অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল সাবান

অ্যান্টিসেপটিক সাবান মাখে‌ন? এক্ষুনি সচেতন হউন!

কোথাও বানভাসি কোথাও বা ছিটেফোঁটা বৃষ্টির আভাস। তবে ভ্যাপসা গরমের হাত থেকে নিষ্কৃতি নেই। ঘাম জমে আর বৃষ্টির ছাটে ত্বক ভিজলে তাতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। ত্বক ভাল রাখতে অনেকেই অ্যান্টিসেপটিক সাবান মেখে স্নান করেন। এর ফলে সমস্যা আরও জটিল হয়ে ওঠে, সাবধান করলেন ইনস্টিটিউট অব চাইল্ড হেলথ-এর অধ্যাপক ত্বক বিশেষজ্ঞ সন্দীপন ধর।

ত্বকের কুটকুটে সমস্যায় জেরবার হয়ে যান অনেকেই। বাড়ে চুলকানি। এমনিতেই এই বর্ষণমুখর দিনে বাতাসে ভেসে থাকা অথবা জমা জলে ঘুরে বেড়ানো জীবাণুদের পোয়া বারো। সোজা আমাদের ত্বকে এসে বাসা বাঁধে আর বংশবিস্তার করে। আবার আক্রান্তের ত্বক থেকেও সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্য জনের শরীরে।

কিছুটা আবহাওয়ার জন্য, বাকিটা আমাদের নিজেদের অজ্ঞতার কারণে ত্বকের সমস্যা বেড়ে যেতে পারে। বর্ষার আবহাওয়া এক দিকে স্যাঁতসেঁতে, অন্য দিকে গুমোট গরম। এই দুইয়ের মিলমিশ জীবাণুদের সক্রিয় করে তোলে।

বিভিন্ন ছত্রাক, অপকারী ব্যাক্টিরিয়া, জীবাণুরা এই আবহাওয়ায় দ্রুত বংশবিস্তার করে। জমে থাকা জলেও ছত্রাক ও ইস্ট তাড়তাড়ি বেড়ে ওঠে। আসলে বৃষ্টি পড়লেও আদ্রর্তা বেশি থাকায় ঘামের হাত থেকে নিষ্কৃতি পাওয়া যায় না।

তাই ভ্যাপসা গরমে শরীরের বিভিন্ন অংশে ঘাম জমে থাকে। আবার বৃষ্টিতে ভিজে পোশাক পরে থাকলেও জীবাণুদের বাড়বাড়ন্ত অব্যাহত থাকে। একাধিক দিন এ রকম চলতে থাকলে কিন্তু ত্বকের আক্রান্ত হয়ে পড়ার ঝুঁকি ষোলো আনা।

কী কী সমস্যা হয়ঃ ছত্রাক আর ক্ষতিকর ব্যাক্টিরিয়ার সংক্রমণে ত্বকের নানা সমস্যা শুরু হয়। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এ সব রোগের নাম বেশ গালভারি। ছত্রাকের সংক্রমণের নামকরণে মিল আছে। যেমন, টিনিয়া করপোরিস— যা শরীরের যে কোনও অংশে হতে পারে। বাহুমূল-সহ শরীরের নানা খাঁজে ছত্রাকের সংক্রমণ টিনিয়া ক্রুরিস, পায়ের আঙুলের খাঁজে হলে টিনিয়া পেডিস, আমরা বাংলায় যাকে বলি ‘হাজা’।

এ ছাড়া রাস্তার জমা জল মাড়িয়ে পায়ের নখে নখকুনি, ফাঙ্গাল ইনফেকশন, এমনকি আর্দ্র আবহাওয়ায় মুখের মধ্যেও ছত্রাকের সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। রোজকার জীবনযাত্রায় কিছু পরিবর্তন এনে ত্বককে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা করা যায় সহজেই।

বিশেষ করে স্টেরয়েড ক্রিম লাগালে সাময়িক ভাবে ঝটপট স্কিন র‍্যাশ সেরে যায় বলে, অনেকেই স্টেরয়েড ক্রিম লাগিয়ে ত্বকের বারোটা বাজায়। ইদানীং ত্বকের সংক্রমণ বাড়ার অন্যতম কারণ হল জীবনশৈলীর ব্যাপক পরিবর্তন।

বিশেষ করে ভাজাভুজি, চিপস ও বোতলবন্দি কোলা জাতীয় পানীয় খেলে ত্বক সংবেদনশীল হয়ে যায় বলে চট করে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। তুলনামূলক ভাবে ত্বকের চাপা অংশে ঘাম ও জল জমে থাকে বলে সংক্রমণের ঝুঁকি বেশি। বাহুমূল, কুঁচকি, গলার ও হাত পায়ের ভাঁজ, পেটে যেখানে বেল্ট পরা হয় অথবা শাড়ির কুঁচি গোঁজা হয় সে সব অংশে সংক্রমণ বেশি দেখা যায়। রাস্তার জল মাড়িয়ে ভিজে পায়ে থাকলে, বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে অনেক ক্ষণ জল বসলে ঘাম জমে ত্বকে ক্ষতিকারক ব্যাক্টিরিয়া, ছত্রাক-সহ জীবাণুর সংক্রমণ হয়। বৃষ্টির জল কিছুটা অ্যাসিডিক, তাই বৃষ্টিতে ভেজার পর ভাল করে স্নান করা উচিত।

অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন আর সাবান লাগালেই সর্বনাশঃ বর্ষায় গ্রাম শহর নির্বিশেষ অনেকেই ত্বকের সমস্যায় জেরবার হন। এর হাত থেকে রেহাই পেতে নিজেদের বুদ্ধি খরচ করে অনেকেই যে কাজটা করেন, তা মোটেও বুদ্ধির পরিচয় দেয় না। বাজারচলতি নানা রকম অ্যান্টিসেপটিক লোশন আর সাবান পাওয়া যায়। ত্বকের সংক্রমণ এড়াতে এদের কোনও ভুমিকা তো নেই-ই, বরং সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে। বাজারে যে সব জীবাণুনাশক অ্যান্টিসেপ্টিক সাবান বা লোশন পাওয়া যায় ত্বক পরিষ্কার করার জন্য অনেকেই তা ব্যবহার করেন।

এমনকি, সামান্য প্রদাহ হলে বা পোকা কামড়ালেও অনেকে ত্বকে সরাসরি অ্যান্টিসেপ্টিক লোশন লাগান। এতে হিতে বিপরীত হয়। এই ধরনের সাবান বা লোশন ত্বককে শুকনো করে দেয় ও চুলকানি সৃষ্টি করে। ত্বক চট করে সংক্রমিত হয়ে পড়ে। সাধারণ মৃদু সাবান বা বডি ওয়াশ ব্যবহার করুন। আর ত্বক ড্রাই হলে নারকেল তেল লাগান।

বর্ষায় অনেকে বাচ্চাদের নিয়মিত স্নান করানোর ঝুঁকি নেন না। এর ফলে ঘাম জমে ত্বকের সংক্রমণের আশঙ্কা বাড়ে। আর বৃষ্টিতে ভিজলে স্নান তো করতেই হবে। যে কোনও বডি সোপ বা বডি ওয়াশ মেখে স্নান করুন। সপ্তাহে তিন দিন শ্যাম্পু করতে হবে। কেননা, মাথায় ও দাড়িতে ফাঙ্গাল ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

নখকুনির প্রবণতা থাকলে বাড়ি ফিরে গরম জলে পা ডুবিয়ে সাবান দিয়ে পরিষ্কার করে নিন। পায়ের নখ ছোট করে কেটে রাখুন। আর যাদের ত্বক সংবেদনশীল ও শুষ্ক প্রকৃতির তাঁরা স্নানের পর ভাল করে নারকেল তেল মেখে নিন। আর কোনও রকম সমস্যা হলে ওষুধবিক্রেতাকে জিজ্ঞাসা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। বর্ষায় ত্বক থাকুক সবুজ গাছের মতোই ঝকঝকে।

শেয়ার করুন: