শেষপর্যন্ত ক্ষমা চাইলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান

রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কে গত ২৯ জুলাই দুই বাসের রেষারেষিতে নিহত দুই কলেজ শিক্ষার্থীর মৃত্যুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেওয়ার সময় হাসির ঘটনায় কেউ মর্মাহত হলে তাদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন শাজাহান খান।

ওই ঘটনায় তিনি লজ্জিত জানিয়ে বলেন, ‘বাস দুর্ঘটনা সম্পর্কে জানার আগেই সাংবাদিকরা এ বিষয়ে প্রশ্ন করায় অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনাটি ঘটেছে।’

মঙ্গলবার বিকালে বিসিআইসি ভবন মিলনায়তনে শ্রমিক-কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদ আয়োজিত ‘মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াও’ ৬ দফা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে প্রতিনিধিসভায় তিনি দুঃখপ্রকাশ করেন।

শ্রমিক কর্মচারী পেশাজীবী মুক্তিযোদ্ধা সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক শাজাহান খান বলেন, ‘সেদিনের (আমার) হাস্যোজ্জ্বল মুখ ছিল অনাকাঙ্ক্ষিত।

আমার মুখ সব সময়ই হাস্যোজ্জ্বল থাকে। সেদিন ঘটনা সম্পর্কে সাংবাদিকরা আমার কাছে যখন জানতে চায়, আমি তখনও সে বিষয়ে কিছুই জানি না। তাই স্বভাবসুলভ ও স্বাভাবিকভাবেই বলেছি, যে অপরাধী হবে তাকে শাস্তি পেতে হবে, এবং আজ যে বিষয় নিয়ে আমরা এখানে বসেছি সেই বিষয় নিয়ে আলোচনা করি।

এসব কথা বলার সময় আমার মুখটি ছিলো হাস্যোজ্জ্বল। যা অনাকাঙ্ক্ষিত। যা দেখে অনেকেই কষ্ট পেয়েছেন। আপনারা বিষয়টি নিশ্চয়ই ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। সেদিনের সেই আচরণ ছিল একেবারেই অনাকাঙ্ক্ষিত।’

শাজাহান খান বলেন, ‘আমাদের সাংবাদিক ভাইয়েরা নানাভাবে কথা বলার চেষ্টা করেন। আমিও কথা বলার সময় তাদেরই কথার প্রেক্ষিতে হেসেছি কখনো, কখনো অন্যভাবে কথা বলেছি। শুধু ওইটুকুই নয়, আরো অনেক কথা হয়েছে, যদি কেউ ফুটেজ সব দেখতে পারেন, ভালো হবে।

এ ঘটনায় আমি দুঃখিত ও লজ্জিত। এতে যারা আহত হয়েছেন তাদের বিষয়টি ক্ষমাসুন্দরভাবে নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।’শাজাহান খান আরও বলেন, কেউ যদি বলেন দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে আমি শুধু ড্রাইভারদের পক্ষ নেই, এটি ঠিক নয়। যে ভুল করবে, অন্যায় করবে তার সাজা তাকে পেতে হবে। এটি আগেও বলেছি। এখনও বলছি।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের কার্যকরী সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মানুষ হত্যা করলে চালকদের প্রচলিত আইনে শাস্তি পেতে হবে।’ এ ধরনের ঘটনায় শাস্তি থেকে রক্ষার জন্য কোনো শ্রমিক সংগঠন ওই চালকদের পক্ষ নেবে না।

এর আগে গতকাল সোমবার ছাত্রদের দাবির মুখে নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেছিলেন, দুর্ঘটনা ঘটলেই যে আমার পদত্যাগ অনেকে দাবি করেন, আমি তাঁদের অনুরোধ করব আপনারা যদি কেউ প্রমাণ দিতে পারেন বা বলতে পারেন আপনি গেলেই (মন্ত্রী) সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।

আমার চলে যাওয়ার কোনো অসুবিধা নেই। এর আগেও শহীদ মিনারে পদত্যাগ দাবি করা হয়েছিল। পদত্যাগ সমস্যার সমাধান নয়।’উল্লেখ্য, রোববার (২৯ জুলাই) দুপুরে রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের সামনে এমইএস বাস স্ট্যান্ডে জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন।

একই ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও ১১/১৫ জন শিক্ষার্থী।চাকার নিচে পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যাওয়া দুই শিক্ষার্থী হলেন- শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী দিয়া খানম মিম ও বিজ্ঞান বিভাগের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আব্দুল করিম রাজিব।দুই শিক্ষার্থীর নিহত হওয়ার ঘটনায় যখন ক্ষোভে ফেটে পড়ছেন সাধারণ মানুষ, সে সময় মন্ত্রীর মুখে যায় হাসি।

শুধু তাই নয়, অনেকটা স্বাভাবিক বাচনভঙ্গিতেই ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাব দেন নৌমন্ত্রী শাজাহান খান।এ ঘটনায় তৃতীয় দিনের মতো আজও ঢাকার বিভিন্ন স্কুলকলেজের শত শত শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে নৌমন্ত্রীর পদত্যাগ,

নিরাপদ সড়ক ও ঘাতক চালকদের দ্রুত বিচার ও ফাঁসির দাবিতে বিক্ষোভ করছে। এসময় ঢাকার বিভিন্নস্থানে কয়েকটি গাড়িতে আগুনও দিয়েছে আন্দোলনকারীরা।

শেয়ার করুন: