দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবছেন? আইন কি বলে আগে জানুন

জীবনের উত্থান পতনে যদি আবার বিয়ে করার প্রয়োজন হয় তখন কি চাইলেই আপনি দ্বিতীয় বিয়ে করতে পারবেন? উত্তর হচ্ছে, আইন অনুযায়ী এক স্ত্রী জীবিত থাকা অবস্থায় আরেকটি বিয়ে করা যাবে না।

তবে কারও যদি স্ত্রী বর্তমান থাকাকালে আরেকটি বিয়ে করার প্রয়োজন হয়, তাহলে তাঁকে তাঁর বর্তমান স্ত্রী যে এলাকায় বসবাস করছেন, সেই এলাকার সালিসি পরিষদের কাছে আরেকটি বিয়ে করার অনুমতি চেয়ে আবেদন করতে হবে।

এ ক্ষেত্রে তাঁকে প্রস্তাবিত বিয়ের কারণ এবং এই বিয়েতে বর্তমান স্ত্রীর সম্মতি রয়েছে কি না, তা উল্লেখ করতে হবে। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়র দুই পক্ষের প্রতিনিধি নিয়ে সালিসি পরিষদ গঠন করে থাকেন।

সালিসি পরিষদের লিখিত অনুমতি নিয়েই কেবল দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে। সালিসি পরিষদে যদি বর্তমান স্ত্রী অনুমতি প্রদান না করেন, তাহলে কোনোভাবেই দ্বিতীয় বিয়ে করা যাবে না। আবার সালিসি পরিষদকেও নির্দিষ্ট কিছু বিষয় বিবেচনা করে দ্বিতীয় বিয়ের অনুমতি প্রদান করতে হবে।

যেমন: ১. বর্তমান স্ত্রীর বন্ধ্যত্ব, ২. শারীরিক মারাত্মক দুর্বলতা, ৩. দাম্পত্যজীবন সম্পর্কিত শারীরিক অযোগ্যতা, ৪. মানসিকভাবে অসুস্থতা ইত্যাদি। কোনো কারণে যদি স্ত্রী পৃথক থাকতে চান বা আলাদা বসবাস করেন সে ক্ষেত্রেও স্ত্রীর অনুমতি নিতে হবে। তবে কোনো কারণে যদি স্ত্রী ঘরে আর না ফেরেন এবং দ্বিতীয়বার বিয়ে করার অনুমতিও প্রদান না করেন, তাহলে আইনসম্মতভাবে তালাক কার্যকর করার পরই পুনরায় বিয়ে করতে হবে।

শাস্তি

যে ব্যক্তি সালিসি পরিষদের অনুমতি ছাড়া আরেকটি বিয়ে করেন, তিনি ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের ৬ (৫) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ করবেন।

আদালতে দোষী প্রমাণিত হলে দোষী ব্যক্তিকে এক বছর পর্যন্ত বিনা শ্রম কারাদণ্ড বা ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানা অথবা উভয় দণ্ড হতে পারে। এ জন্য প্রথম স্ত্রীকে স্বামীর বিরুদ্ধে উপযুক্ত প্রমাণ দেখিয়ে ফৌজদারি আদালতে মামলা করতে হবে। আবার দ্বিতীয় স্ত্রীর কাছে যদি আগের বিয়ের কথা গোপন করেন তাহলেও দণ্ডবিধি অনুযায়ী কঠিন শাস্তি পেতে হবে।

স্ত্রীকে অধিকারবঞ্চিত করা যাবে না

স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করলেও প্রথম স্ত্রী সম্পূর্ণ মোহরানার টাকা দাবি করতে পারেন। স্বামী সম্পূর্ণ মোহরানার টাকা পরিশোধ করতে আইনত বাধ্য। বর্তমান স্ত্রীকে কাবিননামায় তালাকের ক্ষমতা দেওয়া হলে সরাসরি নতুবা আদালতে মামলা করে বিবাহবিচ্ছেদ করতে পারেন।

দ্বিতীয় বিয়ে করার কারণে প্রথম স্ত্রী আলাদা বসবাস করেও ভরণপোষণ পাবেন। কোনোভাবেই স্বামীর ভবিষ্যৎ উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্য সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত হবেন না। আবার দ্বিতীয় বিয়ে করে ফেললে দ্বিতীয় স্ত্রীকেও তাঁর মোহরানাসহ যাবতীয় আইনি অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যাবে না।

উভয় পক্ষের সন্তানসন্ততিকেও প্রাপ্য ভরণপোষণ দিতে হবে। সব সন্তানই ভবিষ্যতে সমানভাবে উত্তরাধিকারীর সব অধিকার লাভ করবে। তবে মনে রাখতে হবে, প্রথম স্ত্রীর অনুমতি ছাড়া দ্বিতীয় বিয়ে করলে দ্বিতীয় বিয়েটি অবৈধ হয়ে যাবে না। কিন্তু স্বামীকে অবশ্যই শাস্তি পেতে হবে।

দাম্পত্য জীবনে সুখী থাকার রহস্য

সুখী দম্পতিরা তাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট প্রতিটি মুহূর্ত দুজন মিলে উপভোগ করেন। ঝগড়াকে তারা প্রাধান্য দেয়না বরং তাদের ঝগড়ার পরের ভালোবাসা বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

যখন একজন ভালো মনের মানুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হবেন, তখন নিজেকে সুখী হিসেবে ভাবতে শুরু করবেন। তবুও মানুষ কারণে অকারণে ক্ষুদ্র কারণে একে অপরের সঙ্গে ঝামেলা করে বসে।

পছন্দ-অপছন্দ নিয়ে কথা বলুন:

এটি সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে আপনি আপনার পছন্দ অপছন্দ অন্যের মধ্যে দেখতে চাচ্ছেন কি না? নব-বিবাহিত দম্পতির মধ্যে এই ব্যাপারগুলো নিয়ে প্রায়শই খুঁটিনাটি লেগে থাকে। মনে রাখুন আপনি সম্পূর্ণ একজন আলাদা মানুষ।

আপনার যেমন পছন্দ আছে তেমনই আপনার সঙ্গী বা সঙ্গিনীরও হয়তো সমান ভাবে পছন্দ অপছন্দের ব্যাপার আছে। আর যদি আপনার সঙ্গীর করা কাজ আপনার একান্তই অপছন্দের হয় তবে তার সঙ্গে কোনো কফিশপ বা তার কোনো প্রিয় জায়গায় বসে যুক্তি দিয়ে বুঝিয়ে বলুন।

একে অপরের হাতে হাত রেখে হাঁটুন :

একে অন্যের হাতে হাত রেখে হাঁটা উষ্ণতা প্রকাশ করে। আপনি তাকে কতটা আগলে রাখছেন তা প্রকাশ পায় এর মাধ্যমে। আপনার সঙ্গী যখন রিক্সায় উঠছে বা রাস্তা পার হচ্ছে তার হাত ধরে রাখুন।

এছাড়া বাড়িতে কাজ করার সময় তার হাতে হাত রেখে জানতে পারেন- তার কোনো সহযোগিতা লাগবে কিনা? এতে সে প্রচণ্ড সাহস খুঁজে পাবে। আপনাকে তার আশ্রয় মনে করা মানুষটি আরো নতুন করে শক্তি পাবে নিজের জন্য, আপনাকে ভালোবাসার জন্য।

বিশ্বাস রাখুন :

একটা সম্পর্কের ভিত্তি হচ্ছে বিশ্বাস, আপনি যদি আপনার সঙ্গীকে বিশ্বাস না করেন তবে সুখি দম্পতি তো দূরের কথা আপনি আপনার জীবনটা অনুভব পর্যন্ত করতে পারবেন না।

এক সাথে ঘুমোতে যাওয়া :

যদিও এটি আপনার কাছে শুনতে নিতান্তই সাধারণ মনে হবে তবে এর কার্যকারিতা রয়েছে। যখন আপনার সঙ্গীর সঙ্গে একই সময় ঘুমোতে যাবেন সেই সময়ে আপনাদের মধ্যে কথাবার্তা হবে। সারাদিন কে কী করলো তা জানা যাবে।

আগামীকাল কী করা যায় বা কী করতে চাচ্ছেন তা নিয়েও কথা বলা যায়। এতে একজন আরেকজন সম্পর্কে জানতে পারে। আর এটি চাকরিজীবীদের জন্য খুব উপকারী। হয়তো দুজনেই কাজের জন্য বাইরে থাকার কারণে কথা তেমন বলা হয়না। তাই আপনার মনে জমে থাকা কথাগুলো সেই সময় তার সাথে ভাগাভাগি করে নিন।

ক্ষমা করতে শিখুন :

আর ভুল ভ্রান্তি সবার মাঝেই আছে। আপনি নিজেও জানেন আপনার নিজের অনেক সমস্যা আছে। তাই আপনার সঙ্গীর করা কাজকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখুন। দেখবেন আপনার সঙ্গীও আপনাকে একইভাবে দেখছে।

ক্ষমা করার শক্তি অর্জন করা উচিত। একদিনেই কোনো সম্পর্ক গড়ে ওঠে না। কোনো ভুল হলে প্রথমেই সে ভুল ভেঙ্গে দেয়া উচিত। কারণ ভুল বোঝাবুঝি দুজনের মধ্যে দূরত্ব তৈরি করে।

আলিঙ্গন করুন :

আপনার সারা দিনের কাজ হয়তো আপনাকে আপনার নিজের থেকেও একটু ছুটি দেয়না। আর আপনার স্বামী বা স্ত্রীর জন্য সময় বের করা হয়তো খুব কঠিন। তাই আপনি যখন বাড়ি ফিরবেন ঘরে ঢুকে তাকে আলিঙ্গন করুন, সারাদিন তার কেমন কাটলো জিজ্ঞেস করে নিন। দেখবেন আপনার নিজেকে খুব সুখী মানুষ বলে মনে হতে শুরু করবে।

ধৈর্য :

দাম্পত্য জীবনের পুরো সময়টাই হানিমুন মুডে থাকতে পারবো…এটা ভাবাটা বোকামি এবং এটা ভাবলে বড় ধরনের ধাক্কা খেতেই হবে। জীবনে দুঃসময় আসবে, জীবনের বিভিন্ন পর্যায়গুলো পার হতে হবে। তাই এমন অবস্থায় ভেঙ্গে পরবেন না।

ধৈর্য ধরে এগিয়ে যেতে পারলেই সংসার সুখের হবে। সুখী বিবাহিত জীবন ধরে রাখা বা ভালোবাসা অটুট রাখার ক্ষেত্রে যে বিষয়গুলো মেনে চলার প্রতি উৎসাহ দেন বিশেষজ্ঞরা।

সেগুলো হলো:

# একে অপরের জন্য ছোট ছোট কাজে সাহায্য করা। এতে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসা বোধ অটুট থাকবে। যেমন, চা তৈরি করে দেয়া, বাচ্চাকে সাহায্য করা, সংসারের কাজে একে অপরকে সাহায্য করা।

# প্রতি সপ্তাহে অন্তত দু’ঘণ্টা করে আপনার চিন্তা-ভাবনাগুলো আদান-প্রদান করতে পারেন। টানা দু’ঘণ্টা সময় বের করতে না পারলে প্রতিদিন অন্তত অবসর সময়টুকো একত্রে বসে কথা বলুন। সব সময় যে প্রয়োজনীয় কথা বলতে হবে, তা নয়।

# দু’জনেই দুজনের জন্য সময় বের করুন। দু’জনেরই ভালোলাগা বা শখের বিষয়গুলোতে গুরুত্ব দিন। দু’জন এক সঙ্গে পছন্দের রেস্তোরায় খেতে বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। এক সঙ্গে সময় কাটানোও খুব গুরুত্বপূর্ণ।

# মাঝে মধ্যেই একে অপরকে সারপ্রাইজ দিতে পারেন। একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। তাকে নিয়ে বিশেষ একটি রেস্তোরায় খেতে যান। সাপ্তাহিক ছুটির দিন সুন্দর কোথাও বেড়াতে যেতে পারেন।।

# সঙ্গীকে প্রেমপত্র লিখতে পারেন। নতুন প্রেমপত্র লিখে পরস্পরের প্রতি ভালোবাসার না বলা কথাগুলো প্রকাশ করুন। এসব পত্রে থাকতে পারে পরবর্তী রোম্যান্টিক নানা পরিকল্পনার কথা। চিঠি লিখে পোস্টের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেন, যদিও এক সঙ্গেই থাকছেন আপনারা। তাতে কি? করেই দেখুন, খারাপ লাগবে না আর সম্পর্কটাও মজবুত হবে।

দাম্পত্য জীবনের খুঁটিনাটি

বিবাহ হলো একটা জটিল বাস্তবতা। তাই দাম্পত্য জীবন একেবারে সমস্যা ও সঙ্কটমুক্ত নয়। দাম্পত্য জীবনের বাস্তবতায় চোরের মতো ইচ্ছা-অনিচ্ছা সত্ত্বেও যে কোন সমস্যা প্রবেশ করতে পারে।

সমাজবিজ্ঞানীদের মতে, দাম্পত্য সমস্যা একটা স্বাভাবিক ব্যাপার। বিভিন্ন পরিস্থিতিতে বিভিন্ন রূপে এর আবির্ভাব ঘটে। দাম্পত্য সমস্যা মূলত সৃষ্টি হয় দু’জনের প্রয়োজনের চাহিদা থেকে। অর্থাৎ একজনের প্রয়োজনের চাহিদার সঙ্গে অন্যজনের প্রয়োজনের চাহিদার মধ্যে সংঘর্ষ।
দাম্পত্য সমস্যার কারণ:

দাম্পত্য সমস্যার পেছনে ৩ রকমের কারণ রয়েছে। তা হলো-

১) ব্যক্তি নিজে

২) বিবাহের মূল উপাদানে এবং

৩)বাইরের বা পারিপার্শ্বিক কারণ।

ব্যক্তি নিজে কারণ : বিবাহ একজন পুরুষ এবং একজন নারীর দাম্পত্য বন্ধন। স্বামী-স্ত্রী উভয়ে এক হলেও তারা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য ও স্বতন্ত্র জীবনবোধ নিয়ে সমৃদ্ধ। এখানে ব্যক্তি হিসেবে স্বামী-স্ত্রী নিজেরাই দাম্পত্য সমস্যার কারণ হতে পারে।

যেমন, স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক কারণ। শারীরিক দীর্ঘকালীন রোগব্যাধি, অসুস্থতা, শারীরিক দুর্বলতা, শারীরিক অক্ষমতা, ছোঁয়াচে রোগ, মানসিক বিকারগ্রস্ততা, ট্রম্যাটিক, সাইকিক, নিয়োরটিক, সিজোফ্রেনিক, এলকোহলিক, মানসিক ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদি।

আবার ব্যক্তিত্বও একটা কারণ হতে পারে। অন্তর্মুখী ব্যক্তিত্ব যেমন- ঘরকুনো, চাপা স্বভাব, হীনম্মন্য, সন্দেহবাতিক, সঙ্কীর্ণচেতা, নিঃসঙ্গ ও নিয়ন্ত্রণহীন আবেগ।

আবার অন্যদিকে বহির্মুখী ব্যক্তিত্ব যেমন- অতিরিক্ত হৈহুল্লোড় স্বভাব, সময়জ্ঞানের অভাব, বাইরে বাইরে সময় কাটানো, বন্ধুসার্কেল নিয়ে আড্ডা মারা, দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। দুর্বল ব্যক্তিত্ব যেমন- পরনির্ভরশীলতা, সিদ্ধান্তহীনতা, দায়িত্ব নেয়ার অক্ষমতা, অন্যের কথায় কান দেয়া, গোপনীয়তা রক্ষা না করার দুর্বলতা, মেরুদ-হীন হীনম্মন্য, আস্থার অভাব, খুঁতখুঁতে স্বভাব, নিজস্বতা রক্ষা করার দুর্বল মানসিকতা, সন্দেহপ্রবণ।

ব্যক্তিত্বের দম্ভ। যেমন- আত্ম অহমিকা, ব্যক্তিমর্যাদা ক্ষুন্ন, দমনীয় ভাব, নমনীয়তার অভাব, কর্তৃত্বপরায়ণতা, অতিরিক্ত মেজাজ ও আবেগ প্রবণতার অভাব, গ্রহণশীলতার অভাব, প্রবল আত্মমর্যাদা বোধ, স্বার্থপরতা, পেশিশক্তি প্রয়োগের প্রবণতা, অস্বচ্ছলতা, গোয়ার্তুমিভাব, অনাস্থা, আপোসহীন মানসিকতা, জেদ, জবাবদিহিতা আদায়ের ভাব, দোষ খোঁজার মানসিকতা।

বিবাহের মূল উপাদান : দু’জন নর-নারীর পারস্পরিক সম্মতির বিনিময়ই বিবাহ। সম্মতির মধ্যে যে প্রতিশ্রুতি রয়েছে সেটাই বিবাহের মূল উপাদান। আর দাম্পত্য জীবনে বিবাহ প্রতিশ্রুতি এই উপাদানের অনুপস্থিতি এবং এর অভাবই দাম্পত্য সমস্যার কারণ।

যেমন- ভালবাসার অভাব, বিশ্বাস ও বিশ্বস্ততার অভাব, যৌনাচার, বহুগামিতা, দৈহিক অক্ষমতা, পুরুষত্বহীনতা, পাশবিকতা, দৈহিক মিলনে অনীহা এবং এড়িয়ে চলা, সন্তানদানে অক্ষমতা, দায়িত্বজ্ঞানহীন ভবঘুরে, ভুল সঙ্গী নির্বাচন।

পারিপার্শ্বিক কারণ : এখানে বাইরের কোন শক্তি বা তৃতীয় কোন শক্তি বা পক্ষ পারিপার্শ্বিক কোন এজেন্ট দাম্পত্য সমস্যার কারণ হয়ে আসে।

এর মধ্যে পিতা, মাতা, ভাই বোন, শশুর-শাশুড়ি, দেবর-ননদ, কোন মিথ্যা গুজব, অন্যের পক্ষপাতিত্ব মনোভাব, অন্যের অতিরিক্ত আবেগ, সোহাগ, ঈর্ষা, প্রতিহিংসা, মদ-নেশা, অর্থনৈতিক অসচ্ছলতা, বেকারত্ব চাকরি পেশা, অসৎ ব্যবসা, মোবাইল, ফেসবুক, বন্ধুত্বের সম্পর্ক, অসততা, অতীত টেনে আনা, বশ করা, চাকরির তাগিদে দূরে অবস্থান।

দাম্পত্য কলহ ও তার সমাধান:

ঝগড়া যে দাম্পত্যের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এই শ্বাশত সত্যটি প্রত্যেক স্বামী-স্ত্রীই মনে মনে জানেন এবং মানেন। হরেক রকম তুচ্ছাতিতুচ্ছ কারণে ঝগড়া যেমন লেগেই থাকে, ঠিক তেমনই ঝগড়া মেটানোর নানা উপায়ের খবরও রাখতে হয় দম্পতিদের। কারণ, দু’জন দু’দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে থাকলে আর যাই হোক সংসার চলে না। মনেও একটা তেঁতোভাব রয়েই যায়।

* কথা কাটাকাটির সময় হঠাৎ উঠে চলে যাবেন না বা এক্কেবারে চুপ করে যাবেন না। যতটা সম্ভব যুক্তিসহকারে নিজের অভিযোগ বা বিরক্তি বোঝান। উঠে চলে গেলে বা কথা বন্ধ করলে মনে হবে যে আপনি পুরো ব্যাপারটা থেকে পালাতে চাইছেন। কোন সুষ্ঠু সমাধানে আসার জন্য কথার আদান-প্রদান হওয়া খুব জরুরী।

* ঝগড়ার সময় স্বামী বা স্ত্রী সব দোষ চোখে আঙুল দিয়ে দেখাতে গেলে কিন্তু সমস্যা আরও জটিল হয়ে উঠবে। কেউই সহজে নিজের দোষ দেখতে পান না। রাগের মাথায় তো প্রশ্নই আসে না।

আর সব ‘সমস্যা’ বা ‘ঘটনা’ নিয়ে আলোচনা করুন। সমস্যা বোঝার সময় বেশি আদর্শবাদী না হয়ে বাস্তববাদী হোন। ‘কী করা উচিত’ না ভেবে ‘কী করলে ভাল হয়’ সেটা বুঝতে পারলে সমাধান হবে।

* ঝগড়ার সময় আপনি হারলেন কি জিতলেন, সেটা পুরোপুরি অপ্রাসঙ্গিক। যা নিয়ে অভিযোগ উঠেছিল সেটার কোন সঠিক রাস্তা পেলেন কি না সেটা ঠিক করাই মূল লক্ষ্য।

এই জরুরী ব্যাপারটা ভুলে গিয়ে শুধু ঝগড়ার জন্য ঝগড়া করাটা নিহায়তই ছেলেমানুষি। যদি কথা কাটাকাটির সময় মনে হয় যে দোষটা আপনরাই তাহলে ‘স্যরি’ বলতে বিন্দুমাত্র দেরি করবেন না। বিশ্বাস করুন, এটা হেরে যাওয়া নয়। আপনার সত্যবাদিতার জন্য আপনার স্বামী বা স্ত্রী আপনাকে অনেক বেশি শ্রদ্ধা করবেন।

কীভাবে মেটাবেন ঝগড়া:

আপনি নিজেদের মধ্যে ছোট্ট অশান্তিটাকে জিইয়ে রাখতে চাইছেন না তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য সবচেয়ে সুন্দর উপায় হচ্ছে স্বামী বা স্ত্রীর প্রতি নিজের ভালবাসা দেখানো। ছোট্ট একটা শব্দ ‘স্যরি’ বলুন দেখবেন আর কোন কৈফিয়তের প্রয়োজনই হবে না। প্রবলেম কিভাবে যে মিইয়ে যাবে আপনি তা বুঝতেই পারবেন না।

দ্বিতীয় কোন উপায়ে ঝগড়া মিটমাট করার চিন্তা থাকলে এক্ষেত্রে ‘উপহার’ দেয়ার কথাটা মাথায় রাখতে পারেন। ধরুন, আপনার স্বামীর একটা ট্যাব কেনার শখ হয়েছে কিন্তু প্রতিমাসে কোন না কোন খরচ এসে পড়ছে বলে আর কেনা হয়ে উঠছে না।

ফলে উনি একটু মনোকষ্টে আছেন। ঝগড়ার পর শান্তি ফেরানোর জন্য না হয় একটু বেশিই খরচ হলো। তবে সব সময় যে দামী জিনিস দিতে হবে এমন কোন কথা নেই। তার পছন্দের খাবারটিও ভাল করে রেঁধে একসঙ্গে খেতে বসে যান। মনের মতো জিনিস পেলে ঝগড়া মিটতে সময়ই লাগবে না।

তৃতীয় উপায়টি আরও একটু শক্ত। নিজের ব্যবহারের মধ্যে পরিবর্তন আনুন। আপনি যে অনুতপ্ত তা যদি প্রিয় মানুষটিকে বোঝাতে পারেন, তাহলে আলাদা করে ঝগড়া মেটানোর দরকার হয় না। আর যদি বেশি সঙ্কোচ বোধ করেন তাহলে মোবাইল বা ফেসবুকে মেসেজে ছোট্ট একটা মেসেজ সঙ্গে একটা স্মাইলি। ব্যস, ঝগড়া খতম!

যা কখনই করবেন না

* ভায়োলেন্সের সাহায্য নেবেন না। বাড়ির জিনিসপত্র ভাঙা বা ছেঁড়া কিংবা স্বামী বা স্ত্রীকে শারীরিক আঘাত দেয়া।

* পরিবারের অন্য সদস্যের জড়িয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি।

* পুরনো রেফারেন্স টেনে এনে অশান্তি বাাড়িয়ে তোলা।

* গলা তুলে, আঙুল উঁচিয়ে কথা বলা।

* বাচ্চাদের দাম্পত্য কলহে শরিক করে নেয়া।

* ঝগড়ার জের টেনে কথা বলা বন্ধ বা বিছানা আলাদা করে নেয়া।

নববধূর সাজসজ্জায় নয়, বাড়ির অন্দরমহলও রঙিন, উষ্ণ হয়ে উঠতে পারে সামান্য ফুলের ছোঁয়ায়। ফুল আসলে কোথায় সাজাবেন, কিভাবে সাজাবেন তার কোনো ব্যাকরণ হয় না, আপনার মনের খুশিমতো সাজান।

অন্দরমহলে কয়েকটা জায়গা ফুল সাজানোর জন্য আদর্শ। মূল দরজা,সিলিং রুম, সেন্টার টেবিল, বেডরুমের সাইড টেবিল কিংবা ড্রেসিং টেবিল। তাই আপনার নতুন জীবন শুরু করুন সাজ, রঙ এবং ফুলের সৌরভে ভরপুর করে।

শেয়ার করুন: