জীবন নামক শব্দে আছে অনেক উত্থান-পতন। আনন্দ-বেদনা, দুঃখ-কষ্ট, আশা-হতাশা যার নিত্যসঙ্গী। তবু জীবন নৌকায় বসে বৈঠা হাতে পারি দিতে হয় অকূল দরিয়া। যে কোনো সময় আছড়ে পড়তে পারে বড় বড় ঢেউ। আঘাত করতে পারে ঝড়। ঝড়-ঢেউয়ের সাথে যুদ্ধ করে এ নৌকায় টিকে থাকতে হয়। সঙ্গে বৈঠা হিসেবে থাকে কিছু সূত্র। কিছু সমীকরণ।
জীবনের অর্থ ও ব্যাপ্তি অনেক। জীবনের সমীকরণ সহজ আবার জটিলও। সবাইকে কষ্ট দেওয়া যেমন সম্ভব নয়। অন্যদিকে সবাইকে খুশি রাখাও কষ্টসাধ্য। এই দেনা-পাওনার হিসাব চুকিয়ে চলার নাম জীবন। পাশাপাশি জীবনকে সুন্দর রাখার দায়িত্ব নিজেরই। সঠিক সূত্রে অঙ্ক কষলেই জীবন হবে রঙিন। জীবনকে উপভোগ্য ও সুন্দর করতে জেনে নিন ৮টি সূত্র—
উচ্চাকাঙ্ক্ষা কমান: যা আছে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকুন। যা নেই তা নিয়ে আফসোস করবেন না। উচ্চাকাঙ্ক্ষা কমালেই জীবনের ৭০ ভাগ কষ্ট লাঘব হবে। জীবনের সমীকরণ সরল হয়ে উঠবে। এছাড়া কারো থেকে কিছু পাওয়ার আকাঙ্ক্ষাও এক প্রকার যন্ত্রণা। হোক সে আপনজন। আকাঙ্ক্ষা যত কমাতে পারবেন; যন্ত্রণা থেকে তত মুক্তি পাবেন।
নিজেকে ভালোবাসুন: আত্মপ্রশান্তিই বড় সফলতা। যে নিজেকে ভালোবাসতে জানে না, তার দ্বারা জীবনে সফলতা অর্জন করা দুঃসাধ্য। নিজেকে ভালো রাখতে না পারলে অন্যদের ভালো রাখার তো প্রশ্নই আসে না। তাই বিশ্বকে অন্বেষণ করার আগে নিজেকে অনুসন্ধান করুন। নিজেকে জানুন, নিজেকে চিনুন। তবেই বিশ্ব আপনার মুঠোয় চলে আসবে।
ব্যস্ত থাকুন: অলস মস্তিষ্ক শয়তানের আড্ডাখানা। ব্যস্ত থাকলে হতাশাও আঁকড়ে ধরতে ভয় পায়। কাজ না থাকলে সারাক্ষণ আজেবাজে চিন্তা মস্তিষ্ককে গ্রাস করে ফেলে। ব্যস্ততা ভালো থাকার আরেকটি অন্যতম সূত্র।
অবসরে পছন্দের কাজ করুন: কেউ ঘুরতে ভালোবাসেন। কেউ ঘরে শুয়ে কিংবা বসে কাটাতে পছন্দ করেন। কেউ গাছ লাগাতে ভালোবাসেন। কারো পছন্দ বই পড়া। কেউ আবার কানে হেডফোন গুঁজে নির্জনে গান শুনতে ভালোবাসেন। প্রত্যেকের ভালো লাগার কাজ ভিন্ন। নিজের পছন্দের কাজ নিজেকেই শনাক্ত করতে হবে। অবসরে পছন্দের কাজ করলে মন খারাপের কোনো সুযোগ নেই।
স্বপ্নপানে এগিয়ে চলুন: প্রত্যেকের জীবনে লক্ষ্য নির্ধারণ করা খুবই জরুরি। এটাও হতাশার পেছনে অনেক বড় একটা কারণ। সময় নিয়ে নিজের লক্ষ্য নির্ধারণ করে ফেলুন। প্রয়োজনে এক সপ্তাহ, এক মাস বা আরও বেশি সময় নিতে পারেন। তবুও লক্ষ্য নির্ধারণ করুন। একইসঙ্গে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে চলুন সর্বোচ্চ চেষ্টার মাধ্যমে।
সহযোগিতা করুন: সাধ্যের মধ্যে কাউকে সহযোগিতা করতে পারলে নিজের মধ্যে একটা ভালো লাগা কাজ করে। যতটুকু সম্ভব অপরকে সহায়তা করুন। তবে নিজের কাজ রেখে নয়। বিশেষ করে সামর্থ থাকলে অসহায় মানুষকে সহায়তার মাধ্যমে বেশি আত্মতৃপ্তি কাজ করে।
ক্ষমা করতে শিখুন: ক্ষমা একটি মহৎ গুণ। জীবনে চলার পথে অনেকে অনেক ভুল করেন। ভুল করে না এমন একজন মানুষও পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তাই অপরের দোষ ক্ষমা করুন। এর মাধ্যমেও আত্মতৃপ্তি আসবে। আত্মতৃপ্তিই সফলতা।
না বলতে শিখুন: জীবনকে সহজ সমীকরণে পরিচালিত করতে ও উপভোগ করতে না বলতে শিখুন। না বলা মানে খারাপ আচরণ করা বা সবাইকে না বলা নয়। যারা আপনার থেকে শুধু সুবিধা খোঁজে, তাদের ক্ষেত্রে সহজলভ্যতা কমিয়ে দিন। সম্ভব হলে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করুন। সাধ্যের মধ্যে নিজের জন্য সময় রেখে বাকি সময়ে কারো কাজ করতে পারলে করুন নতুবা সরাসরি না বলে দিন। না বলা যদিও অনেক কঠিন কাজ, তবুও আস্তে আস্তে চর্চা করুন। জীবন হয়ে উঠবে আরও সহজ।