চরিত্র বলতে মানুষের মাঝে বিদ্যমান কিছু দোষ বা গুণকে বুঝায়। আর এই দোষ-গুণ গড়ে ওঠে মানুষের জ্ঞান অর্জন, পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, আশেপাশের মানুষ ও বাস্তব অভিজ্ঞতার সমন্বয়ে। স্বাভাবিকভাবেই আমাদের উদ্দেশ্য থাকে নিজের বদ স্বভাবগুলো কমিয়ে ভালো গুণগুলোর বিকাশ ঘটানো।
নিজেকে গড়ে তোলার জন্য বিশেষভাবে খ্যাত ওয়েবসাইট ‘পিক দি ব্রেইন’ -এ প্রকাশিত শন গ্রিফফিটের নিবন্ধ ‘টিপস টু ইম্প্রুভ ক্যারেক্টার’ নিবন্ধে তুলে ধরা হয়েছে কীভাবে বাস্তবসম্মত উপায়ে নিজের চরিত্র আরও উন্নত করা যায়। পাঠকদের সুবিধার্থে নিবন্ধটির অনুবাদ তুলে ধরেছেন মেহেদী হাসান দ্বীপ।
১. জ্ঞান চর্চা: প্রথমেই যে জিনিসটা সবচেয়ে বেশি জরুরি, তা হলো জ্ঞান চর্চা। আপনাকে জানতে হবে, জানার আগ্রহ তৈরি করতে হবে। জ্ঞান অর্জনের কোনও বিকল্প নেই। আপনি যদি জ্ঞান চর্চা করেন, তাহলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন কোন কাজটি আপনার করা উচিত আর কোন কাজটি করা উচিত না। জ্ঞান মানুষের বিবেকবোধকে জাগ্রত করে।
২. নিজের সম্পর্কে জানা: নিজেকে জানা অনেক জরুরি। আপনি কোন দিক থেকে ভালো, কোন দোষগুলো আপনার মাঝে বিদ্যমান, আপনার দুর্বলতা, আপনার সবলতা এসব নিয়ে কয়েক মিনিট সময় দেয়া জরুরি। তাহলে আপনি আপনার দুর্বলতা বা দোষ নিয়ে কাজ করতে পারবেন এবং নিজেকে সংশোধন করতে পারবেন। আর বিদ্যমান ভালো গুণগুলো আরও বিকশিত করতে পারবেন।
৩. আত্মনিয়ন্ত্রণ: নিজেকে সংযত রাখা অনেক জরুরি। এরিস্টটল এবং একুইনাসের মতে, মানুষের মাঝে সাতটি আবেগ রয়েছে। ভালোবাসা-ঘৃণা, আকাঙ্ক্ষা-ভয়, আনন্দ-দুঃখ এবং রাগ। বেশি দুঃখে একেবারে ভেঙে পড়া যেমন ক্ষতির কারণ, আবার বেশি আনন্দে বাধা ভাঙা উচ্ছ্বাস আপনাকে বিপথগামী করতে পারে। সবকিছুরই একটি নিয়ন্ত্রণ থাকা জরুরি।
৪. আত্মতৃপ্তি: মানুষের জীবনে সুখ একটি আপেক্ষিক বিষয়, যার কোনও নির্দিষ্ট মাপকাঠি নেই। নিজের যা আছে, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকা জরুরি। ছোট ছোট বিষয়কে উপভোগ করা, আনন্দ খুঁজে পাওয়া দরকার। অন্যের সাথে তুলনা করা দোষের কিছু নয়। তবে এটাও আপনাকে মনে রাখতে হবে তার এবং আপনার পরিবেশ, সুযোগ-সুবিধা, আর্থিক সামর্থ্য অনেক কিছুই আলাদা। তবে ভালো কিছু পেলে তা অবশ্যই অনুসরণ করা উচিত।
৫. মানুষের প্রতি যত্নবান হওয়া: কখনও কখনও আপনার একটু হাসি কারো দিন ভালো করে দিতে পারে। এক সাথে খাওয়া, কারও দুঃসময়ে পাশে থাকা মানুষের মানবিক গুণাবলিরই বহিঃপ্রকাশ। বিনিময়ে কিছু পাওয়ার আশা নিয়ে নয়, নিঃস্বার্থভাবে মনের ভালোলাগা থেকে মানুষকে সহযোগিতা করা উচিত।
৬. ভালো সঙ্গী গড়ে তুলুন: জীবনে সঙ্গী নির্বাচন অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বন্ধু বা আশেপাশের মানুষের দ্বারা আমরা ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, খারাপ বন্ধুদের হাত ধরেই মানুষ নেশা, সহিংসতা, দুশ্চরিত্রমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ে। এমন সঙ্গী নির্বাচন করুন, যাদের সংস্পর্শে আপনি ভালো কিছু শিখতে পারবেন।
৭. কৃতজ্ঞতাবোধ: আমরা কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নই। আমাদের জীবনে অনেক মানুষেরই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অবদান রয়েছে। যে আপনার জন্য ভালো কিছু করেছে, তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকা জরুরি। রোমান দার্শনিক সিসেরোর মতে, কৃতজ্ঞতা বোধ মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় গুণ। শুধু তাই নয় বরং এটি অন্য অনেক মহৎ গুণাবলির জন্ম দেয়।
৮. ধৈর্য ধারণ: সুন্দর চরিত্র গঠন একটি দীর্ঘমেয়াদী বিষয় এবং বারংবার চেষ্টার ফলেই মানুষ একটি উত্তম চরিত্রবান মানুষ হয়ে উঠতে পারে। আর পারফেকশন বা পরিপূর্ণতা আশা করা উচিত নয়। যতটা সম্ভব চেষ্টা করে যেতে হবে।
৯. একটি পর্যালোচনা করুন: নিজের কোনও কোনও বদ অভ্যাস দূর হলো, কোনও কোনও ভালো গুণ অর্জন করলেন, কোন জায়গাটা নিয়ে আরও কাজ করা উচিৎ এটি নিয়ে সপ্তাহ শেষে কয়েক মিনিট বের করে একটি পর্যালোচনা করুন। তাহলে আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন আপনার কতটা উন্নতি হয়েছে।
১০. উত্তম চরিত্রের গুরুত্ব অনুভব করা: আমরা সাধারণত টাকা বা বিলাসবহুলতা দিয়ে যাচাই করি কে কতটা সফল বা সুখী। আর এ জন্যই আমরা অনেককেই দেখতে পাই যারা নিজ কাজে সফল তবে তাদের চরিত্র ভালো নয়। অনেকেই অনেক ধনী। তবে তারা নানা রকম অনৈতিক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। আমাদের মনে রাখতে হবে টাকা-পয়সা, ক্যারিয়ারে সফলতার চেয়ে মানুষের উত্তম চরিত্র কোনও অংশেই কম নয়।