বৃষ্টিতে ভেজা নিয়ে অনেক ভুল ধারনা রয়েছে। ছোট থেকে আমরা শুনে আসছি বৃষ্টি নাকি শরীরে পক্ষে ভাল নয়। একাধিক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে ভিন্ন চিত্র। বৃষ্টিতে ভিজলে হাজারো রোগ শরীরকে আক্রমণ করবে, এই ধরণা একেবারেই ভুল। বরং একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে, যে সম্পর্কে জানলে আপনি অবাক হয়ে যাবেন। অল্প-বিস্তর বৃষ্টিতে ভিজলে একেবারেই শরীরের কোনও ক্ষতি হয় না। বরং মন ও মস্তিষ্ক একেবারে চাঙ্গা হয়ে যায়।
১. নিমেষে কমে মানসিক চাপ: বেশ কিছু কেস গবেষনায় দেখা গেছে তুমুল বৃষ্টিতে ৫ মিনিট ভিজলে স্ট্রেস লেভেল বা মানসিক চাপ একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে শরীরের ক্লান্তিও দূর হয়। আর যেমনটা আপনাদের সকলেরই জানা আছে যে আজকের দিনে যে যে মারণ রোগের প্রকোপ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, তার বেশিরভাগের সঙ্গেই স্ট্রেসের যোগ রয়েছে। তাই বুঝতে নিশ্চয় অসুবিধা হচ্ছে না যে শরীরকে সুস্থ রাখতে বৃষ্টিতে ভেজা কতটা জরুরি।
২. শরীর থেকে টক্সিক উপাদানেরা বেরিয়ে যায়: বেশ কিছু গবেষক মনে করেন বৃষ্টির পানির চরিত্রে অ্যালকেলাইন। অর্থাৎ এই পানি পান করেল শরীরের ভেতরে জমে থাকা টক্সিক উপাদান বেরিয়ে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতার উন্নতি ঘটে। এখানেই শেষ নয় অ্যালকালাইন রক্তের পি এইচ লেভেলকে স্বাভাবিক মাত্রায় নিয়ে আসে। ফলে শরীরে অ্যাসিডির মাত্রা কমে যাওয়ার কারণে একাধিক রোগের প্রকোপ হ্রাস পায়।
৩. বৃষ্টির পানির গুণ: বৃষ্টির পানি কোনও ভেজাল থাকে না। তাই তো সেই জল শরীরে লাগলে কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কাই থাকে না। প্রসঙ্গত, বৃষ্টির জল মাটিতে, নদি-নালায় মেশার পর নোংড়া হয়ে যায়, তার আগে নয়! সেই কারণেই তো বিশ্বের অনেক দেশে বৃষ্টির পানি জমিয়ে রাখা হয়। পরে প্রয়োজন মতো তা পান করা হয়ে থাকে।
৪. মানসিক অবসাদের প্রকোপ কমে: বৃষ্টির পর কেমন মাটি থেকে সোঁদা গন্ধ বেরোয় দেখেছেন। এই গন্ধটাকে মন-প্রাণ দিয়ে শরীরে ভেতরে নিয়ে যাবেন, দেখবেন নিমেষে মন ভাল হয়ে যাবে। গবেষকরা এই গন্ধকে "পেট্রিকোর" নামে ডেকে থাকেন। প্রসঙ্গত, বৃষ্টি পরা মাত্র মটিতে উপস্থিত এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া বিশেষ এক ধরনের কেমিক্যাল রিলিজ করে। যে কারণে এমন সোঁদা গন্ধ বেরতে শুরু করে।
৫. শরীরের উপকার হয়: একাধিক গবেষণায় একথা প্রমাণিত হয়েছে যে বৃষ্টির সময় হাওয়া-বাতাস খুব বিশুদ্ধ হয়ে যায়। তাই তো ওই সময় শ্বাসের মধ্যে দিয়ে শরীরে প্রবেশ করা প্রতিটি বায়ু আমাদের দেহের উপকারে লাগে। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির সময় পরিবেশে উপস্থিত টক্সিক উপাদানের ক্ষতি করার ক্ষমতাও খুব কমে যায়। ফলে এই সময় বাড়ির বাইরে থাকলে সব দিক থেকে শরীরের ভালই হয়। তবে যেমনটা অগেও অলোচনা করা হয়েছে যে ১০-১২ মিনিটের বেশি বৃষ্টিতে ভেজা চলবে না। এর বেশি হলে ঠান্ডা লেগে যাওয়ার আশঙ্কা বৃদ্ধি পায়। এছাড়া আর কোনও ক্ষতি যদিও হয় না।
৬. পেটের রোগের প্রকোপ কমে: শুনতে অবাক লাগলেও একথা প্রমাণিত হয়ে গেছে যে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে ৩ চামচ বৃষ্টির পানি খেলে অ্যাসিডিটি এবং গ্যাস-অম্বল হওয়ার সম্ভাবনা একেবারে কমে যায়। সেই সঙ্গে হজম ক্ষমতারও উন্নতি ঘটে।
৭. পানীয় হিসেবে সেরা: সম্প্রতি প্রকাশিত এক রিপোর্টে বলা হয়েছে বৃষ্টির পানি পরিষ্কার পাত্রে সংগ্রহ করে খেলে শরীরের উপকার হয়। সেই সঙ্গে একাধিক রোগের প্রকোপও হ্রাস পায়। তবে এক্ষেত্রে খেয়াল রাখবেন, যেখানে বৃষ্টির পানি সংগ্রহ করছেন সেই কেন্টানার যেন জীবাণুমুক্ত হয়, না হলে কিন্তু শরীরের ভাল হওয়ার পরিবর্তে খারাপ হবে বেশি।
৮. চুলের সৌন্দর্য বাড়ে: অনেককে বলে থাকেন বৃষ্টিতে ভেজার পর শ্য়াম্পু না করলে নাকি চুলের মারাত্মক ক্ষতি হয়। এই ধরণা কিন্তু মোটেও ঠিক নয়। কারণ বাস্তবে একেবারে উল্টো ঘটনা ঘটে। বিশেষজ্ঞদের মতো বৃষ্টির পানি বিশুদ্ধ হয়। ফলে এই পানি দিয়ে চুল ধুলে স্কাল্পে উপস্থিত একাধিক ব্যাকটেরিয়া এবং ময়লা ধুয়ে যায়। ফলে চুলের সৌন্দর্য যেমন বৃদ্ধি পায়, তেমনি খুশকি সহ নানাবিধ রোগের প্রকোপও কমে।
৯. ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধি পায়: বারিবর্ষণের সময় পরিবেশ উপস্থিত জলীয় বাস্প ত্বকের স্বাস্থ্যের জন্য় খুবই ভাল হয়। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির পর পর জলীয় বাস্প বেড়ে যাওয়ার কারণে পরিবেশে উপস্থিত একাধিক ক্ষতিকর জীবাণুর কর্মক্ষমতা কমে যায়। সেই সঙ্গে ত্বক আরও উজ্জ্বল এবং সুন্দর হয়ে ওঠে। কারণ সেই একই! বৃষ্টির পানি ত্বককে ভেতর থেকে পরিষ্কার করে। ফলে অল্প সময়ের মধ্য়েই স্কিন তার হারিয়ে যাওয়া ঔজ্জ্বল্য় ফিরে পায়।