মিনার
মসজিদে উকবা বিন নাফি

আফ্রিকায় প্রথম আজান ধ্বনিত হয়েছিলো যে মিনার থেকে

আফ্রিকা মহাদেশ। পৃথিবীর সবচেয়ে দারিদ্র কবলিত মহাদেশ। বিজয়ীবেশে বহু আগেই ইসলাম পৌঁছুছে এ মহাদেশে। খুলাফায়ে রাশেদীনের যুগ থেকে আরব সীমানার বাহিরে ইসলাম প্রসারের যে সুতীব্র গতিময়তা সৃষ্টি হয়েছিল, পরবর্তী কয়েকযুগ ধরে তার খুব একটা ছন্দ পতন হয়নি। বিখ্যাত মুসলিম সেনাপতি উকবা ইবনে নাফি প্রচন্ড বেগে ধেয়ে যাচ্ছিলেন আফ্রিকা মহাদেশের দিকে। একের পর এক ভূখন্ড জয় করে এগিয়ে যাচ্ছিলেন সামনের দিকে। আফ্রিকায় তিনি বেশ কয়েকটি সেনা ছাউনি স্থাপন করেন।

উমাইয়া শাসক হযরত আমীর মুআবিয়া (রা.) -এর শাসনামলে ৬৭০ খ্রীস্টব্দ মোতাবেক ৫০ হিজরী সনে সেনাপতি উকবা ইবনে নাফি একটি বড় শহরের গোড়াপত্তন করেন। শহরটির নাম কাইরোয়ান (Kairouan)। বর্তমানে এটি তিউনিশিয়ার একটি প্রাদেশিক রাজধানী। এখানেই তিনি একটি বিশাল মসজিদ তৈরি করেন। তাঁর নামানুসারে মসজিদটির নামকরণ করা হয় মসজিদে উকবা বিন নাফি। এই মসজিদের মিনার থেকেই আফ্রিকা মহাদেশে প্রথম আজান ধ্বনিত হয়। একটি বিশাল ভূখন্ডে তাওহীদের সুউচ্চ ঘোষণা প্রথম এখান থেকেই চারিদিকে ছড়িয়ে যায়।

১৯৮৮সালে ইউনেস্কোর ১২তম অধিবেশনে এই শহরকে বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্তর্ভুক্ত করেছে। ওআইসি ২০০৯ সালে এই শহরটিকে ইসলামী সভ্যতার অংশ হিসেবে চিহ্নিত করেছে এবং একে আফ্রিকা মহাদেশের ইসলামী সংস্কৃতির রাজধানী হিসেবে অভিহিত করেছে। পরবর্তী সময়ে আন্দালুস (বর্তমান স্পেন) মুসলিমদের দ্বারা বিজিত হলে কাইরোয়ান শহরটির গুরুত্ব আরো বেড়ে যায়।

কাইরোয়ান শব্দটির মূল অর্থ সেনাছাউনি। শব্দটি ফার্সি ভাষা থেকে এসেছে। যেহেতু উকবা ইবনে নাফি এখানে প্রথম সেনাছাউনি স্থাপন করেছিলেন, সে সূত্রেই এই জায়গাটির নামকরণ করা হয় কাইরোয়ান বা সেনাছাউনি। নিরাপত্তা প্রেক্ষিতে গোড়াপত্তন হওয়া এই শহরটির অবয়ব অনেকটা দুর্গের মত।

জনৈক গভর্নর মাহমুদ হোজির তৈরি করা দেয়াল আজো শহরটিকে ঘিরে রেখেছে শহরটি। ৬৭১ খ্রীস্টব্দ উকবা ইবনে নাফি কর্তৃক তৈরি হওয়া মসজিদটি আজো এই শহরের প্রধান মসজিদ হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই মসজিদটির বর্তমান বয়স ১৩৪২ বছর। এর আয়তন প্রায় ৫০০ফিট। এটি বিশ্বের প্রাচীণতম মসজিদগুলোর একটি। এছাড়াও মসজিদটি সে সময়ের মুসলিম স্থাপত্যের একটি নিদর্শনও বটে।

পরবর্তী সময়ে মসজিদটি বেশ কয়েকবার পুণঃনির্মাণ করা হয়েছে। মসজিদের কাছেই একটি গভীর নলকূপ বসানো আছে। এলাকার তীব্র পানি সংকট সমাধানের জন্যই এটি বসানো হয়েছিল। বহু মানুষ এখনো এই নলকূপ থেকে পানি পান করে তৃপ্ত হয়ে থাকেন। বিশ্লেষকদের অনেকের মতে, এই কাইরোয়ান শহরটি প্রাচীণ রোমে নগরী কামুনিয়ার আদলে গড়ে ওঠেছিল। বর্তমানে এই শহরের জনসংখ্যা প্রায় দুই লক্ষ।

শেয়ার করুন: