মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, তাঁকে গদি ছাড়তে বলুন

সারওয়ার-উল-ইসলাম: বিমানবন্দর সড়কে জাবালে নূর নামে দুই বাসের রেষারেষিতে দুই কলেজ ছাত্রছাত্রীর নিহতের ঘটনায় গত তিনদিন ধরে বলা যায় রাজধানীর অবস্থা প্রায় অচল।

সহপাঠীদের করুণ মৃত্যু মানতে না পারার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে কিশোররা সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করছে বিচ্ছিন্নভাবে। এটাই স্বাভাবিক। তাদের এই আন্দোলনকে অভিবাদন।

ওই দুই বাসের মালিকানার সাথে কোনো না কোনোভাবে নৌমন্ত্রী শাজাহান খান জড়িত, গণমাধ্যমে সেই খবর প্রকাশ পেয়েছে। বড়ই পরিতাপের বিষয়, এই মন্ত্রী ওই ঘটনার প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে হেসে হেসে যে কথা বলেছেন তা দেশবাসী জেনেছেন। তারপরেও কিভাবে তার মন্ত্রীত্ব থাকে সেটা দেশের সাধারণ নাগরিকের মত আমারও বোধগম্য নয়।

দেশটা যেন মগের মুল্লুক! সড়কে বাসের চাপায় প্রাণ যাবে আর মন্ত্রী ভারতের প্রসঙ্গ টেনে বলবেন এটা নিয়ে হইচই করার কি আছে? যেন তার প্রিয়জনও যদি বাসচাপায় মারা যায় তখনো তিনি হেসে বলবেন-

এতে এত অস্থির হওয়ার কি আছে। কোনো অস্বাভাবিক মৃত্যুই কাম্য নয়, তারপরেও জানতে ইচ্ছে করছে, মন্ত্রী বাহাদুর, আপনার পরিবারের ওই বয়সী দুজন কিশোর-কিশোরী বাস চাপায় মারা গেলে হেসে হেসে কি বলবেন?

এবার ভিন্ন প্রসঙ্গ। রাজধানীর মিরপুর থেকে কালশী হয়ে উড়ালসড়ক দিয়ে যে বাসগুলো এয়ারপোর্ট হয়ে উত্তরা-আবদুল্লাহপুরের দিকে যায় তার প্রায় সবগুলোই প্রতিযোগিতায় যেন নামে। অল্প বয়সী চালকের স্টিয়ারিং ধরা দেখলেই বোঝা যায় অদক্ষ। কে হেলপার কে চালক বোঝার উপায় নেই। কার আগে কে যাবে?

সেই প্রতিযোগিতায় নেমে প্রতিদিনই দেখা যায় একই মালিকানার পরিবহনের সামনের লুকিং গ্লাস ভাঙছে। নয়তো জানালার কাচ ভাঙছে। যাত্রীদের ওপর এসে পড়ছে কাঁচের টুকরো। আহত হচ্ছেন যাত্রীরা।

এছাড়া উড়ালসড়কে ওঠার পর যেন চালকদের উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পায়। একই মানসিকতা। কার আগে কে যাবে? সেই মানসিকতারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে ২৯ জুলাই দুপুর সাড়ে বারোটার দিকে।

জাবালে নূরের দুটি বাস চলছিল উড়ালসেতুর ওপর দিয়ে। কার আগে কে যাবে? ঠিক যখন হোটেল র‌্যাডিসন হোটেলের উল্টো দিকের ঢালে বাস দুটি নামছিল তখনই ঘটে দুর্ঘটনা। শহীদ রমিজ উদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের ছাত্রছাত্রীরা ছুটির পরে বাসের অপেক্ষায় দাঁড়িয়েছিল ওখানে। একটি বাস ওদের দেখে দাড়ায়। ছাত্ররা ওঠার চেষ্টা করছিল।

কিন্তু তার আগেই প্রতিযোগিতায় নামা জাবালে নূরের আরেকটি বাস দ্রুত এসে ওদের চাপা দিয়ে দেয়। মুহূর্তেই শেষ হয়ে যায় দুটি প্রাণ। আহত হয় আরও কয়েকটি প্রাণ।

এই যে অদক্ষ চালকের অসুস্থ প্রতিযোগিতা এটা বন্ধে নেই উদ্যোগ। শুধু কতক্ষণ পর পর কতজন যাত্রী বাসে উঠেছে সেটার হিসেব রাখার জন্য পরিবহনগুলোর লোক রাখা আছে,

তারা উঠে যাত্রী গুনে কাগজে সংখ্যা লিখে স্বাক্ষর করে ১০ টাকা নিয়ে যায়। বিশাল কর্মযজ্ঞ যেন এটা। যাত্রীদের কোনো অভিযোগ শোনার মানসিকতা নেই তাদের।

যাত্রীরা কিছু বললে উল্টো বলে দেয়, আপনার পছন্দ না হলে অন্য বাসে যান। তেঁতুলিয়া-প্রজাপতি-নুরে মক্কা-অছিম-বসুমতি-পরিস্থান-জাবালে নূরসহ আরও বেশ কয়েকটি পরিবহনের এই অসুস্থ প্রতিযোগিতা যতদিন বন্ধ করার জন্য প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ না নেবে ততদিন দুর্ঘটনা চলবেই। কোনো সন্দেহ নেই।

এসব পরিবহনের সঙ্গে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা জড়িত, তাই চালকসহ হেলপার ও সংশ্লিষ্টরা যাত্রীদের কথায় কোনো কর্ণপাত করেই না, উল্টো অপমান করতে দ্বিধাবোধ করে না।

বর্তমানে সহপাঠিদের মৃত্যুতে কিশোররা রাজপথে নেমে যে আন্দোলন করছে তাদেরকেও পুলিশ দিয়ে পেটানো হচ্ছে, এমন খবরও পত্রিকায় আসছে।

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, আপনি ওই ঘটনার জন্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন, অপরাধীদের শাস্তির ব্যবস্থা করবেন, সবই ঠিক আছে। আপনি বলেই এটা সম্ভব। কারণ আপনি বোঝেন, অনুভব করতে পারেন প্রিয়জন হারানোর বেদনা।

বর্তমান সরকারের ইমেজকে অক্ষুণ্ণ রাখতে আপনিই পারেন আপনার মন্ত্রণালয়ের ওই মন্ত্রীর পদত্যাগের বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে। যা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ইতিহাসে।

যা সামনের জাতীয় নির্বাচনে আপনার দলের ইমেজকে আরও বাড়িয়ে দেবে। আর তা না হলে এ রকম মন্ত্রীদের বালখিল্য আচরণের কারণে দলের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

একবার বিষয়টি অনুভব করুন প্রধানমন্ত্রী, এই যে কোমলমতি কিশোররা আন্দোলন করছে, রাজধানীবাসীর দুর্ভোগ বাড়ছে, এটাতো দিনশেষে সরকারের ওপর গিয়েই বর্তাবে। অপরদিকে বিরোধী দলের লোকজন এই অবস্থা দেখে বগল বাজাবে আর ক্ষমতায় যাবার জন্য টেলিভিশনের টক শো তে গিয়ে মুখরোচক কথা বলে জনগণের আস্থা নেয়ার চেষ্টা করবে।

একবার মাত্র একটি দৃষ্টান্ত স্থাপন করুন প্রধানমন্ত্রী। একজন মন্ত্রীর বিদায়ে আপনার দলের ভাবমূর্তি কতটা বাড়বে, ভেবে দেখবেন। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা হিসেবে আপনিই পারেন এই মন্ত্রীকে পদত্যাগে বাধ্য করতে।
সূত্র: চ্যানেল আই

শেয়ার করুন: