অবৈধ টাকার খনি চট্টগ্রাম কারাগার – মাসে আয় ৫ কোটি টাকা

অবৈধ আয়ের টাকার খনিতে পরিণত হয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারে বন্দী বিক্রি, পুনঃগ্রেফতারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, টাকার বিনিময়ে মাদক ব্যবসায় সহযোগিতাসহ নানান খাত থেকে প্রতি মাসে অবৈধ আয় হয় ৫ কোটি টাকার অধিক।

এ অবৈধ কর্মকাণ্ডের নেতৃত্বে রয়েছেন ভৈরব রেলস্টেশন থেকে ৩ কোটি টাকার এফডিআরের কাগজ, দেড় কোটি টাকার চেক ও নগদ সাড়ে ৪৪ লাখ টাকাসহ গ্রেফতার হওয়া চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার সোহেল রানা বিশ্বাস।

জেলার সোহেল রানার নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা স্বীকার করে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জ্যেষ্ঠ জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ‘সোহেল রানা চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারকে অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত করেছে।

তাকে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হলে তা কার্যকর করত না। তার অনিয়ম ও দুর্নীতির বিষয়ে একাধিকবার ঊধ্বর্তন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।’

জানা যায়, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে জেলার হিসেবে সোহেল রানা যোগদানের পর অনিয়ম ও দুর্নীতির নতুন মাত্রা যোগ হয়। তার নেতৃত্বে গড়ে ওঠে একটি অবৈধ সিন্ডিকেট। এ কথিত সিন্ডিকেটের নেতৃত্বেই চলতে থাকে অবৈধ বাণিজ্য।

তারা কারাগারে আসা নতুন বন্দীদের নিলামে বিক্রি, টাকার বিনিময়ে বন্দীর সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ পাইয়ে দেওয়া, জামিনপ্রাপ্ত বা সাজা খেটে বের হওয়া বন্দীদের কারা ফটকে পুনরায় গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়, কারাগারের ক্যান্টিন ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, কারা হাসপাতালে অসুস্থ হিসেবে বন্দীদের সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামেও আদায় করে মোটা অঙ্কের অর্থ।

এসবের পাশাপাশি বন্দীদের নিম্নমানের খাবার সরবরাহের সুযোগ দিয়ে ঠিকাদারের কাছ থেকে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া নিয়োগ ও বদলি বাণিজ্যের মাধ্যমে প্রতি মাসে প্রায় ৫ কোটি টাকা অবৈধভাবে আয় করত সোহেল রানার সিন্ডিকেটটি।

এ অবৈধ টাকা নিজেদের মধ্যে ভাগাভাটোয়ারা, এ ছাড়াও উল্লেখযোগ্য একটি অংশ চলে যেত ঊধ্বর্তন কর্মকর্তাদের পকেটে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এক ব্যক্তি বলেন, চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে প্রতিদিন গড়ে ১৫০ থেকে ২০০ জন নতুন বন্দী কারাগারে আসে।

নতুন বন্দীদের কারাগারে আনার পর সারা দিন ঠাসাঠাসি করে একটি কক্ষে দাঁড় করে রাখা হয়। ওই কক্ষে তাদের সারাদিন কোনো খাবার সরবরাহ করা হতো না।

এমনকি বাথরুমে যেতে দেওয়া হয় না। এ অবস্থায় কেইস টেবিল নামে জেলারের নেতৃত্বে ‘বন্দী বিক্রয়ের’ নিলাম অনুষ্ঠিত হয়। বিভিন্ন ওয়ার্ডের মেট/রাইটাররা উপস্থিত হয়ে নিলামের মাধ্যমে বন্দী প্রতি ২ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা পর্যন্ত বিভিন্ন মূল্যে ক্রয় করে স্ব-স্ব ওয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। এ ছাড়া বন্দীদের সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাৎ করতে আসলেও দিতে হয় মোটা অঙ্কের টাকা।

জানালা সাক্ষাৎ, অফিস ও গেইট সাক্ষাৎ ও ভিআইপি সাক্ষাৎ নামে একেকটি ভিন্ন ভিন্ন সাক্ষাতের জন্য বন্দীর আত্মীয়-স্বজনকে দিতে হয় সর্বনিম্ন দেড় হাজার টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা।

জেল সুপার প্রশান্ত কুমার বণিক বলেন, ‘সোহেল রানা একটি সিন্ডিকেট করে এসব অনিময় করত। এরই মধ্যে এ সিন্ডিকেটের কয়েকজনকে কাশিমপুর কারাগারে বদলি করা হয়েছে। টাকাসহ গ্রেফতার হওয়া সোহেল রানার বিষয়ে দু- একদিনের মধ্যে ব্যবস্থা নেবেন কর্তৃপক্ষ।’

Source : BD Pratidin

শেয়ার করুন: