বাস

এক নজরে দেখে নিন, কোন বাসের মালিক কে?

শিখর পরিবহনের মালিক মাহমুদ হোসেন। এই পরিবহনের সঙ্গে এক সময়ের জাতীয় পার্টির নেতা মাইজু উদ্দিন জড়িত রয়েছেন। এর আগে এই পরিবহন পরিচালনা করতেন দুর্বৃত্তদের হাতে খুন হওয়া সায়েদাবাদ বাস-মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও যাত্রাবাড়ী-ডেমরা থানা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খায়রুল আলম মোল্লা।

২০০৯ সালে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের স্ত্রী সৈয়দা রোকেয়া বেগম এই পরিবহনটি উদ্বোধন করেন বলে জানা গেছে। এছাড়া শাজাহান খানের পরিবারের মালিকানায় ঢাকা-মাদারীপুরের পথে সার্বিক পরিবহনের বাস চলাচল করে। প্রজাপতি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি শাহিদা তারেখ।

রাজধানীতে বর্তমানে সাড়ে ৪৪ হাজারেরও বেশি গণপরিবহন চলাচল করছে। দিনদিন এ সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বাড়ছে বিশৃঙ্খলা। নানা উদ্যোগ নিয়েও এ সেক্টরের নৈরাজ্য থামানো যাচ্ছে না। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, প্রভাবশালী মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, ক্ষমতাসীন দল ও পরিবহন সংগঠনের নেতারাই এসব বাসের মালিক। এদের প্রভাবেই পুরো পরিবহন খাত জিম্মি হয়ে পড়েছে।

তাদের মর্জি ছাড়া কোনও সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। আবার এদের চাহিদা মতো দিতে হয় রুট পারমিট। এজন্যই এ সেক্টরে শৃঙ্খলা ফেরানো যাচ্ছে না বলে মনে করছেন পরিবহন সংশ্লিষ্টরা।

এনা পরিবহনের মালিক বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন সমিতির মহাসচিব ও ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সদস্য খোন্দকার এনায়েত উল্যাহ। বিহঙ্গ পরিবহনের মালিক স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বরিশাল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পঙ্কজ দেবনাথ। এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মালিক নাসির উদ্দিন খোকন।

আজিমপুর থেকে উত্তরা চলাচলকারী ‘সূচনা-বিআরএফ’ পরিবহনে রয়েছে সাবেক ধর্ম প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট শাহজাহান মিয়ার ছেলে আরিফুজ্জামান রনির বাস। একই গন্তব্যে চলাচলকারী দ্বীপ বাংলা পরিবহনেও আরিফুজ্জামানের বাস চলতো।

সংসদ সদস্য নূরে আলম চৌধুরীর চাচাতো ভাই মনির চৌধুরীর বাস চলে ‘সূচনা-বিআরএফ’ পরিবহনে। তেতুলিয়া পরিবহনের চেয়ারম্যান মশিয়ার রহমান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আওয়ামী লীগ নেতা আবদুল ওয়াদুদ মাসুম।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাবালে নূর পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্বে আছেন মো. জাকির হোসেন। মূলত নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের শ্যালক মো. নান্নু মিয়া ও শাহাদাৎ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন ক্ষমতাসীন দলের নেতার বাস রয়েছে এই পরিবহন কোম্পানিতে। মন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় নান্নু মিয়া পরিবহন জগতে প্রভাবশালী পরিচালক হিসেবে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন।

অনাবিল সুপার কোম্পানির চেয়ারম্যান সোলেমান মিয়া এবং ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্ষমতাসীন দলের নেতা জুয়েল দেওয়ান। ছালছাবিল পরিবহনের মালিকানায় রয়েছেন মুক্তার হোসেন মৃধা, কোম্পানির এমডির নাম নিপা।

গ্রেট তুরাগ ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেড ও অনাবিল ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি লিমিটেডের মালিক আওয়ামী লীগ নেতা জুয়েল দেওয়ান। সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ও মহিলা লীগের সাবেক সভাপতি আশরাফুন নেছা মোশাররফের পরিবহন কোম্পানি স্বপ্ন সার্ভিসেস।

দ্বীপ বাংলা পরিবহনের মালিক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি আজমল উদ্দিন আহমেদ সবুর। দি নিউ আনন্দ পরিবহনের মালিক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ মুক্তার হোসেন।

গাবতলী-উত্তরা রুটের বসুমিত পরিবহনের মালিক একই সংগঠনের প্রচার সম্পাদক আব্দুল মনসুর বুলবুল। ওই সমিতির সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহবুবুর রহমান বিকল্প সিটিং সুপার ও বিকল্প অটো সার্ভিসের মালিক।

তেতুলিয়া পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ মাসুম ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কার্যকরী পরিষদের সদস্য। তার বাড়ি ভোলায়। কনক পরিবহন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খানের ভাই আজিজুর রহমান খানের,

ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমানের ভাই মমতাজুল ইসলামের বাস চলে ঢাকা-ময়মনসিংহ পথে শামীম এন্টারপ্রাইজ নামে। ঢাকা-গাজীপুর রুটে চলাচলকারী ঢাকা পরিবহন ও ঢাকা-কিশোরগঞ্জ রুটে শৌখিন পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মির্জা আব্বাস।

বিএনপি নেতা ও সাবেক এমপি জি এম সিরাজ এসআর পরিবহনের মালিক। হানিফ পরিবহন- ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক এম কফিল উদ্দিন আহম্মেদের ভাই সাভার বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফের।

খালেক এন্টারপ্রাইজের মালিক বিএনপির নির্বাহী কমিটির সদস্য ও সাবেক এমপি এস এ খালেক। ঢাকা মহানগর উত্তর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরিদুর রহমান ওরফে ইরান দেশ বাংলা পরিবহন কোম্পানির চেয়ারম্যান।

বেস্ট ট্রান্সপোর্ট লিমিটেডের এমডি মাইজু উদ্দিন, লাব্বাইক ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হাসান এবং মঞ্জিল পরিবহন লিমিডেটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সোলেমান। ট্রান্সসিলভা (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুকুল মৃধা ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা সদস্য হাবিবুর রহমান মোল্লার ভাই। এই পরিবহনের চেয়ারম্যান রেজাউল করিম খোকন।

তিনি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সমর্থক।

রাইদা পরিবহন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ইকবাল হোসেন, এম এম লাভলী পরিবহন লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিন। ৬ নং মতিঝিল-বনানী ট্রান্সপোর্ট কোম্পানি (প্রাইভেট) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আব্দুর রহিম। এছাড়া এর সঙ্গে জড়িত আছেন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা মো. হাসান ওরফে লাল মিয়া।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সভাপতি, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় প্রতিমন্ত্রী মসিউর রহমান রাঙ্গাঁ সঞ্চিতা পরিবহনের মালিক। জাতীয় পার্টির অপর নেতা সালাউদ্দিন আহমেদ এস এ পরিবহনের মালিক। ঢাকা-ফেনী পথে চলাচলকারী স্টারলাইন পরিবহনের স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত।

শ্যামলী পরিবহনের মালিক বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান রমেশ চন্দ্র ঘোষ, আকিব পরিবহনের মালিক নাটোর জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো. বাসিরুর রহমান খান চৌধুরী এহিয়া, গাজীপুর পরিবহনের মালিক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির দফতর সম্পাদক সামদানী খন্দকার। আনন্দ পরিবহনের মালিক দিদারুল ইসলাম,

বন্ধন পরিবহনের মালিক হাজী আইয়ূব আলী, বন্ধু পরিবহনের মালিক মুরাদ হোসেন, গ্রীন লাইন পরিবহনের মালিক হাজী মো. আলাউদ্দিন, ঈগল পরিবহনের মালিক বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান অশোক রঞ্জন।

সাকুরা পরিবহনের মালিক আওয়ামী লীগ সমর্থিত চুন্নু মিয়া। ‘ডিপজল’ পরিবহনের মালিক বিএনপি সমর্থিত চিত্রনায়ক মনোয়ার হোসেন ডিপজল। ইকোনো পরিবহনের মালিক বিজন বিহারী ঢাকা-ফেনী-নোয়াখালী-লক্ষ্মীপুর আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সায়েদাবাদ কমিটির (কেন্দ্রীয়) সভাপতি।

এন মল্লিক পরিবহন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ঢাকার দোহার উপজেলার আওয়ামী লীগ নেত্রী নার্গিস মল্লিক, ভিআইপি ক্ল্যাসিকের মালিক ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সাংগঠনিক সম্পাদক জহিরুল হক।

উৎসব ট্রান্সপোর্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, পরিবহন নেতা কাজল এবং ভাইস চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান বিদ্যুৎ। এই পরিবহনের মূল পরিচালক নারায়ণগঞ্জের আওয়ামী লীগ নেতা চেঙ্গিস খান ও মোক্তার হোসেন।

মোক্তার হোসেন ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির কোষাধ্যক্ষ। তারা এই পরিবহন ছাড়াও সেতু পরিবহন, বন্ধু পরিবহন, বন্ধন পরিবহন, শীতল পরিবহন, বোরাক পরিবহন ও আনন্দ পরিবহনের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন।

নারায়ণগঞ্জের মদনপুর থেকে গুলিস্তান রুটে পরিচালিত শ্রাবণ ট্রান্সপোর্টের পরিচালক মীর আব্দুস সেলিম। সেলিম এক সময়ের সেভেন স্টার গ্রুপের সদস্য বকুল ওরফে ভাগিনা বকুলের দুলাভাই।

আসিয়ান ট্রান্সপোর্টের মালিক আব্দুল বাতেন বাবু সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সভাপতি। বোরাক পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ঈদ্রিস। কোমল মিনিবাস পরিবহনের মালিক মজিবুর রহমান। স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক গাজী মেজবাউল হোসেনের বোন পারভীন হোসেনের মালিকানাধীন পরিবহন ক্যান্টনমেন্ট পরিবহন।

আল্লাহ ভরসা পরিবহনের পরিচালক নারায়ণগঞ্জের মদনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা সাইফুল ইসলাম পলাশ। সিটি বন্ধন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নারায়ণগঞ্জের কাশিপুর ইউনিয়ন পরিষদ সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান) হাজী আইয়ূব আলী। তিনি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতিও। নারায়ণগঞ্জ-মিরপুর রুটে চলাচলকারী হিমালয় পরিবহনের চেয়ারম্যান নারায়ণগঞ্জ জেলা কৃষক লীগের সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম চেঙ্গীস।

গ্লোরী এক্সপ্রেসের মালিক ও চেয়ারম্যান পুলিশের সাবেক আইজি এ কে এম শহীদুল হকের ভাই এ কে এম ইসমাইল হক। সায়েদাবাদ টার্মিনালের আখতার নামের এক ব্যক্তি এই পরিবহনটি দেখাশোনা করেন। গুলিস্তান-নারায়ণগঞ্জ রুটে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত পরিবহন জেডএন করপোরেশনের মালিক নারায়ণগঞ্জের সরকারদলীয় সংসদ সদস্য এ কে এম শামীম ওসমান।

স্বদেশ ও রানীমহল পরিবহনের পরিচালক আব্দুর রহমান। স্বদেশ পরিবহনের মালিকানায় আরও রয়েছেন গোপালগঞ্জের আওয়ীমী লীগ সমর্থক শেখ কবিরের ভাই, জিয়া। তিনি বাহন পরিবহনের সঙ্গেও জড়িত বলে জানা গেছে। এ কে পরিবহনের মালিক ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন।

নিউ ভিশনের মালিক শহীদ উদ্দিন হলেও এর সঙ্গে শেখ কবির নামে এক ব্যক্তি জড়িত রয়েছেন। তিনি বনানী থানার সাবেক ওসি ফরমান আলীর আত্মীয়। গাবতলী থেকে গাজীপুর রুটে চলাচলকারী বসুমতি পরিবহনের মালিক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির প্রচার সম্পাদক আবুল মনসুর বুলবুল।

শিকড় পরিবহনের মালিক আবুল হোসেন মানিক। তবে এই পরিবহনের সঙ্গেও মাইজুল রয়েছেন। মেঘনা পরিবহনের মালিক বাগেরহাট জেলা বিএনপির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক লিটু শরীফ মোস্তফা জামান।

মোহনা পরিবহন কোম্পানির মালিক ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আনোয়ার হোসেন। পল্লবী সুপার সার্ভিসের দায়িত্বে আছেন রিয়াজ উদ্দিন, মিরপুর সুপার লিংকের মালিক মিরপুরের এমপি আসলাম মোল্লার ভাই হোসেন মোল্লা।

দোয়েল পরিবহনের মালিক গুলজার হোসেন, বেকার পরিবহনের মালিক ওমর ফারুক, গ্রীন বাংলা পরিবহনের মালিক মো. নাজিম মীর, ইটিসি ট্রান্সপোর্ট কোম্পানির মালিক শহীদুল ইসলাম।

গ্যালাক্সি লাইন ট্রান্সপোর্টের মালিক মিলন। নূর এ মক্কা পরিবহনের ভাইস চেয়ারম্যান খোরশেদ খোকন। তিনি জাবালে নূর ও নূর এ মক্কা পরিচালনায়ও রয়েছেন।

ইতিহাস ও ঠিকানা পরিবহনের মালিক মো. রিপন। তিনি পুলিশের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আত্মীয় হিসেবে পরিবহন সেক্টরে নিজেকে পরিচয় দেন। তানজিল পরিবহনের মালিক আমেরিকা প্রবাসী খোকন। এই পরিবহন ছাড়াও বিহঙ্গ, মিডওয়ে, মিডল্যান্ড ও বিকল্প পরিবহনসহ বেশ কিছু কোম্পানিতে তার বাস রয়েছে বলে জানা গেছে।

সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতা আবুল হাসনাত আবদুল্লাহর ভাই আলী কবির চাঁন ‘দ্রুতি’ পরিবহনের মালিক। নোয়াখালীর চাটখিলের মেয়র, ক্ষমতাসীন দলের নেতা মোহাম্মদ হোসেন হিমালয় এক্সপ্রেসের মালিক। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের সহ-সভাপতি ও শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আকবর বাবুল ইলিশ পরিবহনের মালিক।

এই পরিবহনের সঙ্গে জাকির হোসেন নামে একজন মালিক সমিতির নেতাও জড়িত রয়েছেন। একাত্তর পরিবহনের মালিক স্বেচ্ছাসেবক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি অ্যাডভোকেট মোল্লা মো. আবু কাওসার। ঈগল পরিবহনের মালিক অশোক রঞ্জন কাপুড়িয়া বাংলাদেশ বাস ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান।

আকিক পরিবহনের মালিক ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও মহানগর উত্তরের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আশিকুল ইসলাম আশিক, স্বাধীন এক্সপ্রেস ও আয়াত পরিবহনের মালিক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও বিএনপি নেতা সাইফুল ইসলাম।

এভারেস্ট পরিবহনের মালিক ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক ভুঁইয়া হুমায়ুন কবির তপন। ওয়েলকাম পরিবহনের মালিক আওয়ামী মোটরচালক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কালু শেখ। মেশকতা ট্রান্সপোর্টের মালিক ছিলেন সাবেক পরিবহন নেতা ও বিএনপি সমর্থক জাহাঙ্গীর কবির ববি। বর্তমানে এর মালিক তার ভাই দিপু।

দিঘীরপাড় পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা বাদল সরদার। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ফাঁসিতে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর নামে রয়েছে আজমেরী পরিবহন। গ্রামীণ পরিবহনের মালিক সায়েদাবাদ আন্তজেলা ও নগর বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির কার্যকরী সভাপতি শাহ আলম কচি।

সোহাগ পরিবহনের মালিক বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ফারুক তালুকদার সোহেল। ঢাকা-কুমিল্লা রুটের এশিয়া লাইনের মালিক জুলহাস হোসেন। ঢাকা-রামগঞ্জ রুটের আল বারাকা পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা রফিক আহমেদ।

এছাড়া অনন্যা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামরানুর রশিদ তুহিন, রবরব পরিবহনের পরিচালক সুমন আলী, আলিফ পরিবহনের মালিক সাইদুর রহমান, দিশারী পরিবহনের পরিচালক আজমুল হুদা মাসুদ, এম এ লাভলি পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহিন, বিকাশ পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সোহরাব হোসেন, বাধন পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক দিদারুল ইসলাম,

আল মক্কা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কামাল উদ্দিন, গ্যালাক্সি লাইন পরিবহনের পরিচালক মিলন, রাজধানী সুপার সার্ভিসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক খন্দকার মনির আহমেদ, বৈশাখী পরিবহনের মালিক নূর মোহাম্মদ খান, খাজাবাবা পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নান্টু, আয়াত পরিবহনের মালিক সাইফুল ইসলাম, অছিল পরিবহনের মালিক কাউছার আহমেদ,

পরিস্থান পরিবহনের মালিক শেখ শিরিন শান্তি, ওয়ান লাইন পরিবহনের মালিক ফিরোজ উদ্দিন এবং ভূঁইয়া পরিবহনের মালিক তোফাজ্জল হোসেন মন্টু সরাসরি রাজনীতির সঙ্গে জড়িত না থাকলেও তারা ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ সমর্থন করেন। এছাড়া তারা পরিবহন রাজনীতি ও পরিবহন ব্যবসার সঙ্গেও জড়িত।

গণপরিবহনে বিভিন্ন বাসের মালিকানার বিষয়ে ঢাকা সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্যাহ বলেন, ‘কারও রাজনৈতিক পরিচয় দোষের নয়। সবাই বৈধভাবে ব্যবসা করছেন। এখন দেখতে হবে কেউ প্রভাব খাটিয়ে অন্যায় কিছু করছেন কিনা। যেকোনও অপরাধের বিষয়ে সমিতি থেকে আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।’

এ বিষয়ে বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী প্রতিবেদককে বলেন, ‘পরিবহন খাতের সঙ্গে যারা জড়িত তারা প্রায় সবাই রাষ্ট্রীয়

রুট পারমিটে এই অরাজকতা থামাতে কয়েক বছর আগে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষকে (ডিটিসিএ) দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। সে অনুযায়ী সমীক্ষার পর রাজধানীর কোন রুটে কতটি গাড়ি চলবে সেই সংখ্যা এবং নতুন রুট নির্ধারণ করার দায়িত্ব দেওয়া হয় ডিটিসিএ’কে। কিন্তু এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হয়নি।

মূলত পরিবহন মালিকরাই এ কমিটির সদস্য। তারা কমিটিতে প্রভাব খাটিয়ে বাসের রুট পারমিট আদায় করে নেন। শ্রমিকদের আপত্তির কারণেও তা হচ্ছে না বলে অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের। এছাড়া নগরজুড়ে পরিচালিত অধিকাংশ বাসেরই রুট পারমিট নেই। এরপরও বছরের পর বছর ধরে এসব পরিবহন চলছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সাধারণ সম্পাদক, পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খানের মতে, মালিকরা নানাভাবে প্রভাব খাটিয়ে বাসের রুট পারমিট আদায় করে নেন। এ সংক্রান্ত যে কমিটি রয়েছে তাতে নগর বিশেষজ্ঞ কিংবা কারিগরি জ্ঞানসম্পন্ন কাউকে রাখা হয়নি।

ক্ষমতাধর বা সরকারি দলের নেতা। তারা চাইলে এ পরিবহন ব্যবস্থাকে একটা সুশৃঙ্খল পরিস্থিতিতে নিয়ে আসতে পারেন। কিন্তু তারা চাইছেন না। প্রতিনিয়ত হাজার কোটি টাকা আয় করছেন। কিন্তু সড়কে শৃঙ্খলা ফিরছে না। যদি এই সেক্টরটি নিয়ে রাজনীতি না হতো তাহলে এমন নৈরাজ্য হতো না।’

জানা গেছে, এসব পরিবহনের রুট পারমিটেও (চলাচলের অনুমতি) চলে নৈরাজ্য। পরিবহন মালিকদের প্রভাবে কোনও সমীক্ষা ছাড়াই বাসের রুট পারমিট দেওয়া হয়। এতে কোনও রুটে খুব বেশি, আবার কোনও রুটে গাড়ির সংখ্যা বেশ কম।

মহানগর পুলিশ কমিশনারের নেতৃত্বাধীন এ সংক্রান্ত ২০ সদস্যের রিজিওনাল ট্রান্সপোর্ট কমিটি (আরটিসি) রুট পারমিটের অনুমোদন দিচ্ছে। কমিটিতে ট্রাফিক পুলিশ, বিআরটিএ, মালিক-শ্রমিক প্রতিনিধি ও সরকারের আরও কয়েকটি সংস্থার প্রতিনিধি রয়েছেন।

শেয়ার করুন: