কাঁচামরিচ-সর্ষে দিয়ে তেলাপিয়ার ঝাল, পেঁয়াজ-মরিচকুচি দিয়ে ভুনা কিংবা স্রেফ ঝোল। মাসে অন্তত কয়েকবার পাতে পড়ে না, এমন বাঙালি মেলা ভার। দামও তুলনামূলকভাবে কম। ডাক্তাররা বলেন, শরীরে প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ওমেগা ফ্যাটি অ্যাসিডের চাহিদা মেটাতে ছোট মাছের বিকল্প নেই। কিন্তু তেলাপিয়া মাছ থেকে সাবধান। কারণ, তেলাপিয়ায় ব্যাপক স্বাস্থ্যঝুঁকি রয়েছে।
তেলাপিয়া রান্না করা সহজ, কাঁটা বেশি থাকে না, খেতে সুস্বাদু হলেও পারলে এখনই খাওয়া বন্ধ করুন। না-হলে অ্যাজমা, করোনারি ডিজিজ, হাড় ক্ষয়ের মতো নানা রোগ, এমনকি ক্যান্সারের মতো মারণ রোগও অচিরেই বাসা বাঁধতে পারে শরীরে। বিশেষজ্ঞরা জানান, তেলাপিয়ায় ফ্যাটি এসিডের পরিমাণ অন্যসব মাছের তুলনায় কম।
ফলে মাছ হিসেবে তেলাপিয়া খাওয়া হলেও তা অন্য মাছের মতো উপকারি নয়। পাশাপাশি এর ক্ষতিকর দিকগুলোও বিদ্যমান। এ ছাড়া তেলাপিয়া মাছে রয়েছে উচ্চমাত্রায় অ্যারাচিডোনিক এসিড। যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েক ফরেস্ট ইউনিভার্সিটি স্কুল অব মেডিসিনের প্রফেসর ড. ফ্লয়েড চিলটন বলেছেন, ‘আপনার চিকিৎসক বা কার্ডিওলজিস্ট যদি বেশি করে মাছ খেতে বলে তাহলে আপনার উচ্চমাত্রায় ওমেগা-৩ রয়েছে এমন মাছ খেতে হবে। এখানে উচ্চমাত্রায় উদ্দীপনাময় বিকল্প বাদ দিতে হবে।’
তেলাপিয়ার মতো চাষের মাছগুলোতে ফ্যাটি এসিড ওমেগা-৩ ও ওমেগা-৬-এর ক্ষতিকর উপস্থিতি থাকে। এ থেকে মানবশরীরে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। প্রাকৃতিক জলাশয়ের মাছের চেয়ে চাষ করা মাছে ১০ গুণ বেশি ক্যান্সার সৃষ্টিকারী দূষিত পদার্থ থাকে। মূলত চাষ করা মাছের খাবারে এসব পদার্থ থাকে। চাষ করা তেলাপিয়ায় এসব উপাদান থাকতে পারে। তাই এগুলো খাওয়া ক্যান্সারের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে।
সাম্প্রতিক কিছু গবেষণায় পাওয়া যায়, চাষ করা তেলাপিয়ায় শরীরে প্রদাহ তৈরি হতে পারে। এসব প্রদাহের ফলে হৃদযন্ত্রের বিভিন্ন রোগ, আর্থাইটিস, অ্যাজমা হতে পারে। গবেষণায় এ-ও দেখা গেছে, হ্যামবার্গার খেয়ে শরীরে যে প্রদাহ তৈরি হয়, তার চেয়ে বেশি হতে পারে তেলাপিয়া খেলে। চাষ করা তেলাপিয়ায় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ডায়োক্সিন থাকতে পারে। এ ডায়োক্সিন মানবশরীরে দীর্ঘদিন পর্যন্ত চক্রাকারে ক্রিয়া করতে পারে। এতে মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হতে পারে।
একটি জলাশয়ে তেলাপিয়ার মতো মাছগুলো বিপুল পরিমাণে মাছ চাষ করা হয়। এসব মাছ রোগপ্রবণ। তাই এগুলোকে জিইয়ে রাখতে অ্যান্টিবায়োটিক ও কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। এ জাতীয় মাছ খেলে এ ক্ষতিকর উপাদানগুলো মানবদেহে প্রবেশ করতে পারে। এ থেকে হতে পারে প্রাণঘাতী রোগ। আমাদের দেশে তেলাপিয়া চাষ করার সময় চাষিরা সরাসরি মুরগির বিষ্ঠা কিংবা অন্য কোনো প্রাণীর বিষ্ঠা খেতে দেন।
অনেক মাছের খামারে তেলাপিয়া মাছ এ খাবার খেয়েই বড় হয়। এমনকি কোনো কোনো মুরগির খামার সরাসরি পুকুরের ওপরই তৈরি হয় যেন মুরগির বিষ্ঠা সরাসরি তেলাপিয়া মাছ খেতে পারে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরাসরি প্রাণীর বিষ্ঠা তেলাপিয়া মাছকে খাওয়ানো হলে তাতে উপস্থিত বিষাক্ত পদার্থ মানুষের দেহে প্রবেশ করার আশঙ্কা থাকে।
বিজ্ঞানীরা সম্প্রতি গবেষণায় তেলাপিয়া সম্পর্কে মারাত্মক তথ্য উদ্ঘাটন করেছেন। দেখা গিয়েছে, তেলাপিয়া মাছের থাকা উপাদান শরীরকে ধীরে ধীরে শেষ করে। এক কথায়, স্লো পয়জন। অর্থাৎ তেলাপিয়া খাচ্ছেন তো মৃত্যুর দিকে এগোচ্ছেন! এবার আপনিই সিদ্ধান্ত নিন।