তুলসি

কম করে ৬০ বছর সুস্থভাবে বাঁচতে চান? এই পাতা খান

১. লিভারের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়: সম্প্রতি প্রকাশিত একটি স্টাডি অনুসারে নিয়মিত তুলসি পাতার রস খাওয়া শুরু করলে শরীরে “হেপাটোপ্রোটেকটিভ প্রপাটিজ” এর মাত্রা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে, যার প্রভাবে লিভারের ক্ষমতা এতটা বেড়ে যায় যে শরীরের এই অঙ্গটির কোনও ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন কমে, তেমনি কোনও ধরনের লিভারের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও দূর হয়। তাই তো বলি বন্ধু, দীর্ঘদিন যদি লিভারকে চাঙ্গা রাখতে হয়, তাহলে রোজের ডায়াটে তুলসি পাতার রসকে অন্তর্ভুক্ত করতে ভুলবেন না যেন!

২. ওজন নিয়ন্ত্রণে চলে আসে: একেবারে ঠিক শুনেছেন! বাস্তবিকই ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে তুলসি পাতার কোনও বিকল্প নেই বললেই চলে। এক্ষেত্রে প্রতিদিন এক কাপ জলে পরিমাণ মতো তুলসি পাতা ফেলে পান করতে হবে। তাহলেই দেখবেন কেল্লা ফতে! আসলে তুলসি পাতার অন্দরে উপস্থিত বেশ কিছু উপাদান শরীরে প্রবেশ করা মাত্র হজম ক্ষমতার এত মাত্রায় উন্নতি ঘটায় যে দেহের ইতি-উতি মেদ জমার কোনও সুযোগই থাকে না।

৩. কিডনিতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা কমে: তুলসি পতায় রয়েছে প্রচুর মাত্রায় অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কিডনির কর্মক্ষমতা বাড়িয়ে সেখানে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা কমায়। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন যদি মধু দিয়ে তৈরি চুলসি পাতার রস খাওয়া যায়, তাহলে কিডনি স্টোন গলে তো যায়ই, সেই সঙ্গে শরীর থেকে তা বেরিয়েও যায়। প্রসঙ্গত, তুলসি পাতায় যে ডিটক্সিফাইং এজেন্ট রয়েছে তা শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়তে দেয় না। ফেল কিডিনতে স্টোন হওয়ার আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায়।

৪. রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সুগারের সবথেকে বড় যম। আর এই উপাদানটি বিপুল পরিমাণে রয়েছে তুলসি পাতায়। তাই তো প্রতিদিন সকালে খালি পেটে কয়েকটি তুলসি পাতা যদি চেবানো যায়, তাহলে রক্তে শর্করার মাত্রা দ্রুত কমতে শুরু করে। তবে এক সঙ্গে অনেক চুলসি পাতা খেয়ে নিলে কিন্তু হঠাৎ করে শর্করারা মাত্রা কমে গিয়ে অন্য় বিপদ হতে পারে। তাই অল্প করে তুলসি পাতা খাওয়া উচিত।

৫. নানাবিধ পেটের রোগের চিকিৎসায় কাজে আসে: গত কয়েক বছরে আমাদের দেশ সহ সারা বিশ্বে গ্য়াসট্রিক প্রবলেম, আলসার, ব্লটিং প্রভৃতি রোগের প্রকোপ অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে। আর তুলসি পাতা এইসব রোগ সারাতে দারুন কাজে আসে। প্রতিদিন এক চামচ তুলসির জুসের সঙ্গে মধু মিশিয়ে খেলে নানা রকমের পেটের রোগ একেবারে দূরে পালায়।

৬. শরীরকে বিষ মুক্ত করে: প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ২-৩ টি তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকর উপাদান এবং টক্সিন শরীরের বাইরে বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর ভিতর থেকে চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

৭. ফুসফুসের কর্মক্ষমতা বাড়ে: বেশ কিছু গবেষণা অনুসারে তুলসি পাতায় উপস্থিত ক্যাম্পেইনে, ইগোয়েনাল এবং সিনেওল নামক উপাদান, ফুসফুস সংক্রান্ত রোগের প্রকোপ কমানোর পাশাপাশি লাং-এর কর্মক্ষমতা বাড়াতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। প্রসঙ্গত, ব্রঙ্কাইটিসের মতো রোগের চিকিৎসাতেও তুলসি পাতা দারুনভাবে সাহায্য করে থাকে।

৮. ব্রণর মতো ত্বকের রোগের প্রকোপ কমায়: তুলসি পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল এজেন্ট শরীরে প্রবেশ করার পর ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া এবং জীবাণুদের সঙ্গে সঙ্গে মেরে ফেলে। ফলে ব্রণর প্রকোপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে নানাবিধ সংক্রমণে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়। প্রসঙ্গত, ব্রণর চিকিৎসায় তুলসি পাতা খেতে পারেন অথবা সরাসরি মুখে পেস্ট বানিয়ে লাগাতেও পারেন। দুই ক্ষেত্রেই সমান উপকার পাওয়া যায়।

৯. মুখের দুর্গন্ধ দূর হয়: সকাল সকাল কয়েকটি তুলসি পাতা চিবিয়ে খেলে মুখের ভেতর জন্ম নেওয়া নানান ক্ষতিকর ব্য়াকটেরিয়া মারা যায়। ফলে মুখ থেকে আর বাজে গন্ধ বেরয় না। প্রসঙ্গত, দাঁতকে নানা জীবাণুর হাত থেকে বাঁচাতেও তুলসি পাতা দারুন কাজে দেয়।

১০. স্ট্রেস এবং মানসিক অবসাদের মতো সমস্যা দূরে পালায়: তুলসি পাতা খাওয়া মাত্র কর্টিজল হরমোনের ক্ষরণ কমে যেতে শুরু করে। ফলে স্ট্রেস লেভেলও কমতে শুরু করে। কারণ কর্টিজল হরমোনের সঙ্গে স্ট্রেসের সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। প্রসঙ্গত, ডিপ্রেশন বা মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমাতেও তুলসি পাতা দারুনভাবে সাহায্য করে। তাই তো এবার থেকে যখনই মনে হবে মানসিক চাপ হাতের বাইরে চলে যাচ্ছে, তখনই তুলসি পাতা খাওয়া শুরু করবেন। দেখবেন উপকার মিলবে।

১১. মাথা যন্ত্রণা কমে যায় নিমেষে: সিডেটিভ এবং ডিসইনফেকটেন্ট প্রপাটিজ থাকার কারণে তুলসি পাতা যে কোনও ধরনের মাথা যন্ত্রণা কমাতে দারুনভাবে সাহায্য করে। তাই আপনি যদি প্রায়শই সাইনাস বা মাইগ্রেনের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তাহলে কষ্ট কমাতে তুলসি পাতাকে কাজে লাগাতে পারেন।

১২. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: একাধিক কেস স্টাডিতে দেখা গেছে নিয়মিত তুলসি পাতা খাওয়ার অভ্যাস করলে অথবা তুলসি পাতার পেস্ট মুখে লাগালে রক্ত এত মাত্রায় পরিশুদ্ধ হয় যে স্কিন ইনফেকশনের আশঙ্কা কমে যায়। সেই সঙ্গে নানাবিধ ত্বকের রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনাও হ্রাস পায়। আসলে তুলসি পাতায় উপস্থিত অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল প্রপাটিজ এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

১৩. ক্যান্সারের মতো মারণ রোগ দূরে রাখে: তুলসি পাতায় উপস্থিত ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট শরীরের অন্দরে ক্যান্সার সেল যাতে কোনও ভাবেই জন্ম নিতে না পারে, সেদিকে খেয়াল রাখে। ফলে ক্যান্সার রোগ ধারে কাছে ঘেঁষার সুযোগই পায় না। প্রসঙ্গত, গবেষণায় দেখা গেছে তুলসি পাতা লাং, লিভার, ওরাল এবং স্কিন ক্যান্সারের প্রতিরোধে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে। আসলে ফাইটোনিউট্রেয়েন্টের পাশাপাশি তুলসি পাতার অন্দরে থাকা একাধিক অ্যান্টি-অক্সিডেন্টও এক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকে।

১৪. হার্ট চাঙ্গা হয়ে ওঠে: ইউজেনল নামে বিশেষ এক ধরনের অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে তুলসি পাতায়, যা রক্তচাপ এবং কোলেস্টরলের মাত্রাকে স্বাভাবিক রাখে। আর একথা তো সকলেরই জানা যে এই দুটি জিনিস নিয়ন্ত্রণে থাকলে হার্টের স্বাস্থ্য়ও ভালো থাকে। আপনি কি কোনও রকমের হার্টের রোগে ভুগছেন? তাহলে রোজ সকালে খালি পেটে কয়েকটি তুলসি পাতা চিবিয়ে খান। দেখবেন অল্প দিনেই সুস্থ হয়ে উঠবেন।

শেয়ার করুন: