কোরবানি

যে গ্রামে নিষিদ্ধ কোরবানি!

‘কোরবানি’ শব্দটি আরবি ‘কোরবান’ শব্দ থেকে আগত। যার অর্থ উৎসর্গ করা। কোরবানি ইসলামী শরিয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। কোরআন ও হাদিসে এর গুরুত্ব অপরিসীম।

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) হিজরতের পর প্রতি বছর কোরবানি করেছেন। তিনি কখনো কোরবানি পরিত্যাগ করেননি; বরং কোরবানি পরিত্যাগকারীদের ওপর অভিসম্পাত করেছেন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি কোরবানি করল না, সে যেন আমার আমার ঈদগাহে না আসে।’

কিন্তু, হিন্দুপ্রধান দেশ ভারতের অধিকাংশ রাজ্যে প্রকাশ্যে গো-হত্যা বা গরু জবাই করা যায় না। এই নিষেধাজ্ঞার কারণে দেশটির সিংহভাগ অঞ্চলে মুসলমানরা কোরবানির ঈদে ছাগল, ভেড়া, দুম্বা, মহিষ ও উট কোরবানি দিয়ে থাকে। তারা গরু কোরবানি ও জবাইয়ের কথা চিন্তাও করেন না।

তবে দেশটির উত্তর প্রদেশ রাজ্যের একটি গ্রামের মুসলমানরা কোরবানির ঈদে ছাগলও কোরবানি দিতে পারে না। বিগত দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই নিয়ম চালু রয়েছে ওই গ্রামে।

ভারতীয় একটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০০৭ সালে ভারতের উত্তর প্রদেশের সন্তকবির নগরের মুসহারা গ্রামে কবরস্থানের পাশে হোলি উৎসবের আগেরদিন দহন আয়োজন চলছিল।

হোলিকা দহন অত্যন্ত ধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয়। গাছের শুকনো ডাল বা কাঠসহ অন্যান্য দাহ্যবস্তু সংগ্রহ করে সু-উচ্চ একটি থাম বানিয়ে তাতে অগ্নিসংযোগ করে ‘হোলিকা দহন’ পালিত হয়। এর পরের দিন হয় রঙ খেলা তথা হোলি উৎসবের মূল পর্ব।

কিন্তু মুসলমানদের কবরস্থানের পাশে এমন আয়োজনে গ্রামের মুসলিম বাসিন্দারা তাতে আপত্তি জানায়। এমন উৎসবে মুসলমানদের বাধা দেয়ায় অসন্তুষ্ট হন হিন্দুরা। এক পর্যায় গিয়ে পরিস্থিতি ভয়ংকর রুপ নেয়। এই নিয়ে শুরু হওয়া যুক্তিতর্কের লড়াই শারীরিক লড়াইয়ে রূপ নিতে যাচ্ছিল।

স্থানীয় প্রশাসন এ সময় উত্তপ্ত পরিস্থিতি মোকাবেলায় এক ফয়সালা নিয়ে আসেন। উভয় পক্ষের নেতাদের ডেকে এক চুক্তিতে স্বাক্ষর করায়। সেই চুক্তি মোতাবেক স্থির হয়, কোরবানির ঈদে মুসলমানরা পশু জবাই করতে পারবে না আর হোলির সময়ে হিন্দুরা হোলিকা দহন বা হোলির দহন (চাঁচর) উৎসব করতে পারবে না।

দু’পক্ষের নেতারা চুক্তিতে স্বাক্ষর করার পর থেকে এখন পর্যন্ত এটাই নিয়ম হিসেবে চলে আসছে মুসহারা গ্রামে। স্থানীয় ধরম সিংহবা পুলিশ স্টেশনের ইনচার্জ শিব বরন যাদব এমনটাই জানান।

পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সাল থেকে এখন পর্যন্ত কোরবানির ঈদের সময়ে এই গ্রামের মুসলমানদের ছাগলগুলো জড়ো করে জেলা ভেটেরিনারি ডিপার্টমেন্টে জমা করা হয়। ঈদ-উৎসবের ৩ দিন পার হয়ে যাবার পরে যার যার ছাগল ফিরে। পুলিশ কর্মকর্তা আরও জানান, কোরবানির ঈদের তিন দিন পর মুসলমানরা গ্রামে ছাগল জবাই করে।

স্থানীয় এসপি শৈলেশ কুমার পান্ডে জানান, ওই গ্রামে কোরবানির ঈদের কোনো লক্ষণ দেখা যায় না। আর এই প্রথা গত ১০ দশক ধরে জারি আছে সেখানে।

হিন্দুদের হোলি পালনের রীতি-রেওয়াজের অংশ দহন-এর ওপরও নিষেধাজ্ঞা আছে একইভাবে। তার মতে, এতে লোকজন বিনা ‘পেরেশানিতে’ যার যার উৎসব পালন করে যাচ্ছে। জানা যায়, ভারতের ২৯টি রাজ্যের মধ্যে ২২টিতে প্রকাশ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ।

উল্লেখ্য, হিন্দুপ্রধান দেশ ভারত। বিশাল এই দেশটিতে মুসলমান, খ্রিস্টান এমনকি অনেক নিম্ন বর্ণের হিন্দুরাও গরুর মাংস খেয়ে থাকে। কিন্তু, সিংহভাগ হিন্দু গরুর মাংস খায় না। ধর্মীয় মতে গরু (গাই গরু) তাদের কাছে ‘গো-মাতা' হিসেবে সম্মানের পাত্র।

শেয়ার করুন: