রাশিফল

পৈত্রিক সম্পতি বন্টনে ইসলাম ধর্মীয় আইন, জেনে নিন অবশ্যই কাজে লাগবে

পৈত্রিক সম্পতি বন্টনে- আমাদের সমাজে পৈত্রিক সম্পত্তি বন্টন নিয়ে পরিবারের মধ্যে প্রায় কলহ বিবাদ হতে দেখা যায়। বিশেষ করে ভাইয়েরা বোনদেন সম্পত্তির হিস্যা দিতে অনৈতিকতার আশ্রয় নিয়ে থাকেন। অনেক ক্ষেত্রে বোনদের বঞ্চিত করা হয় পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে।

এক্ষেত্রে অনেকের জ্ঞানের স্বল্পতা দেখা যায়। কিন্তু একজন মুসলমান হিসেবে আমাদের প্রত্যেকেরই জানা দরকার, পৈত্রিক সম্পত্তি বন্টনে ইসলামের নিয়ম সম্পর্কে। কর্পোরেট সংবাদের পাঠকদের জন্য তাই তুলে ধরা হলো পৈত্রিক সম্পত্তি বন্টনে ইসলামী নিয়মের বিস্তারিত তথ্য।

(১) মুসলিম উত্তরাধিকার আইনঃ

ইসলাম শব্দের অর্থ শান্তি এবং আত্নসমর্পণ। আল্লাহর ইচ্ছার উপর আত্নসমর্পণই ইসলাম এবং পৃথিবীতে শান্তি স্থাপনই ইসলামের লক্ষ্য। আরবি আসসালামা শব্দ থেকে ইসলাম ও মুসলিম শব্দের উৎপত্তি। ইসলামের বাণীতে বিশ্বাসী ব্যক্তি মুসলমান।

মুসলিম আইনের উৎসঃ মুসলিম আইনের উৎস হলো-

(ক) কোরআন: সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী ও রাসূল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর উপর নাযিলকৃত আল্লাহর বাণী বা ওহীর সমষ্টিই আল-কোরআন। আল-কোরআনে মোট ৬,৬৬৬টি আয়াত এবং ১১৪টি সুরা আছে।

সূরাসমূহ মক্কী ও মাদানী নামে দুই ভাগে বিভক্ত। মাদানী সূরাসমূহে ইসলামী উত্তরাধিকার আইন-এর নির্দেশাবলি ও উপদেশ বর্ণিত হয়েছে। মুসলিম উত্তরাধিকার আইনের মূল উৎস্য হচ্ছে আল-কোরআন।

(খ) সুন্নাহ: সুন্নাহ শব্দের অর্থ অনুসৃত পথ। হযরত মোহাম্মদ (সাঃ)-এর মুখ নিঃসৃত বাণী অর্থাৎ তাঁর কথা, কর্ম ও তাঁর সম্মুখে কৃত কোন কর্মের মৌন সম্মতিই হচ্ছে সুন্নাহ। সুন্নাহসমূহের পরিভাষাগত অর্থ হচ্ছে হাদিস। আরবিতে পূর্ব বর্ণিত তিনটি বিষয়কে হাদিস কওলী, ফেলী ও তাকরীরি বলা হয়।

রাসূল (সাঃ)-এর তিরোধানের পর হাদিস সংকলণ করা হয়। বিশুদ্ধ হাদিস গ্রন্থের সংখ্যা ৬টি-বুখারী শরীফ, মুসলিম শরীফ, ইবনে মাজা শরীফ, তিরমিযী শরীফ, ইবনে মাজা শরীফ, নাসায়ী শরীফ ও আবু দাউদ শরীফ। তাদেরকে একত্রে সিয়া সিত্তাহ বলা হয়।উত্তরাধিকার সূত্রে মুসলমানদের সম্পত্তি প্রাপ্তির বিষয়ে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে।

(গ) ইজমা: ইসলামী চিন্তবিদ ও দার্শনিকগণ কোন সময়ে একমত পোষণ করলে বা একমত হয়ে কোন সমস্যা সমাধানে উপনীত হলে তাকে ইজমা বলে। অর্থাৎ কোন বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের পর কোন সমস্যা সমাধানে ইজমার সাহায্য গ্রহণ করা যায়। ইজমার মাধ্যমে সম্পত্তি নিষ্পত্তির নজির রয়েছে।

(ঘ) কিয়াস: কিয়াস অর্থ হচ্ছে আংশিক একমত হওয়া বা যুক্তিসংগত অনুমান করা। কোরআন, হাদিস, ইজমার পর কোন সমস্যার সমাধানে কিয়াসের সাহায্য গ্রহণ করা হয়।

মুসলিম আইনের প্রয়োগঃ

বাংলাদেশে সকল মুসলিম আইন কোর্ট কর্তৃক প্রয়োগ করা হয় না। ১৯৩৭ সালের শরিয়ত আইনের ২ ধারা অনুযায়ী যে ক্ষেত্রে পক্ষদ্বয় বা একপক্ষ মুসলিম তাদের জন্য কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে মুসলিম আইন প্রযোজ।

বিয়ে, দেনমোহর, তালাক, দান বা হেবা, অভিভাবকত্ব, ওয়াকফ, উইল, উত্তরাধিকার ও খোরপোশের ক্ষেত্রে মুসলমানদের জন্য মুসলিম আইন প্রযোজ্য। উল্লেখ্য যে, মুসলিম ফৌজদারি আইন এবং সাক্ষ্য আইন আমাদের দেশে মুসলমানদের জন্য প্রয়োগ করা হয় না।

অর্থাৎ উপরোক্ত বিষয়সমূহ ছাড়া অন্যান্য বিষয়ে মুসলমানসহ অন্যদের জন্য সাধারণ আইন প্রযোজ্য। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, বর্তমান বিবাহ বিচ্ছেদ এবং অভিভাবকত্বের বিষয়ে মুসলিম বিবাহ বিচ্ছেদ আইন ১৯৩৯, মেজরিটি এ্যাক্ট ১৮৭৫ এবং গার্জিয়ান ও ওয়ার্ডস এ্যাক্ট ১৮৯০ প্রয়োগ করা হচ্ছে। ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের উত্তরাধিকার, বিবাহ, তালাক, দেনমোহর ও খোরপোশের বিষয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধন করা হয়েছে।

কোরআনের সর্বমোট ৬৬৬৬টি আয়াত রয়েছে। তম্মধ্যে মাত্র ২০০টি আয়াত ইসলামী আইন সংক্রান্ত। আরো বিশ্লেষণ করে বলা যায়, ৮০টি আয়াতে উত্তরাধিকার, বিবাহ, বিবাহ বিচ্ছেদ ইত্যাদি সংক্রান্ত হুকুম নিষেধ রয়েছে।

বন্টনযোগ্য সম্পত্তিঃ

কোন মুসলমানের মৃত্যুর পর তার রেখে যাওয়া সম্পত্তি থেকে (ক) দাফন-কাফন ও মৃত্যুশয্যাকালীন খরচ (খ) মৃত্যুর তিন মাস পূর্ব পর্যন্ত সময়ের সেবা-শুশ্রুষার খরচ (গ) ঋণ (ঘ) উইল বা উইলের খরচ, এবং (ঙ) প্রবেট বা সাকসেশন সার্টিফিকেট সংক্রান্ত ব্যয় পরিশোধের পর যে সম্পদ থাকে তা মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশগণের মধ্যে বন্টিত হবে।

মুসলিম উত্তরাধিকার আইন অনুযায়ী ওয়ারিশঃ

মুসলিম আইন অনুযায়ী ওয়ারিশ বা উত্তরাধিকার তিন শ্রেণিতে বিভক্ত।

(ক) শেয়ার আ অংশীদার (যাবিল ফুরুজ): কোরআনের যাদের অধিকার নির্ধারিত করে দেওয়া আছে, যেমন-কন্যা, মা,বাবা,দাদা,দাদী,স্বামী/স্ত্রী ইত্যাদি।

অংশীদার কে কেঃ ১২ জন অংশীদার রয়েছে তারা হচ্ছে-

১. পিতা

২. স্বামী

৩. স্ত্রী

৪. মাতা

৫. কন্যা

৬. দাদা

৭. দাদী

৮. ছেলের কন্যা

৯. বৈপিত্রের ভাই

১০.বৈপিত্রের বোন

১১. বোন।

এদের মধ্যে প্রথম ৫ জন সকল সম্পত্তি পাবে, তারা প্রাথমিক উত্তরাধিকার, পরবর্তী তিনজন (৬-৮) পূর্ববর্তী ৫ জনের বিকল্প।

সর্বশেষ চারজন (৯-১২) সন্তান ও পিতা থাকলে সম্পত্তি পাবে না (অংশীদারদের তালিকা)। প্রথম একজনের সম্পত্তি পাবার বিষয়ে পবিত্র কোরআন শরীফ সুস্পষ্ট নিদের্শনা আছে। ইসলামী চিন্তাবিদগণ কোরআন ও হাদিস পর্যলোচনাপূর্বক ফিকাস নীতি অনুসরণ করে তাদের তিনজনকে স্বীকৃতি দিয়েছেন।

শেয়ার করুন: