ফোন

সচিব-মন্ত্রীরা যত টাকা দামের ফোনসেট পাচ্ছেন

মন্ত্রিসভা আজ ওকে করলেই সরকারের ভারপ্রাপ্ত সচিব, সচিব, সিনিয়র সচিব, মন্ত্রিপরিষদসচিব, উপমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী এবং মন্ত্রীরা মোবাইল ফোনসেট কেনার জন্য ৭৫ হাজার টাকা করে পাবেন। তাঁরা মোবাইলে আনলিমিট কথা বলতে পারবেন এবং ইন্টারনেট ব্যবহার করতে পারবেন।

আনলিমিট কল করার আওতায় আনা হচ্ছে মাঠ প্রশাসনের ওসি, ইউএনও, এডিসি, ডিসি, বিভাগীয় কমিশনারদেরও। এসব বিষয় অন্তর্ভুক্ত করে ‘সরকারি টেলিফোন, সেলুলার, ফ্যাক্স ও ইন্টারনেট নীতিমালা, ২০১৮’-এর খসড়া আনুমোদনের জন্য আজ মন্ত্রিসভা বৈঠকে উপস্থাপন করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তাঁর তেজগাঁওয়ের কার্যালয়ে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। খসড়া নীতিমালা অনুযায়ী অতিরিক্ত সচিব ও যুগ্ম সচিবরা মাসে তিন হাজার ৮০০ টাকা ফোন-ভাতা পাবেন। এর মধ্যে এক হাজার ৫০০ টাকা মোবাইল ফোনের বিল।

অবশিষ্ট দুই হাজার ৩০০ টাকা দিয়ে তিনি বাসার ও অফিসের বিল পরিশোধ করবেন। উপসচিবরা দুই হাজার টাকার টেলিফোন বিল পাবেন। এর মধ্যে এক হাজার ২০০ টাকা মোবাইল ফোনের বিল। অবশিষ্ট টাকা দিয়ে তিনি বাসা ও অফিসের টেলিফোন বিল পরিশোধ করবেন। বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসিরাও তাঁদের মর্যাদা অনুযায়ী টেলিফোন ও ইন্টারনেট বিল পাবেন। এখন থেকে সরকারি টেলিফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারের বিল কর্মকর্তাদের বেতনের সঙ্গে পরিশোধ করা হবে।

তাঁরা তা অপারেটরকে ব্যক্তিগতভাবে পরিশোধ করবেন। আগে টেলিফোন বিল সরকার বিটিসিএল অথবা প্রাইভেট অপারেটরকে পরিশোধ করত। এখন তা সরাসরি কর্মকর্তাদের পরিশোধ করা হবে। খসড়া নীতিমালায় বলা হয়েছে, প্রাধিকার না থাকলে সরকারি টেলিফোন ব্যবহার করা যাবে না। প্রাধিকার না থাকার পরও কেউ তা ব্যবহার করলে সরকারি অর্থের অপচয় করার দায়ে অভিযুক্ত হবেন।

তবে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ জনসেবায় নিয়োজিত কর্মচারী সরকারি টেলিফোন, মোবাইল ব্যবহার করতে পারবেন। বিষয়টি এসংক্রান্ত কমিটি নির্ধারণ করবে। প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওএসডি থাকলে তাঁর সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা যাবে না। তিনি যে মন্ত্রণালয় থেকে বেতন উঠাবেন ওই মন্ত্রণালয় বিল পরিশোধ করবে। একজন প্রাধিকারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ইন্টারনেট সংযোগের প্রয়োজনীয় মডেম এবং আনুষঙ্গিক ব্যয় পাবেন।

সরকারের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপমন্ত্রী, মন্ত্রিপরিষদসচিব, মুখ্য সচিব, সিনিয়র সচিব, পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য, পুলিশের মহাপরিদর্শক, সচিব ছাড়াও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল, প্রশাসনিক ট্রাইব্যুনাল এবং শ্রম অপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের জন্যও কোনো ব্যয়সীমা থাকবে না। অধিদপ্তরের প্রধান, হিসাব মহানিয়ন্ত্রক, ম্যানেজিং ডিরেক্টর, উপ মহাপুলিশ পরিদর্শক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার, উপ পুলিশ কমিশনার, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের জন্য টেলিফোন মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারের ক্ষেত্রে কোনো ব্যয়সীমা থাকবে না। মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর পিএস মাসিক এক হাজার ৬৫০ টাকা বিল পাবেন।

আজকের মন্ত্রিসভা বৈঠকে সরকারি টেলিফোন নীতিমালা ছাড়াও ‘হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট আইন, ২০১৮’-এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট ইমারতের নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণ উপকরণ-শিল্প এবং বসতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সমস্যার ওপর কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান, দেশজ নির্মাণ উপকরণের প্রাপ্যতা, উন্নয়ন, ব্যবহারসহ পরিবেশবান্ধব নির্মাণ উপকরণের উন্নয়নে গবেষণা করবে।

তা ছাড়া নির্মাণকাজের জন্য উপযোগী ও প্রয়োজনীয় নির্মাণসমাগ্রী ও উপকরণ ব্যবহারে উৎসাহিত করা, ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে মাননিয়ন্ত্রণ কৌশলের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও তা অনুসরণে উৎসাহ দেওয়া, গৃহায়ণ খাতে ভূমিকম্পসহ দুর্যোগসহনীয় এবং পরিবেশবান্ধব নির্মাণ প্রযুক্তি, স্বল্প খরচে ইমারত নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা ও ইমারত রক্ষণাবেক্ষণের আধুনিক কৌশল উন্নয়নে গবেষণা ও উদ্যোগ নেবে। পাশাপাশি সাশ্রয়ী ও টেকসই নতুন উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্যোগ গ্রহণ করবে।

এসংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, বিশ্ববিদ্যালয় ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপনসহ ইনস্টিটিউটের কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ও স্বীকৃতির জন্য যৌথ সমীক্ষা পরিচালনা ও গবেষণা কার্যক্রম গ্রহণ করবে।

একই সঙ্গে বিকল্প নির্মাণসামগ্রী, প্রযুক্তিবিষয়ক গবেষণাসহ বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড, নির্মাণসংক্রান্ত কোড, নীতিমালা প্রণয়ন ও হালনাগাদ করবে। এ ছাড়া গৃহায়ণ ও ইমারত নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারের অনুমোদন নিয়ে গবেষণা, কারিগরি ও বৈজ্ঞানিক কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে ফেলোশিপ ও বৃত্তি প্রবর্তন করতে পারবে।

এ ছাড়া এসংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান ও গ্রহণের জন্য দেশি-বিদেশি, আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার সঙ্গে সরকারের অনুমতিসাপেক্ষে দ্বিপক্ষীয় বা বহুপক্ষীয় চুক্তির ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ইমারত নির্মাণসংক্রান্ত বিষয়ে সমস্যার পরামর্শ প্রদান, সর্বশেষ তথ্য প্রকাশ, প্রচার ও সংরক্ষণ, ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদন, জার্নাল, কারিগরি প্রতিবেদনসংক্রান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করতে পারবে। আইনে ইনস্টিটিউট পরিচালনা পরিষদ গঠনে ২২ সদস্যবিশিষ্ট পরিচালনা পর্ষদ গঠনের কথা বলা হয়েছে।

শেয়ার করুন: