সাংবাদিক জামাল খাসোগি বিপজ্জনক ইসলামপন্থী বলে মন্তব্য করেছিলেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। খাসোগি হত্যার পর হোয়াইট হাউসের সঙ্গে ফোনালাপে তিনি ওই মন্তব্য করেছিলেন। মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্ট এবং নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে এই দাবি করা হয়েছে।
ওয়াশিংটন পোস্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার পর যুবরাজ সালমান মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনার এবং নিরাপত্তা উপদেষ্টা জন বোল্টনের সঙ্গে ফোনালাপ করেছিলেন। ওই ফোনালাপে যুবরাজ বলেছিলেন, খাসোগি ইসলামপন্থী সংগঠন মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন।
খাসোগি নিখোঁজ হওয়ার এক সপ্তাহ পর ৯ অক্টোবর ওই ফোনালাপটি হয়েছিল বলে দাবি করেছে ওয়াশিংটন পোস্ট। ফোনালাপে যুবরাজ সালমান সৌদি-মার্কিন বন্ধুত্ব রক্ষারও অনুরোধ করেন বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমটি।
এক বিবৃটিতে খাসোগির পরিবার জানিয়েছে, নিহত সাংবাদিক কখনই মুসলিম ব্রাদারহুডের সদস্য ছিলেন না। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে খাসোগি নিজেও এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিলেন বলে উল্লেখ করেছে তাঁর পরিবার। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, খাসোগি অবশ্যই বিপজ্জনক মানুষ ছিলেন না। এটা অসম্ভব। এই দাবি হাস্যকর ছাড়া আর কিছুই নয়।
খাসোগি নিহত হওয়ার এক মাস পেরিয়ে যাওয়ার পরও এখনো তাঁর হত্যার তদন্তের বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছুই জানানো হচ্ছে না। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র এবং তুরস্কের কর্তৃপক্ষ স্বীকার করে নিয়েছে যে, তাকে ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটেই হত্যা করা হয়েছিল। তবে তাঁর মৃতদেহ কোথায় সে ব্যাপারে কোন পক্ষই পরিষ্কার করে কিছু জানাচ্ছে না।
নিহত সাংবাদিকের তুর্কি বাগদত্তা হত্যার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানিয়েছেন। এই হত্যায় সৌদি রাজ পরিবার এবং যুক্তরাষ্ট্রের যোগসাজশ রয়েছে বলেও আভাষ দিয়েছেন তিনি।
গত ২ অক্টোবর তুরস্কের ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেট থেকে নিখোঁজ হন সৌদি সাংবাদিক জামাল খাসোগি। তিনি দেশটির ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের কঠোর সমালোচক হিসেবে পরিচিত ছিলেন। ২০১৭ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রে স্বেচ্ছা-নির্বাসনে ছিলেন তিনি।
মার্কিন সংবাদ মাধ্যম ওয়াশিংটন পোস্টের এই কলামিস্ট নিখোঁজ হওয়ার দিন তাঁর তুর্কি বাগদত্তা হাতিস চেঙ্গিসকে বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করেছিলেন। সেখানে আগের বিয়ের তালাকের কাগজপত্র সংগ্রহ করতে গিয়েছিলেন খাসোগি। এরপর তিনি আর বের হননি।
গত বুধবার তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশের পরই শ্বাসরোধ করে খাসোগিকে হত্যা করা হয়েছিল। এরপর পূর্ব পরিকল্পনামতো তাঁর দেহ টুকরো করা হয়েছিল।
তবে তাঁর দেহাংশ কোথায় সে বিষয়টি জানায়নি তারা। এছাড়া হত্যায় কারা অংশ নিয়েছে সে বিষয়ে বিস্তারিত সুনির্দিষ্টভাবে কোন তথ্য দেয়নি তারা। যদিও সরকার সমর্থিত তুর্কি সংবাদমাধ্যম শুরু থেকেই বলে আসছে সাংবাদিককে নির্যাতনের পর হত্যা করা হয়েছিল।
সন্দেহভাজন হত্যাকারীদলের পরিচয়ও প্রকাশ করেছিল তারা। কিন্তু তুর্কি প্রশাসন এ বিষয়ে নিশ্চুপ রয়েছে। দেশটির প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান খাসোগি হত্যাকে সুবিধা আদায়ের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ উঠছে।