লিফট

লিফটে আটকা পড়ে প্রথমে ইমারজেন্সি সার্ভিস ও পরে ৯৯৯ এ হয়রানি!

ঘটনাটি একাধারে ভয়ঙ্কর, শ্বাসরুদ্ধকর ও মারাত্মক। ঘটেছে গতকাল রবিবার রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে। লোডশেডিংয়ের মুহূর্তে আড়ং মার্কেটের লিফটে আটকা পরেন পাঁচজন নারী-পুরুষ। উদ্ধারের আবেদন জানিয়ে প্রথমে ইমারজেন্সি সার্ভিস ও পরে ৯৯৯ এর হয়রানির শিকার হয়ে দীর্ঘ দুই ঘণ্টায় সীমাহীন উদ্বেগ-উৎকণ্ঠায় কেটেছে তাদের।

হয়রানির শিকার পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে তিনজনের নাম জানা গেছে। তারা হলেন- শুভ্রা কর, সিক্তা কর ও শাকিল অরণ্য। ঘটনার পর থানায় অভিযোগ দায়ের করে বাসায় ফিরে ফেসবুকে তিনি লিফটে আটক হওয়া ও হয়রানির শিকার হওয়ার বর্ণনা তুলে ধরেন। পাঠকদের জন্য তার স্ট্যাটাসটি তুলে ধরছি-

“রাত সোয়া ৯ টার দিকে আমি, Shikta, Shakil ধানমন্ডি-১ এর হাসপাতাল থেকে বের হয়ে কফি খাওয়ার জন্য সায়েন্স ল্যাব মোড় এর আড়ংয়ের উপরে ফিফথ ফ্লোরের দুয়ারীতে যাই। সেখানে কফি খেয়ে ১০টার একটু পরে বের হই।

আমরা ছাড়া তখন আর দুইজন ছিল ওখানে। আমরা ৫ জন একসাথেই বের হয়ে লিফটে উঠি। ফিফথ ফ্লোর থেকে লিফটে উঠার পর কিছুক্ষণের মধ্যেই ইলেক্ট্রিসিটি চলে যায় এবং লিফটটি ফোর্থ ফ্লোর ও থার্ড ফ্লোরের মাঝামাঝি এসে বন্ধ হয়ে যায়।

লিফট বন্ধ হবার সাথে সাথে আমাদের রিয়েকশন ছিল যে এখনি জেনারেটর ছাড়া হবে এবং লিফট চলতে শুরু করবে। কিন্তু জেনারেটরের আওয়াজ পাবার পরেও যখন দেখা গেলো লিফট চলছে না, তখন আমরা লিফটের ভেতরে স্টিকার লাগানো ইমারজেন্সি সার্ভিসম্যানের নম্বরে ফোন দেই।

প্রথমজনকে ফোন দেয়ার পর তিনি জানান, তিনি এখন ডিউটিতে নেই এবং তৃতীয়জনকে ফোন দিতে বলেন। তৃতীয়জনকে ফোন দেয়ার পর তিনি ‘দেখছি’ বলে ফোন রেখে দেন।

এরপর আড়ংয়ের নম্বরে ও ওখানে গ্রামীণ ইউনিকলো’র নম্বরে ফোন দেই। কিন্তু তারা কেউ কোনও সদুত্তর দিতে পারে না। আমাদের সাথে অন্য যে ভাইয়া আপু ছিলেন, তারা তাদের ড্রাইভারকে ফোন করে সিকিউরিটিকে ইনফর্ম করতে বলেন।

কিন্তু তাতেও কোন কাজ হচ্ছে না দেখে আমরা ৯৯৯ এ ফোন দেই। সেখান থেকে ফায়ার ব্রিগেডের সাথে কথা বলা হয়। তারা বলেন, তারা দেখছেন কী করা যায়। এরপর আমরা আশা নিয়ে বসে থাকি যে ফায়ার ব্রিগেড যেহেতু কাছেই আছে, দ্রুতই চলে আসবে অথবা অন্য কোনও উপায় হবে এবং শীঘ্রই আমরা মুক্তি পেতে যাচ্ছি।

এর মধ্যে ওই ভাইয়া-আপু তাদের ড্রাইভারের সাথে কথা বলেন এবং জানতে পারেন যে লিফটের সাথে জেনারেটরের কানেকশন নেই। শুধু আড়ংয়ের শোরুমের ভেতরে সার্ভিস আছে।

আর যিনি বিল্ডিংয়ের সুপারভাইজার, তিনি লিফটসহ যাবতীয় সকল চাবি নিয়ে বাড়ি চলে গেছেন তাকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। ইলেকট্রিসিটি না আসা পর্যন্ত এই সমস্যার সমাধান সম্ভব নয় বলেও নিচ থেকে জানানো হয়।

আমরা তখন একমাত্র আশা ফায়ার ব্রিগেড এর জন্য অপেক্ষা করতে থাকি কিন্তু আধা ঘন্টা হয়ে যাওয়ার পরেও যখন কোনও সমাধান হচ্ছিল না এবং সাফোকেশন বাড়ছিল। We got really scared!

আর তখনই আমি ফেসবুকে হেল্প চেয়ে পোস্ট দেই যে যদি কেউ কোনভাবে হেল্প করতে পারেন। কারণ আমার হার্টের সমস্যার কারণে এরকম সাফোকেশনে আমার অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছিল।

যাই হোক, এরপর সাথে থাকা ঐ ভাইয়া ইলেক্ট্রিক বোর্ডের নাম্বার ম্যানেজ করে সেখানে ফোন দেন। তারা বলে, ধানমন্ডি শাখায় ফোন দিতে। শাকিল ধানমন্ডি শাখায় ফোন করার পর সেখান থেকে আবার বলা হয়, এটা তাদের আওতায় না, আজিমপুর শাখায় ফোন দিতে। আজিমপুর শাখায় ফোন করার পর তারা বলে্‌ এটা তাদের আওতায় না, জিগাতলা শাখায় ফোন দিতে।

ততক্ষণে আমাদের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে গেছে। শাকিল ওনাকে বলে যে ভাই আমরা একজনের পর একজনকে ফোন করে যাচ্ছি আর সবাই বলছেন আরেকজনকে ফোন দিতে। কিন্তু কেউ উদ্ধার করছে না, কোনও সমাধাও দিচ্ছে না।

আমরা আর কতজনকে ফোন করবো? তো এই কথায় হয়তো উনার মায়া হয় এবং উনি বলেন যে জিগাতলা অফিসে ফোন দিয়ে দেখতে। যদি সমাধান না হয় তাহলে উনি চেষ্টা করবেন।

এরপর আমরা জিগাতলা শাখায় ফোন দেই। কিন্তু কেউ ফোন ধরে না। এর মধ্যে আজিমপুর শাখার ব্যক্তি আবারও ফোন দেন এবং জানতে চান সমাধান হয়েছে কি-না। হয়নি শুনে তিনি বলেন, তিনি ব্যাপারটা দেখছেন। আরো ১০ মিনিট সময় লাগতে পারে। আমাদের কাছে তখন ১০ মিনিট মানে অনেক সময়।

এর মধ্যে আমাদের ফোন পেয়ে নিচে আমাদের অনেক মানুষ চলে এসেছে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচি শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কেউই কিছু করতে পারছিল না। এভাবে আরো ১০-১৫ মিনিট যায়।

ততক্ষণে কারও ফোনে চার্জ শেষ, কারো ব্যালেন্স শেষ, নেট শেষ। অবশেষে রাত ১১টায় আজিমপুর শাখার ওই ব্যক্তির বদৌলতে বিদ্যুৎ ফিরে আসে এবং লিফট চালু হয়।

আমরা যখন লিফট থেকে বের হই, তখন ফায়ার ব্রিগেড এসে মাত্র পৌঁছায়। ফায়ার ব্রিগেডের কাছে পরিস্থিতি সব খুলে বলার পর উনারা সিকিউরিটি ইনচার্জকে জিজ্ঞাসাবাদ করেন।

কেন লিফটের সাথে জেনারেটরের কানেকশন নেই? কেন বিল্ডিংয়ের সকল কর্মী, গ্রাহক চলে যাওয়ার আগেই বিল্ডিংয়ের সুপারভাইজার চাবি নিয়ে বাড়ি চলে গেলো? ইত্যাদি।

আজ ভাগ্য ভালো যে আমাদের মধ্যে কোনও অ্যাজমার পেশেন্ট কিংবা বয়স্ক বা শিশু বা গুরুতর অসুস্থ কেউ ছিলেন না। নইলে পরিস্থিতি আরো ভয়ংকর হতে পারতো।

একটা এতো বড় মার্কেট আর এতো ঝাঁ চকচকে শোরুম অথচ ইমারজেন্সি সিচুয়েশনে কোনও ফিডব্যাক নেই, লিফটের সাথে জেনারেটরের কানেকশন নেই! আজকে যেকোনও কিছুই তো ঘটতে পারতো!”

ভুক্তভোগী তার ফেসবুকে আরও জানান, ধানমন্ডি মডেল থানায় এ ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ (জিডি নম্বর ৬৫৫, ১৩/১০/২০১৮) দায়ের করেছেন। এর তদন্তের দায়িত্বে আছেন এস আই হাশেম আলী।

শেয়ার করুন: