গার্লফ্রেন্ড কে নিয়ে রিক্সায় উঠব এমন সময় দেখি রিক্সার চালক আমার বাবা। বাবাকে দেখে কি করব বুঝতেছিনা রিক্সায় উঠব নাকি উঠব না আমার গার্লফ্রেন্ড বলে উঠল…….
– কি হলো রিক্সায় উঠছো না কেন?
– না মানে বা বা…..?
– কি বা বা শুরু করলা উঠো বলছি?
…. আমি আর আমার গার্লফ্রেন্ড তুয়া রিক্সায় উঠলাম আর রিক্সার ড্রাইভার আমার বাবা। তুয়া জানে আমার বাবা রিক্সা চালায় কিন্তু ও এটা
জানে না এখন যার রিক্সায় চড়ে যাচ্ছি সেটাই আমার বাবা। আমি চুপচাপ বসে আছি কোন কথা বলছি না আর আমার বাবা রিক্সা চালিয়েই যাচ্ছেন।
– কি হলো তুমি তো এর আগে রিক্সায় উঠলে বকবক করতেই থাকতে আর আজ কোন কথা কথা বলছো না যে? (তুয়া)
– আসোলে আমার না আজ কথা বলতে ভালো লাগছে না। একটু চুপচাপ থাকো না? (আমি)
– চুপচাপ থাকবো মানে? কিছুক্ষন আগে না অনেক কথা বললা আর এখন রিক্সায় উঠে বলছো কথা বলতে ভালো লাগছে না!
….. আমি তুয়ার কানে কাছে ছোট ছোট করে বললাম
– তুয়া যিনি রিক্সা চালাচ্ছেন তিনি আমার বাবা! (আমি)
… আমার কথা শুনে তুয়া একটু থমকে গেলো ভাবছে এটা কি হলো। আমরা করছি প্রেম আর হবু শশুর চালাচ্ছে রিক্সা। এবার তুয়া জোরে জোরে বলে উঠলো
– আচ্ছা মৃনাল তোমার মনে আছে যেদিন তুমি আমাকে প্রথম কিস করেছো সেদিনের কথা?
… আমার তুয়ার কথা শুনে হাত পা কাঁপতে লাগলো। দেখলাম আমার বাবা রিক্সা চালানোর গতি বাড়িয়ে দিয়েছে।আসোলে আমি কোন দিন তুয়া কে কিস করিনি আজ বাবার সামনে আমার সব ইজ্জত শেষ করে দিলো। তুয়ার দিকে তাকিয়ে দেখি তুয়া মুচকি মুচকি হাসছে।
এখন বুঝতে পারছি আসল কারন কি আমার বাবার সামনে আমার ইজ্জতের ১৩ টা বাজানোর জন্যই এমন ভাবে বলছে।
– তুয়া কি বলছো এসব আমি কখন কিস করছি তোমায়?
– শুনো একদম ন্যাকামো করবে না। সাধু সাজা হচ্ছে তাই না! শুধু কিস না আরো অনেক কি………. (ওকে পুরোটা বলতে না দিয়ে আমি ওর মুখ চেপে ধরলাম্)
– তুয়া প্লিজ আমার সব কিছু আজ এভাবে শেষ করে দিও না বাবার সামনে( কানের কাছে গিয়ে বললাম যেন বাবা শুনতে না পান)
….. আমাদের কথোপকথন বাবা মনে হয় শুনে ফেলেছে তাই রিক্সা টা চালানো বন্ধ করে দিলো। বাবা বলে উঠলেন আমি আর যাবো না সামনে। অতপর রিক্সা থেকে নেমে পরলাম। আমি লজ্জায় বাবার সামনে মাথা উপরে তুলতে পারছি না আর তুয়া শুধু মুচকি মুচকি হাসতেছে।
আমি লক্ষ্য করলাম আমার বাবা তার পকেট থেকে একটা ১০০ টাকার নোট আমার হাতে ধরিয়ে দিলো আর চোখ আর আমার দিকে কেমন রাগি ভাবে তাকিয়ে চলে গেলো।
আর এদিকে তুয়া এসব দেখে জোরে জোরে হাসা শুরু করে দিলো। আমি একদম নিশ্চুপ এ কি হতে কি হয়ে গেলো।
– বাব্বা বাবার কি দরদ ছেলে প্রেম করছে যেনে রিক্সার ভাড়া না নিয়ে ১০০ টাকা দিয়ে গেলো প্রেম করতে।(বলে আবার হাসা শুরু করে দিলো)
– দেখো একদম উল্টা পাল্টা কথা বলবা না। আমার বাবার সামনে সব কিছু শেষ করে দিছো তুমি।
– ওলে বাবালে আমার বাবুটারে। শোনো বাবা যে ১০০ টাকা দিলো চলো ফুসকা খাবো?
– ঐ এখন ও বাবা হয়নি তোমার বুঝছো। যখন হবে তখন ইচ্ছে মত বাবা ডাকিও। এবার চলো তোমার সাধের ফুসকার দোকানে….?
….. তারপর ফুসকা খেয়ে কিছুক্ষন কাটিয়ে বাসার উদ্দেশ্য রওনা দিলাম। আসোলে তুয়া মেয়েটা অনেক ভালো আমাকে অনেক ভালোবাসে। ও জানে যে আমি অনেক গরীব আর আমার বাবা রিক্সা চালক।
এসব কিছু শুনে ও আমার পিছু ছাড়ে না। বলে আমি তোমাকেই বিয়ে করব। আমি বলি তোমার বাবা মা কি এটা মেনে নিবে তুয়া বলে সেসব কিছু আমার দায়িত্ব। হাটতে হাটতে বাসা চলে আসলাম। বাসাতে আমি আর বাবা তাছাড়া আর কেউ থাকি না কারন মা নেই।
আমি ভিতরে ঢুকতেই বাবা আমার দিকে কেমন ভাবে তাকালেন কিন্তু কিছু বলল না। আমি বাবার কাছে গিয়ে বললাম
– বাবা বিশ্বাস করো মেয়েটা যা বলেছে সব মিথ্যা বলেছে। ও জানতো তুমি আমার বাবা তাই বানিয়ে বানিয়ে বলেছে! (আমি)
– আমি কি তোর কাছ থেকে এসব কিছু শুনতে চেয়েছি!
– বাবা সত্যি বিশ্বাস করো ও মিথ্যা বলেছে তোমায় যেনো আমার উপর রেগে যাও তুমি।
– হুম। মেয়েটা খুব ভালো এর আগেও আমার রিক্সায় উঠেছিলো অনেক বার আর আমাকে বাবা বলে ডেকেছিলো!
– কিইইইই বাবাও বলেছে?
– হ্যা বলেছে তো!
…. আমি কি হাবলা রে ভাই। তুয়া আগেই জানতো আমার বাবাকে আর আমি মনে করছিলাম আজ দেখলো প্রথম।
– খোকা মেয়েটা কিন্তু অনেক ভালো! (বাবা)
– দেখতে হবে না কার বউ তোমার ছেলের হবু বউ!
– আচ্ছা খোকা এত্তবড় লোকের মেয়ে কে তুই পটালি কি করে হু?
– আরে আমি পটাতে যাবো কেনো সে ই আমাকে পটিয়েছে।
– আচ্ছা শোন এখন থেকে রিক্সায় উঠলে আমাকে কল দিস আমি রিক্সা নিয়ে যাবো আর তোদের ফ্রি তে ঘূরাবো।
…. আমি বাবার কথা শুনে অবাক হয়ে গেছি। বাবাকে জরিয়ে ধরলাম আর কান্না করে দিলাম।
– এই কান্না করছিস কেনো? (বাবা)
– বাবা তোমার অনেক কস্ট হয় তাই না আমার লেখা পড়ার খরচ চালাতে?
– আরে না আমার কাছে এসব কিছু কস্ট মনে হয় না। আর তুই ছাড়া আমার কে বা আছে বল!
– বাবা তুমি দেখে নিও আমি ঠিক একদিন অনেক বড় হবো আর তখন তোমাকে রিক্সা চালাতে হবে না।
– আমি জানি তুই একদিন বড় হবি। আচ্ছা চল খেতে চল।
…. আমি আর বাবা একসাথে খেয়ে নিলাম। আমি জানি বাবা আমাকে অনেক ভালোবাসে আর আমার জন্য এতো কস্ট করে। আর বাবা বার বার একটা কথাই বলে বউ মা অনেক সুন্দর। আমি নিশ্চিত বাবারো অনেক পছন্দ হয়েছে মেয়েটা।
#তারপরের দিন…….
… আমি রাস্তায় দাড়িয়ে রিক্সার জন্য অপেক্ষা করছি আর তুয়া আমার কাছে এসে বাবাকে কল করল আর বাবা ও রিক্সা নিয়ে হাজির। আমি
আর তুয়া রিক্সায় উঠলাম আর বাবা রিক্সা চালাচ্ছে আর গান গাইছে মনের আনন্দে।
তুয়া আমার বাবাকে বলল
– জানেন বাবা আপনার ছেলে মৃনাল আছে না সে আজ অন্য একটা মেয়ের দিকে তাকিয়ে ছিলো অনেকক্ষন?
– এই কি বলো এসব আমি কখন তাকালাম আর কোথায়?
– বাবা আমি সত্যি বলছি আপনার ছেলে অন্য মেয়েকে ভালোবাসে আমাকে না!
… তুয়ার মুখে এমন কথা শুনে বাবা গান বলা বন্ধ করে দিয়ে রিক্সা থামালেন
– মৃনাল রিক্সা থেকে নাম?
– ক্য ক্য ক্যানো বাবা কি হলো?
– বলছি না রিক্সা থেকে নাম?
…. আমি বাবার কথা মত রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম ।
– যে মেয়ে কে দেখেছিস তার কাছে যা আর আমার বাসায় ও আসবি না আর বাসায় খাবার ও বন্ধ।
…. আমি লক্ষ্য করলাম তুয়া হাসতেছে আমার দিকে তাকিয়ে। তারপর আমাকে ফেলে রেখে তুয়া কে নিয়ে চলে গেলেন .
এখন তো দেখছি বাবা আমার হবু বউয়ের সব কথা শুনছেন না জানি বিয়ের পর কি কি হবে আমার সাথে।
তারপর হাটা শুরু করলাম বাসায় দিকে আর মনে মনে তুয়ার উপর অনেক রাগ হলো আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে বলাতে। এভাবেই চলতে থাকে আমাদের দিনগুলি….
.
(১৫ বছর পর)
…… আজ আমি সমাজে প্রতিস্টিত। আজ আমার অনেক কিছুই আছে ভালো একটা চাকরী একটা বাড়ি তুয়া ও এখন আমার স্ত্রী। কিন্তু আমার পাশে নেই আমার বাবা। কারন বাবা আর নেই এ দুনিয়ায়। বাবার সাথে কাটানো সময় গুলো অনেক মিস করি।
বাবার রিক্সার পিছনে বসে ঘুরে বেরানো কে অনেক মিস করি। মিস করি যখন আমি স্কুলে যেতাম তখন বাবা আমাকে প্রতিদিন রিক্সায় করে স্কুলে দিয়ে যেতেন সেটা অনেক মিস করি। বাবার হাতের সেই মধুমাখা রান্না অনেক মিস করি।
বাবা আমার জন্য অনেক কিছু করেছে আমি বাবার জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। এসব কথা মনে হলে আমার দুচোখ বেয়ে পানি টপটপ করে পরে। আমি লক্ষ্য করতাম বাবার ছবির সামনে দাড়িয়ে আমার বউ তুয়া ও কান্না করতো মাঝে মাঝে হয়তো তুয়া ও বাবাকে মিস করতো। মিস করত আমাকে নিয়ে বাবার রিক্সায় উঠাটা।
বাবারা আসোলেই অনেক ভালো হয়। তারা তাদের সন্তানদের জন্য সবকিছু উজার করে দেয়।
… বাবা তোমাকে অনেক মিস করি,।
মনে মনে বলি বাবা তুমি ফিরে আসোনা আর একটি বার তোমাকে আমি রিক্সায় করে ঘুরাবো কিন্তু সেটা হওয়ার নয়।
বাবার ছবির সামনে দাড়িয়ে আছি এমন সময় আমার মেয়ে এসে বলল…..
– পাপ্পা পাপ্পা তুমি না আজকে দাদুর রিক্সায় করে আমাকে ঘুরাতে চেয়েছিলে এখন চলো ঘুরবো? (আমার মেয়ে)
…… আর তারপর আমি রিক্সা চালানো শুরু করলাম আর আমার মেয়ে ও বউ রিক্সার পিছনে বসে আসে। আমি বাবার চালানো সেই রিক্সা টা বিক্রি করে দেইনি কারন এই রিক্সাটার আমার জীবনের সাথে অনেক স্মৃতি জরিয়ে আছে।
আর আমি আমার পরিবার কে নিয়ে এই রিক্সাতে প্রতি সপ্তাহের ছুটিতে ঘুরে বেরাই আর তাতেই আমি অনেক আনন্দ পাই। আর একটা কথা বার বার বলি বাবা i love you & i miss you so much…..