দুই কিডনি হারানো মায়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ছেলে

মায়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ছেলে! শাহবাগ থানায় মামলা করতে গিয়ে ফিরে আসেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার। থানা মামলা নেয়নি বলে জানান তিনি। তবে মায়ের মৃত্যুতে চিকিৎসকদের প্রতারণার অভিযোগটি অভিযোগ আকারে গ্রহণ করেছে পুলিশ।

রফিক শিকদারের মা রওশন আরা মারা যান গত বুধবার রাত ১০টায়। মায়ের লাশ এখনো দাফন করতে পারেননি। কারণ, এই মৃত্যুর বিচার চান তিনি। রফিক শিকদারের অভিযোগ, চিকিৎসক প্রতারণা করে মায়ের দুটো কিডনিই বিক্রি করে দেন, যে কারণে মৃত্যু হয় রওশন আরার।

রফিক শিকদার বলেন, গতকাল আমি শাহবাগ থানায় মামলা করতে গিয়েছিলাম, কিন্তু উনারা মামলা নেয়নি। সাধারণ ডায়েরি হিসেবে অভিযোগ গ্রহণ করেছেন। মায়ের ডেথ সার্টিফিকেট ও ময়নাতদন্ত করার জন্য আমি আজ ঢাকা মেডিকেলে এসেছি। কিন্তু তারা বলছেন আজ নয়, আগামীকাল ময়নাতদন্ত করা হবে।’

রওশন আরা একটি কিডনিতে সমস্যা নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে গত ৫ সেপ্টেম্বর ভর্তি হন। অস্ত্রোপচারের কথা বলে দুটি কিডনিই অপসারণ করার কথা বলছেন রফিক শিকদার। এদিকে শুরু থেকেই বিষয়টি অস্বীকার করছেন চিকিৎসকরা।

এমন অবস্থায় সবাইকে পাশে থাকার করুণ আকুতি জানিয়ে রফিক শিকদার বলেন, ‘ডাক্তারির নামে এমন কিডনি-চোরদের বিরুদ্ধে সবাই আমার পাশে থাকবেন প্লিজ। আমি একা কিছুই করতে পারব না। আমি পরিচালক সমিতির সদস্য, পরিচালকরা সমাজের বিবেক। আশা করি, উনারাও আমার পাশে থেকে এই নরপিশাচদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবেন।

দুই মাস ধরেই রফিক শিকদার অভিযোগ করে আসছিলেন, তাঁর মায়ের কিডনি সরিয়ে ফেলেছেন চিকিৎসকরা। গত সোমবার লিখিত এক বক্তব্যের মাধ্যমেও এর বিচার দাবি করেন তিনি।

সোমবারের সংবাদ সম্মেলনে রফিক শিকদার লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনার কাছে প্রশ্ন, কে বড়? আমার অসহায় মা নাকি অধ্যাপক হাবিবুর রহমান দুলাল? আপনি কার? শোষকের নাকি শোষিতের?

নিশ্চয়ই আপনি শোষিতের পক্ষে। ডাক্তার সাহেব কত টাকার বিনিময়ে আমার বোকাসোকা মায়ের কিডনিটি অন্যত্র বিক্রি করেছেন, তা জানার চেষ্টা করবেন কি? আমার মায়ের সঙ্গে করা এই অন্যায়ের বিচার শেষ পর্যন্ত পাব কি? সুবিচার ও আপনার প্রতীক্ষায় রইলাম।

কিডনি জটিলতার কারণে গত ৫ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বিএসএমএমইউ হাসপাতালে চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদারের মা রওশন আরার অস্ত্রোপচার করেন কিডনি ট্রান্সপ্ল্যান্ট বিভাগের প্রধান হাবিবুর রহমান দুলাল। কিন্তু অস্ত্রোপচারের পর রোগীর দেহে জটিলতা সৃষ্টি হলে রফিক শিকদার নিশ্চিত হন, তাঁর মায়ের দুটো কিডনি ফেলে দেওয়া হয়েছে।

চলচ্চিত্র পরিচালক রফিক শিকদার আরো বলেন, ‘গত ৫ সেপ্টেম্বর বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রফেসর হাবিবুর রহমান দুলারের তত্ত্বাবধানে হাসপাতালের দশম তলার অপারেশন থিয়েটারে মায়ের অপারেশন সম্পন্ন হয়।

কিন্তু রাত ১২টার দিকে কর্তব্যরত ডাক্তার আমাকে বলেন, অপারেশনের পর থেকে আপনার মায়ের ডান পাশের কিডনিটি কাজ করেছে না। দ্রুত উনাকে আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। সঙ্গে তিনি এটাও বলেন, আমাদের হাসপাতালে আইসিইউ খালি নেই।

কোনো প্রাইভেট হাসপাতালের আইসিইউতে নেওয়ার ব্যবস্থা করুন। একদিন পর ইনসাফ আল-বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের ডাক্তার হুমায়ুন রশিদ কবীর সেলিম মায়ের কিডনির অবস্থা পর্যালোচনার জন্য ল্যাবএইড হাসপাতাল থেকে সিটিস্ক্যান করতে বলেন।

পরে ল্যাবএইড হাসপাতালে সিটিস্ক্যান করার পর রিপোর্ট মারফত মায়ের পেটে কিডনির অস্তিত্ব নেই বলে জানতে পারি। মেডিকেল রিপোর্ট দেখার পর পর্যালোচনা করে এবং পুনরায় আলট্রাসনোগ্রাম করে মায়ের পেটে কোনো কিডনির অস্তিত্ব না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেন।’

‘পরে জানা যায়, পাথর অপসারণ করতে গিয়ে আমার মায়ের দুটো কিডনিই কেটে ফেলেছেন চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল। এ নিয়ে বিভিন্ন সংবাদপত্রে নিউজ হলে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাবিবুর রহমান দুলাল দাবি করেন, রফিক শিকদারের মায়ের কিডনিটি প্রকৃতিগতভাবেই জোড়া লাগানো ছিল।

যে কারণে নষ্ট কিডনিটি ফেলতে গিয়ে অপারেশনকৃত স্থানে প্রচুর রক্তক্ষরণ শুরু হয়, যা পরে বন্ধ করা সম্ভব হয়নি। যে কারণে রোগীর ডান দিকের সুস্থ কিডনিটিও ফেলে দিতে হয়েছে। অথচ অপারেশনের পূর্বের সিটিস্ক্যান রিপোর্ট, আলট্রাসনোগ্রামের একাধিক রিপোর্ট বলছে, আমার মায়ের দুটো কিডনিই আলাদা আলাদা স্থানে আবদ্ধ ছিল।’

এদিকে, আইনি পদক্ষেপ হিসেবে প্রথমে ২৯ সেপ্টেম্বর রফিক শিকদার আইন ও সালিশ কেন্দ্রের মাধ্যমে অভিযুক্ত চিকিৎসক হাবিবুর রহমানকে একটি আইনি নোটিশ পাঠান।

এ বিষয়ে রফিক শিকদার বলেন, ‘আইনি নোটিশ পাঠানোর পর অভিযুক্ত চিকিৎসক দুলাল দোষ স্বীকার করে কিডনি প্রতিস্থাপনের সব খরচ বহনসহ কিডনিদাতাকে আট লাখ টাকা দিতে সম্মত হন। এ নিয়ে স্ট্যাম্পে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর হয়।

আর এ বিষয়ে ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলালের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

তবে এর আগে একাধিক মিডিয়াকে ডাক্তার হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, ‘অভিযোগ তো মিথ্যা নয়, আমরা বললাম এটা আমরা বাঁ দিকে অপারেশন করেছি, বাঁ কিডনি ফেলার জন্য এটা সিদ্ধান্ত ছিল।

জন্মগতভাবে বাঁ কিডনির সমস্যা ছিল, এর সঙ্গে ডান দিকের কিডনি এমনভাবে পেঁচানো ছিল যে এবং ওই অবস্থা ব্লিডিং হচ্ছিল, যা কোনোভাবে বোঝা সম্ভব হচ্ছিল না, ফলে অপারেশনের সময় ডান কিডনিটাও উঠে চলে আসে।’

এখন মায়ের মৃত্যুর বিচার চেয়ে দ্বারে দ্বারে ঘুরছে ছেলে! । রফিক শিকদারের সাথে ’সময়ের কন্ঠস্বরের এ প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি বলেন, আমার মায়ের ব্যাপারটি নিয়ে আমি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাই।

শেয়ার করুন: