সন্তান

মায়ের বুকে দুধ না এলে কী করবেন?

সন্তান ডেলিভারির পর আমরা যখন মাকে দেখতে যাই, মায়ের প্রথম অভিযোগ থাকে, বাচ্চা দুধ পাচ্ছে না। সত্যিকার অর্থে ব্যাপারটা কতোটুকু সত্য তা আগে দেখতে হবে। স্তন পরীক্ষা করে দেখতে হবে তার বুকে দুধ আসছে কি না। যদি দুধ না আসে তাহলে ২৪ থেকে ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত আমরা অপেক্ষা করতে পারি। সেক্ষেত্রে প্রথমে যে দুধটা আসে ( শাল দুধ) পরিমাণে যদিও কম বাচ্চার জন্য যথেষ্ট। তখন আমরা মাকে কাউন্সিলিং করি বাচ্চাকে বারে বারে দুধ খাওয়ান।

যদিও বা দুধ এখন কম আসছে তবে এটা নবজাতকের জন্য যথেষ্ট। তবে দেখা যাবে তিনদিনের মধ্যে এতো দুধ আসছে, বাচ্চা হয়তো একটা স্তন চুষছে, অন্য স্তন কনজাস্টেড হয়ে যাচ্ছে। এই ব্যাপারটাতে কাউন্সিলিং খুব গুরুত্বপূর্ণ। দ্বিতীয়ত, মাকে শিখিয়ে দেওয়া বাচ্চাকে সে কীভাবে খাওয়াবে। যেটাকে আমরা বলি পজিশন এবং এটাচমেন্ট। বাচ্চা কীভাবে কোলে নিবে, স্তন বাচ্চার মুখে কতোটুকু থাকবে, বাচ্চা কীভাবে চুষছে, কোন শব্দ হচ্ছে কি না এই বিষয়গুলো দেখা খুব গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথম যারা মা হন তারা এ বিষয়গুলো বুঝেন না এবং পারেন না। না পারার কারণে হয়তো বাচ্চাকে বারবার স্তন দিলেও বাচ্চা দুধ পায় না। বাচ্চা কয়েকবার হয়তো চেষ্টা করলো। কিন্তু যখন দুধ পেলোনা তখন সে বিরক্ত হয়ে মুখ ঘুরিয়ে নেয়, কান্না করে। তখন মা বিরক্ত হয়ে ভাবে, বাচ্চা দুধ পাচ্ছে না। তাই দেখার বিষয় বাচ্চা ঠিক মতো কোলে নেওয়া হলো কি না, স্তন দেওয়ার স্টাইল ঠিক আছে কি না, বাচ্চা স্তন মুখে ঠিকভাবে নিতে পেরেছে কি না।

আমরা সব মাকে কাউন্সিলিং করি, অবশ্যই আপনি আপনার বাচ্চাকে ছয় মাস পর্যন্ত বুকের দুধ খাওয়াবেন। এক ফোঁটা পানিও না। আমাদের দেশে সাধারণত বাচ্চার দাদী নানীরা অস্থির হয়ে যায়। তারা বলে বাচ্চা কান্না করছে, বিরক্ত করছে। তার মানে সারা রাত সে বুকের দুধ পায়নি। এখনই তাকে বাহির থেকে বাইরের দুধ (বিশেষ করে কৌটার দুধ) খাওয়াতে হবে। বা ফিডার স্টার্ট করতে হবে। এক্ষেত্রে তাদেরকে কাউন্সিলিং করা এবং ধৈর্য্য ধরতে বলা, যে দুধ চলে আসবে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে বাচ্চা এক দিনে কয়বার প্রসাব-পায়খানা করছে তা দেখা। বাচ্চা যদি এক দিনে দুই থেকে তিনবার প্রসাব করে, অন্তত একবার পায়খানা করে তাহলে বুঝতে হবে বাচ্চা ঠিক মতো দুধ পাচ্ছে। এটা নিয়ে এতো অস্থির হওয়ার কিছু নাই। প্রথম প্রথম বাচ্চা ঠিক পজিশনে স্তন মুখে নিতে না পারার কারণে মায়েদের ক্র্যাক নিপল হয়। অর্থাৎ নিপল ফেটে যায়। তখন মা ওই ব্রেস্টে বাচ্চাকে এ্যালাউ করতে চায় না।

এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমরা মাকে বলি, আপনি একটা ব্রেস্ট পাম্প দিয়ে দুধ পাম্প করে পাত্রে নিয়ে চামচ দিয়ে বাচ্চাকে খাওয়াবেন। কিন্তু ফিডার না। ফিডার এমন একটা জিনিস, ফিডারে দুধ নিলে হালকা প্রেসারেই ফিডারের নিপলে অনেক দুধ চলে আসে। এর ফলে শিশু খুব আরামে দুধটা খেতে পারে। কিন্তু মায়ের স্তন তাকে টেনে বের করতে হয়। বাচ্চাকে বেশি পরিশ্রম করতে হয়। কিন্তু ফিডারে অল্প চাপে বেশি দুধ পায়। কাজেই বাচ্চা যদি একবার ফিডার খেয়ে আরাম পেয়ে যায়, তাহলে সে আর মায়ের স্তন মুখে নিতে চায় না।

এজন্য দরকার তাকে কাউন্সিলিং করা ও বারে বারে খাওয়ানোর চেষ্টা করা। এবং বারে বারে মাকে দেখিয়ে দেওয়ার দরকার কীভাবে স্তন বাচ্চার মুখে দিবে। পাশাপাশি মায়ের ডায়েটে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। মাকে প্রচুর পরিমাণ লিক্যুইড খেতে হবে। শাকসবজি খেতে হবে। কালিজিরার ভর্তা খেতে পারে। ঝোল করে তরকারী খেলেও উপকার পাওয়া যায়। আবার বাচ্চাকে যখন ফিডিং দিবে তার আগে যদি মা তরল কিছু খেয়ে নেয়, যেমন- এক গ্লাস দুধ খেয়ে নিল, জ্যুস খেয়ে নিল, তাহলেও বাচ্চা ভাল ব্রেস্ট মিল্ক পায়।

শেয়ার করুন: