিল!

`সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি প্রতিযোগিতাপূর্ণ এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচন প্রত্যাশা করি । জাতীয় সংসদ নির্বাচন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় জনগণের মালিকানার অধিকার প্রয়োগের সুযোগ সৃষ্টি হয়। নতুন সরকার গঠনের ক্ষেত্র তৈরি হয়। এমন নির্বাচনে দেশের সবরাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণ করার জন্য আবারও আহ্বান জানাই।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনের এই আহ্বান মেনে ২৩ ডিসেম্বর অনুষ্ঠেয় জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সাড়া দেওয়ার অপেক্ষা শুরু।

প্রধান নির্বাচন কমিশনার যখন তফসিল ঘোষণা করছিল, তখন বিএনপির নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠক চলছিল। তারা এর আগেই তফসিল ঘোষণা পেছানোর দাবি জানিয়েছিলেন।

তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া বলেছেন, আলোচনা করে তাঁরা সিদ্ধান্ত জানাবেন। এর আগে এলডিপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব তফসিল ঘোষণাকে ‘একতরফা উস্কানিমূলক’ বলে অভিহিত করেছেন। রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়বে বলেই আশঙ্কা করেছেন তিনি। যদিও কিছু ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব রুহুল আমিন হাওলাদার। ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ।

বলা যায় এই তফসিল ঘোষণার মাধ্যমে দেশের রাজনীতির এক নতুন অধ্যায় শুরু হলো। বিএনপি ও ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এই তফসিলে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিবে কি না তা নিশ্চিত নয়। কারণ তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় জেএসডির প্রধান আ. স. ম. আবদুর রব প্রশ্ন তুলেছেন, ‘কার তফসিল , কিসের তফসিল, কার জন্য, কিসের ভোট?’

তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে বলেছেনে, ‘কে হুদা ,বেহুদা।’ সে একটা পক্ষ। সরকার একটা প্রতিহিংসার জায়গায় ঠেলে দিচ্ছে আমাদের।’ চট করেই সকল দল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ঘোষণা দিবে এটা এখনো বলা যাচ্ছে না।

ঐক্যফ্রন্টের প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেনের প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি তাৎক্ষণিকভাবে। তফসিল ঘোষণার পরপর তার পক্ষ থেকে জানানো হয় যে কামাল হোসেন কিছুটা অসুস্থ। বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর তাৎক্ষণিকভাবে জানিয়েছেন যে এটা কিছুটা একতরফা তফসিল, সকলের সঙ্গে বৈঠক করে আনুষ্ঠানিকভাবে তফসিল সম্পর্কে জানানো হবে।

শুক্রবার ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ আছে রাজশাহীতে। তবে এটা ঠিক সকালে হাসপাতাল থেকে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া আদালতে হাজিরার পর আবারও কারাগারে ফিরে গেছেন। বিএনপি যে চট করেই নির্বাচনে অংশ নিবে তা মনে হয়না। তবে প্রধান নির্বাচন কমিশন যেমন বলেছেন, ‘দেশব্যাপী সংসদ নির্বাচনের অনুকূল আবহ সৃষ্টি হয়েছে।’ আসলে কি তা? ঘোষিত তফসিলে নির্বাচন অনষ্ঠিত হতে হলে আরও অনেক কাঠখড় পোঁড়াতে হবে।

কারণ বিএনপিসহ জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যদি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করে, তাহলে একাদশ সংসদ নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আবারও প্রশ্ন উঠবে? যেটা এই ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতাসীন দলের জন্য সুখকর হবে না। আবার বিএনপির পক্ষে আরও একটি নির্বাচন বর্জন করে টিতে থাকা দুরুহ হবে। যেভাবে দেশে চিঠি দিয়ে সংলাপ করে একটি নির্বাচনীয় তফসিল ঘোষিত হলো,তাতে দেশবাসীর মধ্যে স্বস্তি আসবে না, যদি বিএনপি এই ভোটে অংশ না নেয়।

দেশে ৩৯টি নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের মধ্যে বেশিরভাগ ২৪টি দলই বর্তমান সরকারের অধীনেই নির্বাচন করতে চায়। পুরোপুরি বিরুদ্ধে ১০টি দল। নিবন্ধিত দলগুলোর মধ্যে বামপন্থী দল এখনো নির্দিষ্ট করে কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। দুটি দল আছে জোটের বাইরে। তবে নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত নয়, এমন অনেক দল রাজনীতির মাঠে আছে এবং তারা জোটবদ্ধ হয়ে ভোটে অংশ নিতে চাইবে।

যদি সত্যিই একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চায় নির্বাচন কমিশন, তাহলে তারা একটি সংলাপের আয়োজন করতে পারে। আর যদি নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য বিএনপি কিছু সময় চায় তাহলে তা দেওয়া যেতে পারে। কেন যেন মনে হচ্ছে সবকিছু ঠিক রেখে আজ ঘোষিত তফসিলে শেষ পর্যন্ত ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণ হবে কি না তা নিয়ে কিছু সংশয় থেকেই যাচ্ছে।

কারণ মনোনয়পত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১৯ নভেম্বর। ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণার পর মাত্র ১১দিনে দলগুলো মনোনয়ন ঠিক করে, ৩০০ প্রার্থী চূড়ান্ত করতে যথেষ্ট সময় পাচ্ছে কি না, সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। তাই বলা যায় যেহেতু ভোটগ্রহণের জন্য ৪৫ দিনের মত সময় দেওয়া হলে, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ দিনের আগে হাতে সময় থাকছে খুব কম। তাই যদি সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ প্রত্যাশা করে সবপক্ষ, তাই যদি কোনো দল বা জোট পুন:তফসিলের দাবি জানায় নির্বাচন কমিশন তা বিবেচনায় নিতে পারে। দেশবাসী ভোটের আগে কোনো রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং অতি অবশ্যই কোনো রাজনৈতিক সহিংসতা চায় না।

এবারের সংসদ নির্বাচনের আগে সবচেয়ে ইতিবাচক দিক হচ্ছে ক্ষমতাসীন প্রধানমন্ত্রী, যিনি নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধানও থাকবেন, তাঁর সঙ্গে দেশের অনেকগুলো রাজনৈতিক দল সংলাপ করেছে। তাই আমরা প্রত্যাশা করতে পারি যে সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে আরও সংলাপ হতে পারে, এমনকি তা তফসিল পরিবর্তনের জন্যও হলেও। যদিও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, ‘নির্বাচন নিয়ে ধোঁয়াশা কেটে গেছে, রিশিডিউলের প্রয়োজন নাই।‘ লেখকঃ সাংবাদিক

শেয়ার করুন: