সূর্য ডুবলেই তাঁর নুইয়ে পড়া ছাদ আর ভাঙা দেওয়ালের ঘরের জানলায় টানানো থাকে নিখুঁত ভাবে ভাঁজ করা একটা সাদা কাগজ। আর কাকভোরে সুর্যটা যখন সবে উঠছে একটু একটু করে, তখন সেই সাদা কাগজটা ওই জানলার গায়ে আর টানানো থাকে না।
ভোরের আলো ফুটতেই ঘুম ভেঙে পড়শিরা চট করে দেখে নেন, ওই জানলায় সাদা কাগজটা টানানো আছে কি না। না থাকলে, তাঁরা নিশ্চিন্ত হন। ভাবেন, যাক, তা হলে ওই ঘরের ভেতরে আরও একটা রাত কাটিয়েছে একটি প্রাণ! কেউই চান না, ভোরে ঘুম থেকে উঠে জানলার গায়ে সাদা কাগজটা টানানো দেখতে! তিনি যে বেঁচে আছেন, আরও একটা রাত কাটিয়ে দিতে পেরেছেন, তা পড়শিদের জানাতে এটাই কৌশল ৮৭ বছর বয়সী কৌশল্যা দেবীর।
সন্ধ্যা হলেই নিজে হাতে একটা এ-ফোর সাইজের সাদা কাগজ নিখুঁত ভাবে ভাঁজ করেন কৌশল্যা দেবী। তার পর সেটা টানিয়ে দেন জানলার বাইরে। ভোরে ঘুম থেকে উঠেই ওই কাগজটা সরিয়ে নেন তিনি। পড়শিরা বুঝে যান, ভোরে যখন জানলার গায়ে সাদা কাগজটা নেই, তখন নিশ্চয়ই বেঁচে আছেন কৌশল্যা দেবী।
থাকেন যেখানে, সেই জায়গাটাকে বোধহয় অজ পাড়াগাঁ-ও বলা যায় না। এলাকাটা এতটাই দুর্গম। আর ততটাই পিছিয়ে পড়া। ভারতের হিমাচল প্রদেশের কাংরায় শাহপুর শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে জলদি গ্রামে থাকেন কৌশল্যা দেবী। একটাই ঘর। ছাদ নুইয়ে পড়েছে। ঘরের দেওয়ালগুলিও ভাঙা। আট বছর আগে দিনমজুর স্বামী মারা গিয়েছেন। তার তিন বছরের মধ্যেই তাঁকে একলা ঘরে ফেলে উধাও হয়ে গিয়েছে কৌশল্যা দেবীর ৪৭ বছরের ছেলে বুধি সিংহ। কোথায় গিয়েছেন কেউ জানেন না! ‘এখনও পড়শিদের কাছে ছেলের খোঁজখবর নিই। ওর জন্যই এখন আমার যত চিন্তা। আমার তিন কাল গিয়ে এক কালে ঠেকেছে’, বললেন কৌশল্যা দেবী।
গ্রামের পড়শিরাই ওই বৃদ্ধা আর তাঁর বাড়ির ছবি ও কাহিনী সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছিলেন। যদি কেউ তা দেখে কৌশল্যা দেবীকে অর্থ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন, সেই আশায়। তাতে কাজ হয়েছে। মুম্বইয়ের জাতীয় পুরস্কার জয়ী তথ্যচিত্র নির্মাতা বিবেক মোহন একটি শর্ট ফিল্ম বানাতে চলেছেন কৌশল্যা দেবীর কাহিনী নিয়ে। যার নাম দিয়েছেন, ‘দ্য বাস স্টপ’। যার শ্যুটিং হবে মুম্বাইয়ে।