নবনীত রবি রানা
নবনীত রবি রানা

নজরকাড়া সেই সুন্দরীরা কে কোথায়?

নব্বই দশক ছিল এই অভিনেত্রীদের বিচরণ ক্ষেত্র। রূপে, ঢংয়ে, অভিনয়ে দশকজুড়ে তারা ছিলেন সপ্রতিভ। তারকাদের কক্ষপথে আজো তাদের আলোকিত অবস্থান। সময়ের পালাবদলে এখন তাদের লক্ষ্য গেছে পাল্টে। ড্রয়িংরুমের দর্শকদের কাছে কতটা সহজলভ্য তারা, কতটা দূরে গেছেন দর্শকদের নজর থেকে আর কে কী কাজে ব্যস্ত হয়ে ভুললেন স্যাটেলাইটের আকর্ষণ, তারই একপ্রস্থ বিবরণ লিখেছেন এই প্রতিবেদক।

শমী কায়সার: নব্বই দশকের শীর্ষ টিভি তারকাদের একজন শমী কায়সার। তারকা খ্যাতিতে দশকজুড়েই তিনি ছিলেন উজ্জ্বল। তার রূপ-গুণের ভক্ত ছিল দেশজুড়ে। অভিনয় থেকে ধীরে ধীরে সরে যাওয়ার পর তিনি হতে পারতেন কোনো সিনেমার পরিচালক। কিন্তু শমী কায়সার হলেন এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক। অর্থাৎ ব্যবসায়ী পরিচয়টি এখন তার প্রতিষ্ঠিত। ব্যবসায়ীদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শমী, যার জন্য ঘুম হারাম হয়েছিল তরুণদের।

যুবাদের হার্টথ্রব সেই অভিনেত্রী অনেকদিন ধরেই নেপথ্যের মানুষ। নিজের প্রযোজনা সংস্থা নিয়েই তার যত ব্যস্ততা। টিভি পর্দায় তাকে দেখা যায় কদাচিৎ। সিনেমায় তার উপস্থিতি নেই একেবারেই। সর্বশেষ শোনা গিয়েছিল ‘যুদ্ধশিশু’ নামে একটি ছবিতে অভিনয় করবেন। পরে ওই ছবিতেও আর নিজেকে জড়াননি শমী।

আফসানা মিমি: নব্বই দশকের আরো এক জনপ্রিয় অভিনেত্রী আফসানা মিমি। তার অভিনয়ের দ্যুতিতে তিনি আলোকিত করেছেন নব্বই দশক। তাকেও আমরা পেতে পারতাম সিনেমার পরিচালক হিসেবে। একটি ছবির কাজও শুরু করেছিলেন। সেই ছবিটির কাজ মাঝপথে থমকে গেছে। মিমি ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন তার ক্রিয়েটিভ স্কুল নিয়ে। ব্যবসায়ের সঙ্গে জড়িত তিনি। তাকে কালেভদ্রে অভিনয়ে দেখা যায়। অভিনয়ে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন। তার মতে, অভিনয়ের জন্য আর ‘ফিট’ নন তিনি।

মাঝেমধ্যে উপস্থাপনায় দেখা যায় মিমিকে। আসেন টকশোতেও। কিন্তু মিমির যে রূপমাধুরী চোখে লেগে আছে নব্বইয়ের দর্শকদের তা এখন দূর অতীতের ব্যাপার। অভিনয়ের মাঠে প্রত্যাবর্তনের কোনো লক্ষণই নেই এই অভিনেত্রীর মধ্যে। থাকতে চান তিনি নেপথ্যেই।

বিপাশা হায়াত: নব্বই দশকের সবচেয়ে জনপ্রিয় অভিনেত্রী কি বিপাশা হায়াত? এই প্রশ্নের উত্তরে আসবে প্রচুর ‘হ্যাঁ’। দর্শক গ্রহণযোগ্যতায় মাইলফলক স্পর্শ করেছিলেন বিপাশা। তিনি এখন সন্তান সামলে আর অভিনয়ে সময় দিতে পারেন না। স্বামী তৌকীর আহমেদ পর্দার সামনে-পেছনে চুটিয়ে কাজ করলেও বিপাশা কাজ করেন বেছে বেছে। খুব কমই তাকে পর্দায় দেখতে পাওয়া যায়।

অভিনয়ের চেয়ে চিত্রশিল্পের দিকেই তার আগ্রহ বেশি এখন। গত বছর দক্ষিণ কোরিয়াতে শিল্পীর একক চিত্রপ্রদর্শনী হয়ে গেছে। এটি বিদেশের মাটিতে তার দ্বিতীয় প্রদর্শনী। এর আগে রোমেও বিপাশার আঁকা ছবির প্রদর্শনী হয়েছিল। গত বছর আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবেরও বিচারক হয়েছিলেন বিপাশা। বলতে গেলে নেপথ্যেই এখন ব্যস্ত এই গুণী মানুষটি।

তানভীন সুইটি: নব্বই দশকের মাঝামাঝি মডেল হিসেবে আলোড়ন তোলেন তানভীন সুইটি। তার মঞ্চে কাজেরও অভিজ্ঞতা ছিল। নাটকে এসে তিনি কুড়ান দর্শকপ্রিয়তা। সুইটি মডেল থেকে অভিনত্রী হয়ে নজর কেড়েছিলেন। একটা সময় তিনি ছিলেন ব্যস্ত অভিনত্রেী। কয়েক বছর আগেও তাকে সরব দেখা গেছে। এখন সুইটিকে দেখা যেন আকাশের চাঁদ দেখতে পাওয়া।

একেবারেই অনিয়মিত হয়ে পড়েছেন তিনি। নাটকের মান নেমে যাওয়ার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরেই তার এই বিরতি বলে সুইটি জানিয়েছেন। নাটক ছাড়লেও এই আঙিনা ছাড়ছেন না। বরং দায়িত্ববোধ থেকে এগিয়ে এসেছেন। অভিনয় শিল্পী সংঘের নির্বাচনে তিনি প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছেন। গত বছর সুইটি একটি বিজ্ঞাপনচিত্রে কাজ করেছিলেন। এভাবেই মাঝেমধ্যে তাকে দেখা যায় নতুনদের ভিড়ে।

তানিয়া আহমেদ: মৌ-তানিয়া-সুইটি এই তিন মডেল একসময় ঝড় তুলেছিলেন। তিনজনের মধ্যে তানিয়া আহমেদ এখনো ব্যস্ত রয়েছেন নানাভাবে। গত বছর তানিয়া চিত্রপরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন। ‘এভাবেই ভালোবাসা হয়’ তার নির্মিত প্রথম ছবি। লন্ডনে তিনি ছবির শুটিং করেছেন। দেশে গুটিকয় নারী চলচ্চিত্র নির্মাতার সারিতে এখন তানিয়ার নাম।

নাটক-টেলিফিল্মে অভিনয় করলেও তিনি ইদানীং দর্শকদের দৃষ্টি কেড়েছেন একটি টিভি চ্যানেলে ‘আজকের অনন্যা’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে। একটি বিদেশি অনুষ্ঠানের আদলে নির্মিত এই অনুষ্ঠানটি খুব সাড়া না জাগালেও তানিয়াকে দর্শকদের চোখের সামনে ধরে রেখেছে। তার সমসাময়িক অনেকেই ব্যস্ততা কমিয়ে দিয়েছেন। তানিয়া এখনো কাজের স্পৃহা হারাননি। তাকে এখনো বেশ সরবই দেখা যায়।

দীপা খন্দকার: নব্বই দশকের শেষের দিকে টিভি আঙিনায় পা পড়ে দীপা খন্দকারের। একটা সময় বিপুলসংখ্যক কাজ করেছেন তিনি। ইদানীং সেই কাজের স্রোত আর নেই। তবুও পর্দা থেকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন নন দীপা। তাকে মাঝেমধ্যে কাজ করতে দেখা যায়। দেখা যায় খবরের পাতায়। সম্প্রতি তিনি কাগজের শিরোনামে আসেন ‘ভাইজান এলোরে’ ছবিতে কাজের সূত্র ধরে। এটি একটি ভারতীয় বাংলা ছবি।

শাকিব খান অভিনয় করেছেন ভাইজানের ভূমিকায়। তার বোনের চরিত্রটি দীপা খন্দকারের। দীপা এখনো পর্দার সামনে রয়েছেন। সমসাময়িক অনেকেই পর্দার পেছনে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। স্বামী অভিনেতা শাহেদ আলী সুজনকে নিয়ে দীপার সংসার। দুজনেই মাঝারি গতিসম্পন্ন অভিনয় শিল্পী। মৃদু গতিতে তারা কাজ করে চলেছেন বছরের পর বছর।

মাহবুবা ইসলাম সুমী: সুমীও নব্বই দশকের শেষের দিকে মিডিয়ায় যুক্ত হোন। ফটোসুন্দরী হয়ে তার এই রঙিন জগতে আগমন। গø্যামারার্স অভিনেত্রী হিসেবে তিনি বিটিভি দর্শকদের আবিষ্ট করেছিলেন। স্যাটেলাইট যুগেও তাকে ব্যস্ত দেখা গেছে। এক পর্যায়ে তিনি নাম লেখান সিনেমায়ও। সেখানেও তিনি গø্যামারেরই প্রদর্শনী করেন। কিন্তু তিনি সিনেমায় সুবিধা করে উঠতে পারেননি। পরে বেছে বেছে কিছু টিভি প্রডাকশনে তাকে দেখা গেছে। একটা সময় সুমী পর্দার মোহ কাটিয়ে নেপথ্যের মানুষ হয়ে যান।

নির্মাতা হিসেবে তিনি ব্যস্ত হওয়ার চেষ্টা করেন। দেশ-বিদেশে শুটিং করে গø্যামারার্স কিছু ফিকশন বানান সুমী। তিনি চিত্রপরিচালক হিসেবেও নাম লিখিয়েছেন। ‘তুমি রবে নীরবে’ নামে একটি ছবির নির্দেশনা দেন। নেপথ্যেই এখন সুমীর পদচারণা।

তারিন: নতুন কুড়ির শিশুশিল্পী হিসেবে কুড়িয়েছিলেন দেশব্যাপী জনপ্রিয়তা। সেই জনপ্রিয়তার পথ ধরে তারিন একসময় পূর্ণ নায়িকা হয়েও সফল হোন। শিশুশিল্পীর তকমা গাঁ থেকে ঝেড়ে ফেলে তারিন দর্শকদের মুগ্ধ করেন পরিণত অভিনয়ে।

নব্বই দশকের শেষের দিকেই তারিনের অভিনেত্রী হিসেবে দাপটের শুরু। দেশের প্রায় শীর্ষ সব অভিনেতার বিপরীতেই তার জুটি গড়ে ওঠে একসময়। দু’হাত ভরে কাজ করেন তারিন। একটা সময় টিভি খুললেই দেখা গেছে তারিনের মুখ। সেই স্বর্ণসময় তারিনের না থাকলেও এখনো তারিনকে পর্দায় পাওয়া যায়। অনেকের মতো তিনি নেপথ্যে কাজ করেননি। শুধুমাত্র পর্দা উপস্থিতি দিয়েই তারকাখ্যাতি ধরে রেখেছেন। এখনো সংসারধর্মে ব্যস্ত হননি এই মেধাবী অভিনেত্রী। আজো কাজই তার প্রধান ধর্ম।

মৌ: সুপার মডেল হিসেবেই খ্যাতিমান সাদিয়া ইসলাম মৌ। নব্বই দশকের সবচেয়ে নামকরা মডেল। মডেলিং করে এতখানি খ্যাতি দেশের আর কেউ পেয়েছেন কি? এই প্রশ্নের উত্তরেও আসবে প্রচুর ‘হ্যাঁ’। দেশের শীর্ষ মডেলরা প্রায় সবাই নাম লিখিয়েছেন অভিনয়ে। বাদ যাননি মৌও। তবে অন্য মডেলদের মতো অভিনয়ে মেধার পরিচয় দিতে পারেননি। তাকে বরাবরই দেখা গেছে গø্যামারার্স নাটকে কাজ করতে। নিজেকে ভাঙার কোনো চেষ্টা তিনি করেননি।

এখনো আকর্ষণীয় ফিগার ধরে রেখেছেন মৌ। তবে হয়ে গেছেন অনিয়মিত। আগের মতো ঘন ঘন বিজ্ঞাপনচিত্রে তাকে দেখা যায় না। তবে নাটক করেন ঈদ-পার্বণে। ধারাবাহিক নাটকে কখনোই তিনি স্বতঃস্ফ‚র্ত ছিলেন না। তাই ওদিকটায় এখনো তাকে দেখা যায় না। সবমিলিয়ে মৌ চুপচাপ, তবে বিরাজমান।

ঈশিতা: আরেক নতুন কুড়ির সার্থক শিল্পী। ঈশিতাও দেশের কোনায় কোনায় পৌঁছেছেন শিশুশিল্পী হিসেবেই। পূর্ণ নায়িকা হওয়ার পর তিনিও পেয়েছেন দর্শকপ্রিয়তা। অসাধারণ রূপের কারণে ঈশিতার অবস্থান সবসময়ই ভিন্ন রকম। টিভি নাটকে ঈশিতাকে দেখা গেছে প্রেমের নাটকেই বেশি করতে। গø্যামারাস কাজ হলেই ডাক পড়েছে তার।

তারিনের মতো বিভিন্ন ঘরানায় কাজ করে স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যে নিজেকে দাঁড় করাতে পারেননি ঈশিতা। কিন্তু তাতে এই সুন্দরী অভিনেত্রীর ভক্তের সংখ্যা কমেনি। ঈশিতা কাজ কমিয়ে দিয়েছেন অনেক বছর হলো। তাকে পর্দায় দেখা যাওয়া দুষ্কর। কিছুদিন আগে কলকাতার সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি বিশেষ টেলিফিল্মে অভিনয় করেছেন। অভিনয় থেকে দূরে থেকে চ্যানেল আইয়ের চাকরি করেই অনেক বছর কাটিয়ে দিলেন ঈশিতা।

শেয়ার করুন: