রেলমন্ত্রীর পিএস কিবরিয়াকে আর বিরক্ত করবো না!

রেলমন্ত্রীর পিএস কিবরিয়া মজুমদার আমার রাজনৈতিক সহকর্মী ছিল। আমি যখন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রিয় কমিটির সদস্য কিবরিয়া তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার প্রচার সম্পাদক! আমি তাকে ২/৩ দিন ট্রেনের টিকেটের জন্য ফোন করেছি, সে যথাযথ মূল্যায়ন করেছে, আমি তার নিকট কৃতজ্ঞ!

২৬ এপ্রিল, ২০১৮ আমার এক লোক চট্রগ্রাম যাবেন, আমি সকাল সাড়ে ৮টায় কমলাপুর রেল স্টেশনে সূবর্ন এক্সপ্রেসের টিকেটের জন্য গেলাম, কিন্তু কাউন্টারে কোনো টিকেট পেলাম না, কিবরিয়াকে ফোন দিলাম, ফোন বন্ধ! আবার কাউন্টারে এসে চট্টগ্রামগামী যেকোন একটি ট্রেনের টিকেট চাইলাম কিন্তু পেলাম না, কিবরিয়াকে ম্যাসেজ পাঠালাম, ৯.৫৭ মিনিটে কিবরিয়া উত্তর দিলো- "Today ticket not possible"!

ব্যর্থ হয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভারকে বললাম (আমার ড্রাইভারের বাড়ি ফেনী), ড্রাইভার বলল, "স্যার, অাপনি গাড়িতে বসেন, টিকেট নিয়ে আসতেছি"। ড্রাইভার ঘুরে এসে বলল, স্যার টিকটটা ২টায় নিতে হবে, আমি ওর কথা বিশ্বাস করে ওকে নিয়ে আবার কমলাপুর ২টায় এলাম, ঠিকই টিকেট পেলাম এবং লোকটিকে চট্টগ্রাম পাঠালাম।

বাহাদুরি করতে কিবরিয়াকে ২.২৮টায় ম্যাসেজ পাঠালাম- "অসম্ভবকে সম্ভব করার জন্যই তুমি কিবরিয়া মজুমদার এবং আমি আব্দুল মতিন!"।

আজ আমি চট্টগ্রাম যাচ্ছি, ট্রেনের নাম সোনার বাংলা, সকাল ৭টায় কমলাপুর থেকে ট্রেনটি ছেড়ে এসেছে। এই ট্রেনের টিকেট আনতে গত পরশু দিন ১৮ জুন, ২০১৮ আমার জুনিয়রকে কমলাপুর পাঠিয়েছিলাম, আমি তখন এলাকায়, সে কমলাপুর টিকেট কাউন্টারে গিয়ে আমাকে ফোনে জানালো,

"স্যার, কাউন্টরে এসে কোন টিকেট পেলাম না, সব টিকেট বিক্রি হয়ে গেছে", আমি তখন কিবরিয়াকে ফোন করলাম, কিবরিয়ার ফোন বন্ধ পেয়ে জুনিয়রকে বললাম, "বিমানের টিকেট করো"। কিছুক্ষণ পর সে আবার আমাকে জানালো, "স্যার টিকেট পেয়েছি"। তখন আমি ব্যস্ত থাকায় কিছু জিজ্ঞেস করি নাই।

এখন ট্রেনে বসে জিজ্ঞেস করলাম, "টিকেট কোথায় পেলে?" সে জানাচ্ছে, ২টা টিকেটের মূল্য ২০০০/- টাকা, ২৬০০/- টাকা দিয়ে কালো বাজার থেকে কিনেছে! অামার মনে পড়ে গেল, আমার ড্রাইভারও ৮০০/- টাকার টিকেট ১১০০/- টাকা দিয়ে কিনেছিল, "কালো বিড়াল না থাকলেও কালো বাজার আছে!"

সোনার বাংলা ট্রেন চলছে, সাদা ওভারকোট পরা ভদ্রলোকরা টিকেট চেক করতে আসলেন, একজনকে পেলেন টিকেটবিহীন সিটে বসে আছেন, তাকে উঠিয়ে নিয়ে গেলেন, কিছুক্ষণ পর আবার তাকে নিয়ে এসে সিটে বসিয়ে দিলেন,

আমি ভদ্রলোকদের জিজ্ঞেস করলাম, "কি ব্যাপার?" সাদা ওভারকোট পরা ভদ্রলোকরা উত্তর দিলেন, "জরিমানা করে বসিয়ে দিয়েছি", আমি বললাম, " সিটটা খালি আসলো কি করে?

আমার লোক দুইদিন আগেই গিয়ে দেখেছে, কোন সিট খালি নাই, কোন টিকেট নাই!" ভদ্রলোকরা উত্তর না দিয়ে বিরক্তবোধ করে চলে গেলেন। একটু পর একজন এসে বলল, "স্যার, কেবিনে যাবেন? কেবিন খালি আছে, আরামে ঘুমাবেন।"

আমি জিজ্ঞেস করলাম, "কত দিতে হবে?"। ছেলেটি ১৫০০ টাকা চাইলো। আমি আমার জুনিয়রকে কেবিনটি দেখে আসতে পাঠালাম এবং কানে কানে ছবি তুলে নিয়ে আসতে বললাম। ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ আমি আমার ফেইসবুক ওয়ালে লিখেছিলাম, "যেই সমাজে অন্যায় অনিয়ম সর্বত্র, সেই সমাজে আমি রাজনীতিবিদ!

অথচ, আমার কোন দায় নাই!" আজকের অভিজ্ঞতায় আমার মন বলছে, "আমরা কোনদিন ভালো হতে পারবো না!" মনে মনে ভাবলাম, "আর কোনদিন কিবরিয়াকে বিরক্ত করবো না!"

সুহৃদ প্রাণপ্রিয় পাঠকগণ, আমার আজকের টিকেটের ছবি, খালি কেবিনের নম্বর সংবলিত ছবি, কিবরিয়ার ম্যাসেজের ছবি, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ তারিখে ফেইসবুকে পোস্ট করা আমার স্ট্যাটাসটির ছবি আমি আপনাদের জন্য পোস্ট করলাম। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন, মহান সৃষ্টিকর্তা আমাদের সহায় হউন! আমীন!

শেয়ার করুন: