তক্ষক

তক্ষকের দাম লাখ লাখ টাকা কেন?

কচ্ছপের হাড় পাচারকারীদের হাত ধরেই পশ্চিমবঙ্গের মালদহকে করিডর বানিয়ে বাংলাদেশ থেকে চীন, সিঙ্গাপুর চলে যাচ্ছে তক্ষক। ডুয়ার্স তথা উত্তরবঙ্গের জঙ্গলে কড়াকড়ির জেরে মালদহকে গ্রিন করিডর বানিয়ে কোটি কোটি ডলারের ব্যবসা করছে তক্ষক পাচারকারীরা।

বিএসএফের গোয়েন্দাবাহিনী ও বনদপ্তর সূত্রে এমন তথ্যই মিলেছে। চীনের পরম্পরাগত ওষুধ নির্মাতাদের বিশ্বাস, তক্ষক তথা গেকোর শরীরে চিরযৌবন এবং প্রজনন শক্তিবর্ধক ক্ষমতা থাকে। ফলত গ্রামবাংলার জঙ্গলে টিকিটিকির মতো প্রাণীটি লক্ষ লক্ষ টাকায় চীন, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়াতে বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।

প্রায় একই কারণে ভারতের বিভিন্ন এলাকা থেকে কচ্ছপের হাড় বাংলাদেশে পাচার হচ্ছে। বিপন্ন প্রজাতির প্রাণীর দেহাংশ পাচারে মালদহ করিডর হয়ে ওঠায় বিএসএফ এবং বনদপ্তরের কর্তারা যথেষ্টই উদ্বিগ্ন।

বিএসএফের আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) রাজেশ মিশ্র বলেন, প্রাণীপাচার রুখতে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে। বনদপ্তর ও একাধিক নিরাপত্তা সংস্থার সঙ্গে এনিয়ে মিলিতভাবে কার্যকরী পদক্ষেপ করা হচ্ছে।

মালদহের ডিএফও কৌশিক সরকার বলেন, একাধিক ঘটনায় প্রমাণ মিলেছে বাংলাদেশ থেকে তক্ষক আসছে। আমরা পাচারচক্র সম্পর্কে বিস্তারিতভাবে অনুসন্ধান করছি। এসব প্রতিরোধ করতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

টিকিটিকির মতো ছোট প্রাণীটি রংবেরঙের দেখতে হয়। অসমিয়া ভাষায় একে তক্ষক বলা হয়। বাংলাতেও সেই নামে পরিচিত। একদা ডুয়ার্সের জঙ্গল থেকে দেদার পাচার হয়ে গিয়েছে এই প্রাণীটি।

একে ঘিরে চীন, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর সহ বেশকিছু দেশে অদ্ভুত রহস্যময় কিছু বিশ্বাস জড়িয়ে আছে। চীন দেশে মনে করা হয় গোকো বা তক্ষক ড্রাগন থেকে উৎপন্ন হয়েছে। তাই এতে চিরযৌবন ও প্রজনন ক্ষমতাবর্ধক শক্তি থাকে। চীনের পরাম্পরা চিকিৎসা ব্যবস্থায় তাই গেকোকে ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়।

জিনসেং নামে একটি ঔষধি গাছের সঙ্গে তক্ষককে জুস করে খাওয়া হয়। এই বিশ্বাসের জেরে চীন, সিঙ্গাপুরের মতো দেশে একেকটি পূর্ণবয়স্ক তক্ষক ১০-১৫ লক্ষ টাকায় বিক্রি হয়।

ডুয়ার্স, আসামের জঙ্গল থেকে এই প্রাণী পাচারে কড়াকড়ি তৈরি হওয়ায় এবার পাচারকারীদের নজর বাংলাদেশের জঙ্গলের দিকে পড়েছে। বাংলার জঙ্গলেও এই তক্ষক প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। সেখান থেকেই এই তক্ষক সংগ্রহ করে মালদহকে করিডর করে চীনে পাঠিয়ে দিচ্ছে পাচারকারীরা।

সম্প্রতি মালদহে দু’টি ঘটনায় পাঁচটি পূর্ণবয়স্ক গেকো বিএসএফ এবং বনদপ্তরের যৌথ অভিযানে ধরা পড়ে। তারপরেই তদন্তে উঠে আসে নতুন করিডরের তথ্য।

বনদপ্তর ও বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, বাংলাদেশ থেকে কালিয়াচক, হবিবপুর, পুরাতন মালদহের সীমানা দিয়ে তক্ষক মালদহে চলে আসছে। তারপর ট্রেন বা সড়ক পথে কলকাতা হয়ে ড্রাগনের দেশে সেগুলি পাড়ি দিচ্ছে। এই পাচারচক্রের সম্পর্কে খোঁজ নিতে গিয়ে উঠে এসেছে আরো কিছু তথ্য।

সম্প্রতি মালদহ সীমান্তকে ব্যবহার করে বারবার কচ্ছপের হাড় বাংলাদেশে পাচারের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তাৎপর্যপূর্ণভাবে বাংলাদেশের স্থানীয় চিকিৎসকদের একাংশের প্রচার কচ্ছপের হাড়ে বলবর্ধক ক্ষমতা থাকে। আর সেই প্রচারের জেরে বাংলাদেশে এখন কচ্ছপের হাড় বহুমূল্য হয়েছে।

তক্ষক ও কচ্ছপ উভয়ের ক্ষেত্রেই জনবিশ্বাসের কোনো বৈজ্ঞানিক ভিত্তি মেলেনি। কিন্তু কচ্ছপের হাড় পাচারের সূত্র ধরেই বাংলাদেশ থেকে তক্ষক আমদানি করে একশ্রেণীর পাচারকারী ফুলেফেঁপে উঠছে। গোয়েন্দাদের দাবি, এই পারস্পারিক পাচারের ক্ষেত্রে মালদহকে গ্রিন করিডর বানিয়েছে চোরকারবারিরা।

শেয়ার করুন: