শেখ হাসিনা
ফাইল ছবি: শেখ হাসিনা

শেখ হাসিনার কূটনীতি, সংলাপ ও ছোটলোকের গল্প

শক্তিশালী সোশ্যাল মিডিয়ার আর অনলাইন নিউজ পোর্টালের কল্যাণে তথ্য সন্ত্রাস, ষড়যন্ত্র ও মিথ্যা কথা আর গোপন থাকে না, তাই সত্যের জয় হয়, মিথ্যা কোণঠাসা হয়ে পড়ে, এটি বাংলাদেশের সংলাপ রাজনীতিতেও প্রমাণিত হলো; প্রমাণিত হলো শেখ হাসিনা এক ভিন্ন মাত্রার সফল কূটনীতিক এবং সৎ, দেশ অন্ত:প্রাণ প্রাজ্ঞ রাজনীতিক। প্রমাণিত হলো যে, অন্ধকার যত কালোই হউক না কেন আলোর কাছে তা টিকে থাকতে পারে না, স্বরূপ উন্মোচিত হয়।

প্রথমেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কূটনৈতিক সাফল্যের কিছু বিবরণ তুলে ধরি বিশ্ব মিডিয়া থেকে। বাংলাদেশে২০০৭-২০০৯ সালে ভারতের হাইকমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী।

হাইকমিশনার থাকাকালীন সময়ে পিনাক রঞ্জন বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি নিয়ে যথেষ্ট আগ্রহী ছিলেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি ও আসন্ন নির্বাচন নিয়ে ভারতের প্রভাবশালী মিডিয়া ‘সাউথ এশিয়ান মনিটর’ একটি দীর্ঘ প্রবন্ধে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে তীব্র বিষোদগার করেছিলেন পিনাক রঞ্জন। একই পত্রিকায় গত শনিবার তিনি বলছেন, ‘হাসিনা সম্প্রতি সৌদি আরবে সরকারি সফর থেকে ফিরেছেন।

সেখানে তিনি সৌদি নেতাদের সাথে বৈঠক করেছেন এবং কয়েকটি সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেছেন – যার মধ্যে সামরিক সহযোগিতার বিষয়টিও রয়েছে। হাসিনা ২৩টি দেশের সামরিক কন্টিনজেন্টের যৌথ প্যারেডেও উপস্থিত ছিলেন, যেখানে মুসলিম দেশগুলোর সামরিক জোটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হয়, যেটার উদ্যোক্তা হলো সৌদি আরব। সৌদি আরবে সরকারি সফরে দ্বিপাক্ষিক এজেন্ডা ছাড়াও সাধারণত মক্কায় ওমরাহ পালনের বিষয় যুক্ত থাকে।

সৌদি আরবে সরকারি সফর এবং বাদশাহ ও ক্রাউন প্রিন্সের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়গুলো সাধারণত ভোটারদের কাছে বিশেষ করে ধর্মপ্রাণ মানুষের জন্য ইতিবাচক ইঙ্গিত বহন করে। কিছু বাংলাদেশি ভোটার এ ধরনের সফরকে হাসিনা এবং তার নিজের ধার্মিকতার প্রতি সৌদি সমর্থন হিসেবে দেখে থাকে, যদিও অধিকাংশ ভোটারের কাছে এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর’। ‘হাসিনা সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকেও স্বীকৃতি পেয়েছে।

তার সরকার বাংলাদেশের জিডিপির প্রবৃদ্ধির হারকে ভারতের চেয়েও উপরে নিয়ে গেছে, বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় ভারতের চেয়ে তিনগুণ গতিতে বাড়ছে। বাংলাদেশ তাদের এই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে ধরে রাখতে পারলে তাদের মাথাপিছু আয় আগামী দুই দশকে ভারতকে ছাপিয়ে যাবে।

... সামাজিক সূচকে, বাংলাদেশ ভারতসহ বহু দেশের চেয়ে ভালো করছে। বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশনায় দেওয়া আন্তর্জাতিক সূচক অনুযায়ী এই অর্জন হয়েছে বাংলাদেশের’ বলে তিনি তাঁর লেখায় উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, ‘গত এক দশকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক দারুণ শক্তিশালী হয়েছে এবং অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ সত্বেও হাসিনা দক্ষতার সঙ্গে দেশের নীতি নিয়ন্ত্রণ করেছেন। ভারত নিশ্চিতভাবেই আরও পাঁচ বছর শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রীত্বে স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করবে’।

‘হাসিনা সরকার এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি) থেকেও স্বীকৃতি পেয়েছে’। এডিবি নিয়ন্ত্রণ করে জাপান সরকার, তাই পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তীর এই কথা অর্থ বুঝতে কারও বাকী থাকার কথা নয় যে, জাপান সরকার শেখ হাসিনার সরকারকে পছন্দ করে।

ডি ডব্লিউ এর খবরে বলা হয়েছে যে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও ঐক্যজোটের মধ্যে সংলাপকে স্বাগত জানিয়েছে জার্মানি৷ গত বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে নবনিযুক্ত জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফাহরেনহোলজ দেখা করে জানান, ‘‘সংলাপ একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ৷`` তিনি আশা করেন, ‘‘নির্বাচন অত্যন্ত ভালো হবে এবং সবাই সামনের দিকে এগিয়ে যাবে৷``

একটি জনপ্রিয় পোর্টালে খবর বেরিয়েছে যে, বিএনপিকে নির্বাচনে আনার জন্য এবং অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন নিশ্চিত করতে ড. কামাল হোসেনকে দায়িত্ব দিলেন কূটনীতিকরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগের আগে ড. কামাল হোসেনকে বলেন, ‘সংবিধানের আলোকে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে রেখেই একটা নির্বাচন করা যেতে পারে।

নির্বাচন কমিশন যেন শক্তিশালী হয়, নির্বাচন কমিশনের কর্তৃত্বে যেন নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সব প্রশাসন চলে আসে। সরকার যে অঙ্গীকার করেছে, সে অঙ্গীকারের ওপর আস্থা রেখেই সব বিরোধী দলের উচিত নির্বাচনে যাওয়া।’

শনিবার ড. কামাল হোসেনের সঙ্গে ভারতীয় বিদায়ী হাইকমিশনার হর্ষবর্ধন শ্রিংলার সঙ্গে টেলিফোনে কথা হয়েছে সময় গণফোরামের অন্যতম নেতা অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরীও ড. কামালের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন।

ভারতীয় হাইকমিশনার ভারতের পক্ষ থেকে ড. কামাল হোসেনকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানানো হয়। শ্রিংলা মনে করেন, ‘নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করলে একটি অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক হবে, কারচুপি করা সহজসাধ্য হবে না এবং গণতন্ত্র এগিয়ে যাবে। বার্নিকাট ও শ্রিংলা দুজনকেই ৪টি ব্যাপারে ড. কামাল হোসেন আশ্বস্ত করেছেন। এগুলো হলো:

১. তিনি নেতৃত্বে থাকা অবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট কখনোই সহিংস আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি দেবে না। ২. সরকারের সঙ্গে সংলাপের বিষয়টি কখনোই শেষ হবে না। বরং তিনি একটি ‘মিনি টিম’ গঠন করে সরকারের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত সংলাপ চালিয়ে যাবেন।

৩. কাউকে হটানো বা কারও অধীনে নির্বাচন যাওয়া এমন মনোভাব তিনি কখনোই পোষণ করেননি। ঐক্যফ্রন্ট থেকেও এমন মনোভাব পোষণ করতে দেওয়া হবে না। ৪. গণতান্ত্রিক ধারা যেন অব্যাহত থাকে, সেজন্য জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট চেষ্টা করবে।

ড. কামাল হোসেন দুই বিদায়ী কূটনীতিককেই আশ্বস্ত করেছেন, ‘বিএনপির একটি বড় অংশ নির্বাচনে যেতে আগ্রহী। তাঁরা বলেছে, তাঁরা যা কিছু করেছে, সব কিছু নির্বাচনের জন্যই করছে।’

কয়েকদিন আগে জাতিসংঘ সফরকালে প্রায় সব দেশের সরকার ও রাষ্ট্র প্রধানগণ প্রায় সোজা সাপটা শেখ হাসিনার প্রতি তাঁদের সমর্থন জানিয়ে দেন।

এবার আসি সংলাপের প্রসঙ্গে। সংলাপ চলছে, চলবে হয়তো আরও কয়েকদিন। এ নিয়ে নানামুখী ও বিস্তর চুলচেরা বিশ্লেষণ হচ্ছে। যিনি যা বুঝেছেন বা বুঝতে চেয়েছেন সেভাবেই তিনি বা তাঁরা তাঁদের মতামত দিচ্ছেন বিভিন্ন মিডিয়ায়। মনে হচ্ছে যে, সত্যের জয় হয়েছে কারণ অসত্য, আংশিক সত্য বা সিকি সত্য আসল সত্যকে ছাপিয়ে যেতে পারে না। বিরোধীরা যে যে দাবী নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়েছিলেন।

সে সব কথা তাঁরা বা তাঁদের দলের নেতা কর্মীগণ ইতোমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেছেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিজে তাঁর পক্ষের বা বিপক্ষের প্রায় সব নিউজ নিয়মিত পড়েন, প্রয়োজনে নিজেকে শুধরে নেন, না হলে জবাব রেডি রাখেন অন্তরের গভীরে। তাই সংলাপ উপলক্ষ্যে উনার কোন হোম ওয়ার্ক করা লাগেনি।

কিন্তু যারা সিকি সত্য, অর্ধ সত্য আর অসত্যের মিশেল দিয়ে দাবিনামা তৈরি করে সংলাপে গেছেন, উত্থাপনের পরে দাবিনামায় থাকা অসত্য পুরো সত্যের কাছে ম্লান হয়ে গেছে।

তাই প্রধানমন্ত্রীর পাল্টা প্রশ্নের কোন জবাব তাঁরা দিতে পারেন নি। তাই বাইরে এসে তাঁরা কেউ কেউ বলছেন সন্তুষ্ট নন, কেউ মোটামুটি খুশি, কেউ হতাশ হয়ে ‘আশার মুকুল ঝরে যাবার’ শঙ্কা করছেন, কেউবা সরকারকে “ছোটলোক” আখ্যা দিচ্ছে।

এসব যে সংলাপে নিজেদের অদক্ষতা বা অক্ষমতা ঢাকার অপকৌশল তা দেশের অধিকাংশ মানুষই জানেন, হয়তো অভদ্র নন তাই মুখের উপর কিছু বলেন না, মনে মনে ঠিকই তা বলছেন। তাই জনগণের আই ওয়াশ করতে বা ভুল শুধরে নিতে ছোট্ট পরিসরে আবার সংলাপ চাচ্ছেন।

আবার ঐক্যফ্রন্টের বড় দল বিএনপি’র একটা বড় অংশ বলছে তাঁরা নির্বাচনে নমিনেশন পেপার জমা দেবেন আন্দোলনের অংশ হিসেবে। এছাড়া তাঁদের উপায় নেই কারণ অনেক ছোট দলের বড় নেতা, যারা আন্তর্জাতিকভাবে পরিচিত, বি. চৌধুরী সাহেব ছোট ছোট দল নিয়ে জোট করে নির্বাচনে আসছেন। নির্বাচনে আসছেন জেনারেল এরশাদের নেতৃত্বে কিছু ছোট ছোট দল।

অন্যদিকে ‘ভাইবার মান্না’ যিনি ছাত্রলীগ হয়ে ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রাজাকারদের পক্ষে চট্টগ্রাম রেডিওতে নিয়মিত দালালি করতেন, দেশ স্বাধীন হবার পরে জাসদ, বাসদ, মীর্জা সুলতান রাজার দল হয়ে আবার আওয়ামী লীগ হয়ে এখন নাগরিক ঐক্য হয়ে জামায়াত হওয়ার আশায় ছিলেন। আদালত তাঁর আশার গুলে বালি দিয়েছে। তাই আদালত অবমাননার ভয়ে মান্না সাহেব সরকারকে গালাগালি করে মনের ঝাল মিটাচ্ছেন।

‘বহুগামী’ মান্না বলেছেন সরকার ‘ছোটলোক’, সংলাপে খাওয়ানোর পরে তার ছবি মিডিয়ায় ছেড়ে দিয়েছে। বেজায় ক্ষ্যাপা মান্না সাহেবদের ইচ্ছা ছিল, ‘ডুব সাঁতারে গোছল করবেন কিন্তু ভেজা চুল কাউকে দেখাবেন না’।

তাঁর কথা শুনে তাই একটা গল্প মনে পড়ে যায়। সেটি এমন- নিজে টাকা খরচ করে না গ্রামের এমন একজন ‘বড়ই উদার’ লোকের হঠাৎ করেই আখ খাওয়ার সখ হলো। গ্রামের রাস্তার পাশে সারি সারি আখের ক্ষেত, কিন্তু সে সেদিকে যেতে চায় না। কারণ এর আগে চুরি করে আখ খেয়েছে যত, ধরা পড়ে মাইর খেয়েছেন তার চেয়ে অনেক বেশি।

তাই রাস্তা দিয়ে হেঁটে যাবার সময় রাস্তায় পড়ে থাকা আখের ছিবড়া কুড়িয়ে কুড়িয়ে চিবিয়ে অনেক কষ্টে রস বের করে খাচ্ছিল। এক সময় তার চোয়াল ব্যথা হয়ে গেলো।

পাশ দিয়ে একজন কৃষক হেঁটে যাচ্ছিলেন, ‘বড়ই উদার’ লোক তাঁকে বললেন, গ্রামের যে লোক রাস্তা দিয়ে আখ খেতে খেতে গেছে সে বড়ই ‘ছোটলোক’ একটুও রস রাখেনি আখের ছোবড়ায়, পুরোটা চেটেপুটে খেয়েছে! কৃষক ঘুরে তাকিয়ে বললেন, ‘কে ছোটলোক’, বুঝলাম না তো! লেখক: উন্নয়নকর্মী

শেয়ার করুন: