কাকাতুয়া

সহজে পোষ মানে কাকাতুয়া

কৌশিক সরকার কাব্য: লাল ঝুঁটি কাকাতুয়ার গানটি অনেক শুনেছি, কিন্তু সে লাল ঝুঁটি দেখার সৌভাগ্য হয়নি। তবে ঝুঁটিওয়ালা অস্ট্রেলিয়ান কাকাতুয়া নামে সুপরিচিত এই পাখিটি আমাদের দেশে সহজলভ্য। এখন কেইজ বার্ড বা সৌখিন পাখি হিসেবে ঝুঁটিযুক্ত ককাটেল আমাদের দেশসহ সারা পৃথিবীতে জনপ্রিয়! খুব সহজে পোষ মানে এরা, এমনকি অনুকরণ করতে পারে অনেক শব্দেরও!

আমাদের কাছে তুমুল জনপ্রিয় হলেও পাখিটির স্বভাব বা চারিত্রিক বৈশিষ্টসমূহ নিখুঁতভাবে কোথাও জানা যায় না। তাই সৌখিন পাখি পালকদের জন্য কাকাতুয়ার চারিত্রিক (Body language) বৈশিষ্ট্যসমূহ সরলভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি-

গলা উচু করে স্থির দৃষ্টিতে তাকানো: হঠাৎ কোন শব্দে আশ্চর্য (Surprised) হওয়া বা উত্তেজনাপূর্ণ (excitement) অনুভুতি হওয়া, এবং সেই উৎসের প্রতি মনযোগ দেয় এই কাকাতুয়া!

রেগে গেলে ঝুঁটি লেপ্টে দেওয়া: পাখিটা রেগে গেলে তার চোখ যথাসম্ভব বড় হয়ে যাবে এবং কামড় দিতে চাইবে। এছাড়া এ সময় তার শরীরের সমস্ত পালক লেপ্টে নিয়ে দেহকে সরু (Skinny) করে দেয়। এমনকি মাথার সুন্দর ঝুঁটিটাও লেপ্টে দেয়।

মাথা উপড়-নিচ করে দোলানো: বাচ্চা অবস্থায় বা সদ্য খেতে শেখা বাচ্চারা এটা বেশী করে। এর মানে এরা ক্ষুধার্ত বা খেতে চায় আপনার কাছে। পরিণত (Adult) পাখি এমন করার অর্থ সে আপনার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাইছে!

বুক ফুলিয়ে ধরা: প্রধানত পুরুষ ককাটেলের বৈশিষ্ট্য এটি। এসময় পাখি তার দুই পাখা সামান্য ছড়িয়ে ধরে (পেছন থেকে দেখলে লাভ সিম্বলের মত দেখায়)। নিজেকে জাহির করতে (showing off), আস্ফালন (Bragging) করার সময় এটি করে থাকে। অনেকসময় যখন খুব বেশী আনন্দে থাকে তখনও এমন করতে দেখা যায়!

মাথা নুইয়ে দেয়া এবং সেভাবেই রাখা: গর্বিত হোন, আপনার পাখি আপনাকে তার জীবন দিয়ে বিশ্বাস করে! আর সে চায় আপনি তার মাথা-ঘাড়ে হাত বুলিয়ে তাকে আদর করুন।

হাটু ভেঙ্গে ডানা অর্ধেক মেলে ধরে রাখা (অনেকসময় একই সাথে কিছুটা সামনে ঝুকে থাকা): যদি আপনার পাখির পায়ে চেইন থাকে, খুলে দিন, সে উড়ে অন্যত্র যেতে চায়। আর যদি চেইন না থাকে, তাহলে সে তার লক্ষ্যবস্তু সম্পর্কে তখনো পুরোপুরি আত্মবিশ্বাসী (Confident) নয়!

দুই ডানা সম্পূর্ণ মেলে ধরা: নিজের অধিকারটাকে বোঝাতে চায় তারা (প্রপার্টি ওনারশিপ)।

কোন শক্ত বস্তুতে মাথা নিচু করে পরপর ঠোকর: মূলত পুরুষ ককাটেল এটি করে (অনেক সময় সে তার ঠোট (beak) ঘষছে মনে হতে পারে)। এর অর্থ, এই জিনিস/এরিয়া আমার! আপনি যদি এসময় তার সামনে আঙ্গুল দিয়ে সমান তালে টোকা (tapping) দেন, তাহলে তার সাথে আপনার যুদ্ধ লেগে যাবে !

খুব দ্রুত সামনে পিছে হাটা: অনেকসময় একইসাথে সামান্য নরম সুরে ডাক দিতে দিতে এমন করে। এর মানে সে কোন কিছুর জন্য উদগ্রীব! খাচার ভেতরে টেম বার্ড (পোষ মানা পাখি) বের হতে চাইলে আপনাকে দেখে এমন করবে।

আঙ্গুলে ওঠার আগে ঠোঁট ছোয়ানো: মনে হতে পারে সে কামড় বসাবে, কিন্তু সে আসলে পরীক্ষা করে দেখছে যেখানে সে দাঁড়াতে যাচ্ছে সেটা কতটা নির্ভরযোগ্য বা শক্তপোক্ত! এবং আঙ্গুলে ওঠার আগে কিছুটা ব্যালেন্স সে ঠোঁটে নিয়ে এক পা তুলে দেয়।

ঘাড় বাকা করে উপরে বা নিচে এক চোখ দিয়ে দেখা: ঘার একদিকে এলিয়ে পাখি কোন নির্দিষ্ট লক্ষ্যবস্তুতে মনোনিবেশ করে, তার চোখের অবস্থানের কারণে আসলে তাকে এভাবে তাকাতে হয়!

বুক বেয়ে উঠে মুখ, বুক এবং ঠোঁট ঘষা: ভয় বা বিরক্ত হতে পারেন, কিন্তু পাখিটি আসলে আপনার সাথে আদর-সোহাগ করছে!

মৃদু শব্দ করতে করতে কোন কিছুর সাথে মলদ্বার ঘঁষতে থাকা: পুরুষ এবং মেয়ে পাখি উভয়ের ক্ষেত্রে পরিণত বয়সে এমনটা করতে দেখা যায়, যার অর্থ মেটিং (মিলন) চাহিদা তৈরি হওয়া!

মাথা পেছনে গুজে রাখা: সুস্থ পাখির জন্য আয়েশি ঘুম (আবহাওয়ার তারতম্যে হঠাৎ ঠান্ডা অনুভূত হলে)। আর অসুস্থ পাখির জন্য রাজ্যের সব ভুলে বিশ্রাম/ঘুম!

খুব দ্রুত মাথা নাড়া: প্রথমত, বাচ্চা অবস্থায় খাওয়ার সময়, যার অর্থ খাবারটা দারুণ। এ সময় খুশিতে সে শব্দ করে। দ্বিতীয়ত, কোন উচ্চমাত্রার তীক্ষ্ণ অস্বস্তিকর শব্দ কিংবা উচ্চ আওয়াজে শ্রুতিমধুর কোন সুর-তালের শব্দ শুনলে! (মাইকেল জ্যাকসনের Beat it ছেড়ে শুনিয়ে দেখতে পারেন)

বার বার মাথা ঘুরিয়ে (rolly head) পিঠে ঘষা দেয়া: মাঝে মাঝে নিজের সাথী কিংবা আপনার কাছ থেকে মাথায় চুলকানিযুক্ত আদর না পেলে, এটি তার নিজ দায়িত্বে করে নেয়া বা পরিচ্ছন্নতা কার্যের অংশ বলতে পারেন! তবে এটি যদি পাখিকে ঘন ঘন এবং অস্বাভাবিক দ্রুততায় করতে দেখেন তাহলে ভয়ের কথা। তার সেন্ট্রাল নার্ভাস সিস্টেম এক প্রকার ভাইরাসে আক্রান্ত!!

এক পা তুলে ঘুম: খুব আনন্দের বিষয়! আপনার পাখি ১০০% ফিট!! একপায়ে ভর করে, অন্য পা খানা একটু রিল্যাক্সে রেখেছে।

আদর নেয়া/বিশ্রামরত অবস্থায় এক চোখ বন্ধ এক চোখ খোলা: সাধারণত যে চোখটি আপনার দিকে সেটি বন্ধ থাকলেও অন্যটি খোলা রাখে। নিরাপদ বা বিশ্বাসী দিকে চোখ নিশ্চিন্তে বন্ধ এবং অন্যদিকে নজরদারি রেখে বিশ্রাম নেয়া!

গা ফুলিয়ে থাকা: আদর করার সময় গা সামান্য ফুলিয়ে রাখা স্বাভাবিক কিন্তু পাখি যদি দীর্ঘ সময় এমনি গা ফুলিয়ে থাকে/গা ফুলিয়ে মুখ গুজে রাখে/গা ফুলিয়ে খাঁচার নিচে বসে থাকে, তাহলে পাখি অসুস্থ!

দুই পাটি ঠোঁট ঘষা: দেখে এবং তারচে' শব্দ শুনে স্পষ্ট বোঝা যায় পাখি দু'পাটি ঠোঁট ঘষছে (Grinding)। এর মানে খাওয়া দাওয়াসহ সব মিলিয়ে সে সন্তুষ্ট, এখন সে রিলাক্সিং মুডে আছে! এর পর হয়ত বা সে চোখ বুজে একটা স্বল্প বা দীর্ঘ ঘুমও দিয়ে ফেলতে পারে।

মুখ এবং কানের অংশের পালক কিছুটা ফুলিয়ে ধরা: মজাদার কিছু শুনতে পেয়েছে বা যা শুনেছে তা সে শুনতে চাচ্ছে! (যেসব শব্দ পাখি এমন খেয়াল করে শোনে, সেসব শব্দ সে পরবর্তীতে সহজে অনুকরণ করতে পারবে বলে অনেক ককাটেল পালনকারী বিশ্বাস করে!)

বারবার হা করা/হাই তোলা: পরিচ্ছন্নতা কার্য সম্পাদন শেষে এবং অন্যান্য অনেক সময়ে পাখিকে হা করে হাই তোলার মত করতে দেখা যায়। এটি আসলে তার চোয়াল এবং ক্রপ ঠিকঠাক (readjusting) করে নেয়া!

নাক চুলকে কয়েকটা হাঁচি দেয়া: আপনার আমার মতই নাকে খোচা মেরে শ্বাসনালী টা পরিষ্কার করে নেয় তারা!

দুই পাখা একসাথে পিঠের উপর উচু করে তোলা: এরা এভাবে আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করে! অথবা এক পাখা এক পা পেছনে টান করে ধরে আড়মোড়া ভাঙার চেষ্টা করে। লেখক: সৌখিন পাখি পালক।

শেয়ার করুন: