বঙ্গবন্ধু

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও ইসলাম

ওবায়দুর রহমান খান নদভী: জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ইসলাম ও মুসলমান প্রিয় ব্যক্তি ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন ইসলামি চিন্তাবিদ ও দৈনিক ইনকিলাবের সিনিয়র সহকারী সম্পাদক মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী। ১৫ আগস্ট জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ফাতেহ২৪ কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন।

বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তি জীবন নিয়ে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একটি সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারের সন্তান ছিলেন। ছিলেন ধার্মিক পরিবারের সন্তান। তাঁর বংশও ছিল ধার্মিক বংশ। তিনি নিজেও ব্যক্তিগতভাবে একজন ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি ছিলেন। তিনি কমিউনিস্ট, সমাজতন্ত্রী ছিলেন না। তিনি ছিলেন এসবের বিরুদ্ধে।

‘বঙ্গবন্ধু গণমুখী এবং নির্বাচনমুখী রাজনীতি করতেন এবং তাঁর গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ছিলো। তিনি স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করতেন।’ মাওলানা নদভী বলেন, বঙ্গবন্ধু খুব জনপ্রিয় মানুষও ছিলেন। সমকালীন সময়ে তিনি সবচেয়ে বেশি ভোট ও সিট পাওয়া নেতা ছিলেন।

‘ব্যক্তিগতভাবে তিনি সেসময় প্রখ্যাত আলেম ওলামাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেন। একই গ্রামের মানুষ আল্লামা শাসমসুল হক ফরিদপুরী রহ. কেও তারা পারিবারিকভাবে শ্রদ্ধা করতেন। বঙ্গবন্ধুর গায়ের মুজিব কোট সদর সাহেব হুজুর তাকে প্রথম পরিয়ে দিয়েছিলেন। এটাকে তিনি সারা জীবনই বহন করেছেন।’

বঙ্গবন্ধুর আলেম শিক্ষক ও সাথীদের সম্পর্কে মাওলানা নদভী বলেন, তাঁর নেতা ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী (তিনি ছিলেন দেওবন্দের ছাত্র)। আরেকজন ছিলেন তাত্ত্বিক আলেম ও তাঁর পার্টির সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আব্দুর রশীদ তর্কবাগিশ। তিনি ফাজেলে জামিয়া আশরাফিয়া, লাহোর। তিনিও উলামায়ে দেওবন্দের অন্তর্ভুক্ত। আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্যদের একজন ছিলেন মাওলানা ইয়াকুব শরীফ। আরেকজন ছিলেন মাওলানা শহিদ ওয়ালিউর রহমান। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর একান্ত সহচর ও শহিদ বুদ্ধিজীবী।

বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবন নিয়ে মাওলানা নদভী বলেন, বঙ্গবন্ধু ৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট করেন। তার নেতা হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও নেজামে ইসলামের নেতা শহীদ আতহার আলী রহ. ও ফজলুল হক সাহেব এ ফ্রন্ট গঠন করেন। এটাকে বলা হতো হক-ভাষাণী-আতহার আলী ফ্রন্ট। ওই যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু প্রথম এমপি হন।

যে সংসদে ৩৬ জন আলেম উলামা নেজামে ইসলাম থেকে এমপি হয়েছিলেন। ওই যুক্তফ্রন্টের মন্ত্রিসভায় জীবনের প্রথম বঙ্গবন্ধু প্রতিমন্ত্রীর পদ পান। সে সময় তিনি থানভী সাহেবের খলিফা আতহার আলী রহ. এর ভক্ত ও অনুচর ছিলেন। মাওলানা সাহেবকে তিনি দাদা ডাকতেন। বলতেন ‘দাদা ছাহেব’।

ইসলাম ও মুসলমানদের পেছনে বঙ্গবন্ধুর অবদান নিয়ে মাওলানা নদভী বলেন, তিনি নিজে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় লাহোরে ওআইসি সম্মেলনে যোগদান করেন। এছাড়া তিনি আলিয়া মাদরাসার বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন, সোভিয়েত ইউনিয়ন রাশিয়ায় বাংলাদেশ থেকে তাবলিগ জামায়াত প্রেরণ করেন। যেখানে ইসলাম প্রবেশ নিষিদ্ধ ছিল। তিনি কাকরাঈল মসজিদের জায়গাটিও বরাদ্ধ দেন। টঙ্গির মাঠ কেয়ামত পর্যন্ত বরাদ্ধ দিয়েছেন ইজতেমার জন্য। ইসলামিক ফাউন্ডেশনকে তিনি পুনর্গঠন করেন ও সরকারি মর্যাদা দেন।

‘এছড়াও ইসলাম, মুসলমান ও আলেম উলামাদের সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক ছিলো। পাকিস্তানে কাদিয়ানিদের অমুসলিম ঘোষণা করার যে আন্দোলন হয়েছিল সেই সময় তিনি আইনগত সহায়তা করেছেন। ব্যারিস্টার ও লয়ারদের সহায়তা করেছেন। ব্যক্তি জীবনে তিনি উমরাও পালন করেছেন।’

নদভী বলেন, তিনি যখন ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি জেলখানা থেকে মুক্ত হয়ে দেশে এসে সর্বপ্রথম ভাষণে বলেছিলেন, আমি বাঙ্গালি, আমি মানুষ, আমি মুসলমান। মুসলমান দুইবার মরে না একবারই মরে। তিনি ‘আমি মুসলমান’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারীদের লক্ষ্য করে মাওলানা নদভী বলেন, তাঁর আদর্শের অনুসারীদের উচিত তার মতো হয়ে চলা। তার সততা, দেশপ্রেম, আচরণ কি ছিল? তিনি দুর্নীতি করতেন না, দুর্নীতিবাজদের প্রশ্রয়ও দিতেন না এবং আলেম ওলামা ও ইসলামপন্থীদের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক নিয়ে চলতেন। তিনি তার শত্রুদের প্রতিও ক্ষমা ও উদারতা দেখিয়েছেন। তিনি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন। তিনি দলের লোকদের দুর্নীতির সমালোচনাও করেছেন। তিনি ধর্মহীন ও নাস্তিক্যবাদী ছিলেন না।

রাজনৈতিক বিরোধী হলেও তিনি ব্যক্তিগতভাবে বন্ধুত্ব বজায় রাখতেন। বিরোধীদের জেলখানায় খোঁজ খবর নিয়েছেন। তাদের পরিবারকে সহযোগিতা করেছেন। তাদের বাড়ি ভাড়াও দিয়েছেন। যেমন ফজলুল কাদের চৌধুরী, শাহ আজিজুর রহমানকে দিয়েছেন। যারা রাজনৈতিক কারণে তাঁর বিরোধী হয়ে গিয়েছিল অথচ তারা বঙ্গবন্ধুর বন্ধু, পরিচিত বা তাঁর রাজনৈতিক জীবনর গুরু তাদের সবাইকে তিনি মানবিকভাবে সাহায্য সহযোগিতা ও খোঁজ খবর নিতেন।

তরুণ প্রজন্মের উদ্দেশ্যে মাওলানা উবায়দুর রহমান খান নদভী বলেন, বন্ধবন্ধুকে জানার জন্য তাঁর অসমাপ্ত আত্মজীবনী ও কারাগারের রোজনামচা পড়া উচিত। এর মাঝেই তাঁর সকল চিন্তা ভাবনা ও আদর্শ সম্পর্কে জানা যাবে। তাঁকে জানতে হলে এ দুটি বই অবশ্য পাঠ্য।

শেয়ার করুন: