ঈদের ছুটিতে গৃহে চুরি হওয়া কোন অসম্ভব ঘটনা নয়। আমাদের দেশে প্রত্যেক বছর ঈদের সময়ে অসংখ্য বাড়িতে চুরি হয়। এর জন্যে চোর তো দায়ী অবশ্যই, কিন্তু আমরা নিজেরাও কম দায়ী নই। প্রায়ই দেখা যায় যায় আমাদের সামান্য অবহেলার জন্য বা সচেতনতার অভাবে এত বড় একটা দুর্ঘটনা ঘটে যায়। অথচ একটু খানি উদ্যোগ নিলেই এই চুরি ঠেকানো সম্ভব।
ঈদের ছুটিতে বেড়াতে যাচ্ছেন কয়েক দিনের জন্য? তাহলে এই টিপসগুলো আপনার অবশ্যই কাজে লাগবে। চলুন, জেনে নিই গৃহে চুরি হওয়া প্রতিরোধ করতে কী কী সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন আপনি।
১। বাসার সমস্ত লক নতুন ভাবে চেক করুন। কোন লক বা তালা পুরাতন বা ভঙ্গুর হয়ে থাকলে বদলে নিন, কিপটামি করবেন না। কোন লক বা তালায় জং ধরে গিয়ে থাকতে সেটা ঠিক করুন।
২। দরজা-জানালা, বারান্দায় গ্রিল ইত্যাদিও ভালো করে চেক করুন। কোথাও কোন ভাঙাচোরা থাকলে মেরামত করে নিন। ৩। বেড়াতে কবে যাচ্ছেন বা কবে ফিরবেন ইত্যাদি বিষয়ে ফেসবুক বা সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেবেন না। আপনি যেমন আধুনিক হয়েছেন, চোর-ডাকাতেরাও কিন্তু হয়েছে। মাঝে মাঝে পরিচিত মানুষেরাই এসবের সাথে যুক্ত থাকে।
৪। বাড়িতে যদি বিশ্বস্ত দারোয়ান বা কেয়ার টেকার থেকে থাকে, তবে তাঁকে কিছু টাকা বখসিস দিন এবং অনুরোধ করুন বাসার দিকে নজর রাখতে। তাঁকে জানান যে বাড়ির দায়িত্ব তাঁকে দিয়ে যাচ্ছেন, বিপদ-আপদ হলে সেটা তাঁকেই দেখে রাখতে হবে। ৫। পাশের ফ্ল্যাটের প্রতিবেশী ঈদে বাড়িতেই থাকছেন? তাহলে তাঁদেরকেও একটু জানিয়ে যান। আন্তরিকতার সাথে অনুরোধ করুন বাড়ির দিকে খেয়াল রাখতে।
৬। বাড়ি থেকে যাবার আগে দরজা-জানালা সবই ভালো করে বন্ধ করুন ও কয়েকবার পরীক্ষা করে দেখুন। ৭। বারান্দায় কাপড় শুকাবার দড়ির সাথে কিছু কাপড় ঝুলিয়ে রেখে যান। চোরেরা অনেক সময়ে এটা দেখেই বোঝার চেষ্টা করে যে বাড়িতে কেউ আছে কি নেই। কাপড় আছে মানে মানুষ আছে। সম্ভব হলে একটি ডিম লাইট জ্বালিয়ে রেখে যাবেন। ডিম লাইট খুব সামান্য বিল খরচ করবে। কিন্তু রাত হলে লাইট যখন জ্বলতে দেখা যাবে, দূর থেকে মনে হবে বাসায় মানুষ আছে।
৮। বাড়ির মূল ফটকে তালা তো দিতেই হবে, কিন্তু সমস্ত ঘরেও দেয়া জরুরী। বাসার সমস্ত আলমারি, লকার ইত্যাদি ভালো করে লক করুন। দামী জিনিসগুলো বিভিন্ন ঘরে ভাগ করে রাখুন, যেমন- এলইডি টিভি, ল্যাপটপ, গহনা ইত্যাদি। তারপর সমস্ত ঘরের দরজা লক করুন। সব দরজা লক করা থাকলে চুরি করাটা চোরের জন্যে কঠিন হবে বৈকি।
৯। চোর দামী জিনিস বা টাকার জন্যে আলমারিকেই সবার আগে টার্গেট করে। তাই আলমারিতে কেবল জামা কাপড় ছাড়া অন্য কিছু রাখার প্রয়োজন নেই। বরং দামী জিনিস অপ্রত্যাশিত স্থানে লুকিয়ে রেখে যায়। যেমন গহনা বা ক্যাশ টাকা রাখতে পারেন চালের ড্রামে বা ফ্রিজের সবজির ড্রয়ারে। কাগজে মুড়ে রাখলে কেউ সন্দেহও করতে পারবে না যে এখানে দামী বস্তু আছে।
১০। ঘরের সমস্ত ধারালো বা অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যায় এমন জিনিস, যেমন- দা,বটি, ছুরি, হাতুড়ি, প্লাস ইত্যাদি লুকিয়ে রেখে যান। যেন দরজা ভাঙতে চাইলেও আপনার বাড়িতে দরকারি কিছু খুঁজে না পায় চোর। ১১। শেষ যে কাজটি আপনি করতে পারেন, সেটা হচ্ছে সিসি টিভি ক্যামেরা বসাতে পারেন। আজকাল খুব অল্প দামে এই ক্যামেরা পাওয়া যায়, নিজের মোবাইল থেকেই দেখা যায় বাড়িতে কী হচ্ছে না হচ্ছে। বিপদ দেখলে পুলিশে ফোনও দেয়া যায় সহজে। বিপদ মোকাবেলার চাইতে প্রতিরোধ করা জরুরী। সামান্য সতর্কতা আমাদেরকে অনেক বড় সমস্যা থেকে দূরে রাখতে পারে। ঈদ কাটুক আনন্দ। শুভকামনা।