এখনো গ্রেফতার হয়নি এমপি পুত্র

রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে এক সংসদ সদস্যের গাড়ি চাপায় সেলিম ব্যাপারী (৪৫) নামে এক পথচারী নিহতের ঘটনায় এখনো গ্রেফতার হয়নি অভিযুক্ত শাবাব চৌধুরী। এমনকি ঘাতক গাড়িটিও জব্দে কোনো অগ্রগতি নেই পুলিশের।

এদিকে অভিযুক্ত শাবাব রাজধানীতেই অবস্থান করছেন। এছাড়া গাড়িটি ন্যাম ভবনের ভেতরেই বয়েছে বলেও জানা গেছে।

এ বিষয়ে কাফরুল থানার ওসি মোহাম্মদ শামিম হোসেন জানান, সেলিম ব্যাপারী নিহত হওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেফতারে অভিযানও অব্যাহত রয়েছে। তারা ঘাতক গাড়িটি খুঁজছেন। তবে এখনও জব্দ করতে পারেননি।

প্রসঙ্গত, ১৯ জুন রাত ১০টায় রাজধানীর মহাখালী ফ্লাইওভারে সেলিম ব্যাপারীকে চাপা দেয় ঢাকা মেট্রো ঘ-১৩-৭৬৫৫ নম্বর গাড়িটি। যা নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করীম চৌধুরী স্ত্রী কবিরহাট উপজেলা চেয়ারম্যান কামরুন নাহার শিউলির নামে নিবন্ধিত। আর তাদের একমাত্র ছেলে শাবাব।

নিহত সেলিমের গ্রামের বাড়ি বরিশালে। তিনি মহাখালী এলাকায় একটি ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানের গাড়িচালক ছিলেন। তিনি পরিবার নিয়ে উত্তরখান এলাকায় থাকতেন। এ ঘটনার পর রাতেই অজ্ঞাত আসামিদের বিরুদ্ধে কাফরুল থানায় মামলা করেছেন নিহতের জামাতা আরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মঙ্গলবার রাতে সেলিম মহাখালী ফ্লাইওভারে বাসের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। ওই সময় এমপিপুত্র শাবাব তার পায়ের ওপর গাড়ি তুলে দেয়ার পর তিনি বাম্পার ধরে ফেলেন।

এর পর গাড়িটির চালক শাবাব ব্যাক গিয়ারে এসে আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠে। গতি বাড়িয়ে তিনি আবারও সামনের দিকে এগিয়ে যান। এতে সেলিম ছিটকে ফ্লাইওভারের গার্ডারে গিয়ে পড়েন। মুহূর্তেই মাথা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় তার। ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান।

চাপা দেয়ার পর গাড়িটি নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে কয়েকজন মোটরসাইকেল ও প্রাইভেটকারে করে ওই গাড়ির পিছু নেন। গাড়িটি ন্যাম ভবনের সামনে গিয়ে থামে।

এ সময় এক রঙের শার্ট ও কালো প্যান্ট পরে ওই গাড়ি থেকে মারমুখি ভঙ্গিতে বেরিয়ে এসে এক তরুণ বলেন, এই তোরা এইখানে ক্যান আইছছ। এটা আমার এলাকা।

আমার সঙ্গে লাগতে চাইলে আয়, দেখি কার কতো ক্ষমতা! এ সময় ওই তরুণের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। তখন আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে এবং তরুণটিকে শাবাব নাম ধরে ডাকতে থাকে। তবে শাবান এ সময় মদ্যপ অবস্থায় ছিলেন বলেও জানান এক প্রত্যক্ষদর্শী।

পরে দায়িত্বরত আনসার ও কেয়ারটেকাররা জানায়, শাবাব এমপি একরাম চৌধুরীর ছেলে। এরপর তাদের ন্যাম ভবন থেকে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়া এ ঘটনার প্রমাণ ন্যাম ভবনের সিসি ক্যামেরায় নিশ্চয় ধারণ হয়েছে। ওই সিসি ক্যামেরা ফুটেজ দেখলেই সব নিশ্চিত হওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে একরামুলের স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলি অভিযুক্ত গাড়ির মালিকানার বিষয়টি স্বীকার করে তিনি দাবি করেন, গাড়িটি চালাচ্ছিলেন নুরুল আলম নামে তাদের গাড়িচালক। তবে ওই গাড়িচালক এখন কোথায় তিনি তা জানেন না।

নিহত সেলিম ব্যাপারীর মেয়ে তামান্না বলেন, বাবা মহাখালীতে একটি ডেভেলপার কোম্পানির এমডির গাড়িচালক ছিলেন। ওই এমডি নাখালপাড়া এলাকায় থাকেন। এমডির বাসায় গাড়ি রেখে আমার বাসায় আসার কথা ছিল বাবার। রাত সাড়ে ৯টার দিকে মোবাইল ফোনে শেষবারের মতো বাবার সঙ্গে আমার কথা হয়েছিল।

মোবাইল ফোনে বাবা আমাকে বলেন, ডিউটি শেষ করে গাড়ি জমা দিয়েছি। গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছি, তোমার বাসায় যাব। মাকেও ফোন করে আমার বাসায় আসার কথা জানিয়েছিলেন।

আরিফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, রাত ১০টার দিকে মোবাইল ফোনে কল করে কে যেন জানিয়েছে, আমার শ্বশুর দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়েছেন।

পারিবারিক সূত্র জানায়, এমপি একরামুল করিমের পরিবারের পক্ষ থেকে সমঝোতার জন্য নিহত সেলিম ব্যাপারীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। নিহতের পরিবারকে এ বিষয়ে অভিযোগ করতে নিষেধ করা হয়েছে।

শেয়ার করুন: