বিএনপি

নেতাদের কেউ ‘প্লেট’ চোর, ‘মাছ-ভ্যানিটি ব্যাগও’ চোর!

প্রতিপক্ষকে ‘ঘায়েল’ করতে অদ্ভুত সব মামলা বাংলাদেশের রাজনীতিতে সংস্কৃতির অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ‘ভিত্তিহীন’ এসব মামলায় রাজনৈতিক নেতাদের কারাগারেও যেতে হয়েছে। ক্ষমতার বাইরে থাকা বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এসব মামলা সাধারণত হয়ে থাকে। আবার ক্ষমতায় গেলে অধিকাংশ এসব মামলা রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার করা হয়।

ক্ষমতার বাইরে থাকা দলগুলোর দাবি, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে ক্ষমতাসীরা এসব অদ্ভুত মামলা দিয়ে থাকেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সুস্থ ধারার রাজনীতি ফিরে না আসলে পরে এসব মামলার প্রসার আরো বাড়তে থাকবে।

রাজনৈতিক বিবেচনায় মামলা বাংলাদেশে নতুন কিছু নয়। আওয়ামী লীগ নেতা সাবের হোসেন চৌধুরীর বিরুদ্ধে প্লেট চুরির মামলা, বিএনপি নেতা ও সাবেক শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল চুরির মামলা, সম্প্রতি গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতা জাফরুল্লাহ চৌধুরীর নামে মাছ চুরির মামলা হয়েছে। রাজনৈতিক এসব মামলা নিয়ে বিশিষ্টজনেরা মনে করেন, এটা বাংলাদেশের রাজনীতির পুরনো সংস্কৃতি। নতুন কিছু নয়।

তারা বলছেন, রাজনৈতিক ব্যক্তিদের ইশারায় রাজনৈতিক বিবেচনায় বিরোধী রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে এসব মামলা হয়। এসব বন্ধে রাজনীতিবিদদেরই এগিয়ে আসতে হবে। তবে তাদের দাবি, কেউ যেন অযথা হয়রানির শিকার না হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এ ধরনের মামলা আমাদের দেশে নতুন কিছু না। এটা আমাদের দীর্ঘদিনের রাজনৈতিক সংস্কৃতির অংশ। এটা আগেও ছিল, এখনো আছে। হয়ত এখন এর প্রয়োগটা একটু বেশি।’

তিনি বলেন, ‘দেশবাসী যেটা আশা করে, মামলা বা অভিযোগ রাজনৈতিক বা অরাজনৈতিক যেকোনো ব্যক্তির বিরুদ্ধে হতে পারে। তবে প্রত্যেকে যেন সুষ্ঠু বিচার পায়। কাউকে যেন অযথা হয়রানি করা না হয়। সবাই যেন ন্যায়বিচার পায়। সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’

সাবের হোসেন চৌধুীর বিরুদ্ধে প্লেট চুরির মামলা বেশ আলোচিত। এছাড়াও মুনতাসির মামুন, শাহারিয়ার কবীর, সাংবাদিক এনামুল হকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহীতার মামলা ছিল। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকেও নিগৃহীত করা হয়েছিল। এ সরকারের গেল মেয়াদে সাবেক শিক্ষাপ্রতিমন্ত্রী এহসানুল হক মিলনের বিরুদ্ধে ভ্যানিটি ব্যাগ ও মোবাইল চুরির মামলাও বেশ আলোচিত। সম্প্রতি আজগুবি ও ভুতুড়ে মামলার সংখ্যাও বেড়েছে মাত্র।

এ ব্যাপারে বিএনপির আইন সম্পাদক অ্যাডভোকেট সানাউল্লা মিয়া বলেন, ‘রাজনৈতিক এমন মামলা সব আমলেই ছিল ঠিক, সেটা ছিল সংখ্যায় নগণ্য, তাও ঘটনা ঘটলে রাজনৈতিক নেতাদের সম্পৃক্ত করে মামলা দেয়া হয়েছে। কিন্তু এখন তো কোনো ঘটনা ছাড়াই মামলা হচ্ছে।’

সম্প্রতি যেসব মামলা হচ্ছে পূর্বাপরের হিসেব অনুযায়ী হয়ত এগুলোও রাজনৈতিক বিবেচনায় প্রত্যাহার হবে। কিন্তু এ প্রথা বন্ধের উপায় কী? এমন প্রশ্নের জবাবে আওয়ামী লীগের আইন সম্পাদক শ ম রেজাউল করিম বলেন, ‘রাজনীতিতে যতদিন সৃজনশীলতা ও সুস্থধারার সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠা না পাবে, তত দিন এ জাতীয় অনাকাঙ্খিত মামলা ও পাল্টা মামলা দায়ের ধারা থাকবে।’

শেয়ার করুন: