ঐক্যফ্রন্ট

যে কারণে গণভবনে কিছুই খাবেন না ঐক্যফ্রন্ট নেতারা

বৃহস্পতিবার (১ নভেম্বর) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারি বাসভবন গণভবনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্ধারিত সংলাপে অংশ নিলেও নৈশভোজে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না রাত সাড়ে ৯টায় এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, ‘দেশের একটি সংকটকালে আলোচনার জন্য আমরা গণভবনে যাচ্ছি; রাতের খাবার গ্রহণের জন্য নয়। আমরা আওয়ামী লীগকে জানিয়ে দিয়েছি যে, তারা যেন রাতের খাবারের আয়োজন না করে।’

জানতে চাইলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম প্রধান নেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘যে সময়টা আছে, আমরা চাইছি, সে সময়টায় শুধু আলোচনা হোক। নৈশভোজে অংশ নিলে তো আলোচনায় ব্যাঘাত ঘটবে। এই কারণেই নৈশভোজে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আর কোনও কারণ নেই। সময় তো খুব মূল্যবান।’ এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, ‘নৈশভোজে অংশ না নিলেও সংলাপে কোনও প্রভাব পড়বে না।’

জানা গেছে, বুধবার রাতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সিদ্ধান্ত নেয় গণভবনে রাতের খাবার না গ্রহণের। এরপর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মোহসীন মন্টু আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করে বিষয়টি জানান। পরে আবার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু ফোন করে মোস্তফা মোহসীন মন্টুকে অনুরোধ জানান। এরপর মন্টু জানান যে, ফ্রন্টের সিদ্ধান্ত হয়েছে রাতের খাবারে অংশ না নেওয়ার।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘সংলাপ তো হবে দেশের ক্রাইসিস নিয়ে। আমরা চা খাবো। নৈশভোজে অংশ না নেওয়ার বিষয়টি কাদের সাহেবকে (ওবায়দুল কাদের) জানানো হয়েছে।’ ফ্রন্টের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, বিএনপি নেতারা তাদের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে সংলাপে গিয়ে নৈশভোজে অংশ নিতে অনীহা জানায়। এরপরই ফ্রন্টের শীর্ষনেতারা বিএনপির এই মনোভাবকে সমর্থন দিয়ে নৈশভোজে অংশ না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।

এ বিষয়ে মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘এ সিদ্ধান্ত বিএনপির হবে কেন, এটা ঐক্যফ্রন্টের সিদ্ধান্ত।’ এদিকে জানা গেছে, গণভবনের ঐক্যফ্রন্ট নেতাদের আপ্যায়নে থাকছে ১৭ ধরনের খাবার। হোটেল র‌্যাডিসন থেকে আনা হচ্ছে এসব খাবার। আর খাবার প্রস্তুতের তদারকিতে রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী-১ (এপিএস-১) এবং প্রটোকলের চৌকস কর্মকর্তারা ও ব্যবস্থাপনায় থাকছে পর্যটন করপোরেশন।

প্রধানমন্ত্রী কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, খাবারের মেন্যুতে আরও থাকছে পিয়ারু সর্দারের মোরগ পোলাও, চিতল মাছের কোপ্তা, রুই মাছের দো-পেঁয়াজা, চিকেন ইরানি কাবাব, বাটার নান, মাটন রেজালা, বিফ শিক কাবাব, মাল্টা, আনারস, জলপাই ও তরমুজের ফ্রেশ জুস, চিংড়ি ছাড়া টক-মিষ্টি স্বাদের কর্ন স্যুপ, চিংড়ি ছাড়া মিক্সড নুডলস, মিক্সড সবজি, সাদা ভাত, টক ও মিষ্টি উভয় ধরনের দই, মিক্সড সালাদ, কোক ক্যান এবং চা ও কফি।

এর আগে ড. কামাল হোসেনকে সংলাপের চিঠি পৌঁছে দিতে গিয়ে আওয়ামী লীগের দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ তার পছন্দের খাবার সম্পর্কে জানতে চান। তবে, ড. কামাল চিজ কেক ছাড়া বিশেষ কিছু বলেননি। সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজে ফোন করে আব্দুস সোবহান গোলাপকে বলেন, ‘চাচার কাছে জানতে চাইবে উনি কী খাবেন।’ সংলাপে শেখ হাসিনার পাশাপাশি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যদের মধ্যে শিল্পমন্ত্রী আমির হোসেন আমু, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ সংলাপে উপস্থিত থাকবেন।

সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যদের মধ্যে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, কাজী জাফর উল্লাহ এবং ড. আব্দুর রাজ্জাক সংলাপে অংশ নেবেন। আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক পানিসম্পদমন্ত্রী রমেশ চন্দ্র সেন, দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, ডা. দীপু মনি, আব্দুর রহমান, প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ, দফতর সম্পাদক ড. আব্দুস সোবহান গোলাপ এবং আইন সম্পাদক শ. ম. রেজাউল করিমও উপস্থিত থাকবেন।

১৪ দলের শরিকদের মধ্যে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী রাশেদ খান মেনন, জাসদ একাংশের সভাপতি ও তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, জাসদ আরেক অংশের কার্যকরী সভাপতি মাঈনুদ্দিন খান বাদল অংশ নেবেন। এছাড়া সংলাপে অংশ নিতে ইতিমধ্যে ১৬ জনের নাম পাঠিয়েছে ঐক্যফ্রন্ট। ১৬ জন হলেন-গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসিন মন্টু, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম, স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ, খন্দকার মোশাররফ হোসেন,

জমিরউদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, জেএসডি সভাপতি আ স ম আব্দুর রব, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক রতন, সহ-সভাপতি তানিয়া রব, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, এস এম আকরাম, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার আ ব ম মোস্তফা আমিন, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর, ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের জাফরুল্লাহ চৌধুরী।

শেয়ার করুন: