লিভার, যকৃৎ

লিভারের রোগ হলে কী খাবেন, কী খাবেন না?

জন্ডিস বলতে সাধারণত লিভারের একিউট প্রদাহ বা একিউট হেপাটাইটিসজনিত জন্ডিসই আমরা বুঝে থাকি। আমাদের দেশে একিউট হেপাটাইটিস বা তাৎক্ষণিক রোগের প্রধান কারণ হেপাটাইটিস-ই, এ এবং বি ভাইরাস। এর মধ্যে প্রথমটি পানিবাহিত, দ্বিতীয়টি খাদ্যবাহিত আর তৃতীয়টি ছড়ায় মূলত রক্তের মাধ্যমে।

হেপাটাইটিস-এ ভাইরাস প্রধানত শিশুদের জন্ডিসের কারণ। তবে যে কোনো বয়সী মানুষ হেপাটাইটিস-ই এবং বি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারেন। এ ছাড়া বি-ভাইরাসে আক্রান্ত হলে সি-ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়। সারা বিশ্বে প্রায় ৪ কোটি মানুষ বি এবং সি ভাইরাস বহন করে বেড়াচ্ছে। এদের মধ্যে প্রতিবছর প্রায় ১৪ লাখ মানুষ মারা যায় রোগাক্রান্ত হয়ে।

আমাদের প্রথাগত বিশ্বাস হচ্ছে-জন্ডিস হলেই বেশি বেশি পানি পান করতে হবে। খেতে হবে বেশি করে আখের রস, ডাবের পানি, গ্লুুকোজের শরবত ইত্যাদি। ব্যাপারটি কিন্তু এমন নয়। জন্ডিস রোগীকে সাধারণ মানুষের মতোই পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি পান করতে হবে। রোগীরা অনেক সময় বমি বা বমি-বমি ভাব এবং খাবারে অরুচির কারণে যথেষ্ট পরিমাণ পানি পান এবং অন্যান্য খাবার খেতে পারেন না। সেক্ষেত্রে রোগীর শিরায় স্যালাইন দিতে হবে।

বেশি বেশি পানি বা তরল খেলে প্রস্রাবের রঙ অনেকটা হালকা বা সাদা হয়ে আসে বলে জন্ডিসের রোগীরা বেশি বেশি তরল খাবার খেয়ে থাকেন। তবে বাস্তবতা হচ্ছে, এতে জন্ডিস এতটুকুও কমে না। বরং বিশ্রামই যেখানে জন্ডিস রোগীর আসল চিকিৎসা, সেখানে প্রস্রাব করার কারণে বারবার টয়লেটে যেতে হলে রোগীর বিশ্রামে ব্যাঘাত ঘটে, যা রোগীর জন্য মোটেও মঙ্গলজনক নয়। আখের রস আমাদের দেশে জন্ডিসের একটি বহুল প্রচলিত ওষুধ। কিন্তু সাম্প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে,

রাস্তার পাশে দূষিত পানিতে যে আখ ভিজিয়ে রাখা হয়, সেই পানি থেকে অনেক সময় আখের রসে এবং তারপর ওই রস থেকে হেপাটাইটিস-এ বা ই ভাইরাস মানুষের শরীরে ছড়াতে পারে।

আমাদের আরেকটি বিশ্বাস, জন্ডিসের রোগীকে হলুদ দিয়ে রান্না করা তরকারি খেতে দেওয়া যাবে না। কারণ এতে রোগীর জন্ডিস বাড়তে পারে। আসলে রক্তে বিলিরুবিন নামক একটি হলুদ পিগমেন্টের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় জন্ডিস দেখা দেয়। এর সঙ্গে খাবারের হলুদের কোনো সম্পর্ক নেই। একইভাবে জন্ডিসের রোগীকে তেল-মসলা না দিয়ে শুধু সিদ্ধ খাবার খেতে দেওয়ারও কোনো যুক্তি নেই।

তবে মনে রাখতে হবে, বাইরের খাবার সব সময় পরিহার করতে হবে। বিশেষ করে খুব সাবধান থাকতে হবে পানির ব্যাপারে। কারণ হেপাটাইটিস-এ বা ই-এর মতো পানিবাহিত ভাইরাসগুলো এসবের মাধ্যমেই ছড়ায়। বিশেষ করে গর্ভবতীর খুব সাবধান থাকা উচিত। গর্ভাবস্থার শেষ তিন মাসে যদি হেপাটাইটিস-ই হয়, তবে তা থেকে মা ও গর্ভের শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা ৫০ শতাংশ। জন্ডিস রোগে আক্রান্ত মা নিশ্চিন্তে তার সন্তানকে দুধ পান করাতে পারেন।

তবে মায়ের যদি হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসজনিত জন্ডিস হয়ে থাকে, তবে শিশুর জন্মের সঙ্গে সঙ্গে হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের টিকা এবং ইমিউনোগ্লোবুলিন ইঞ্জেকশন দেওয়া জরুরি। কারণ মায়ের দুধের মাধ্যমে না ছড়ালেও, মায়ের ঘনিষ্ঠ সাহচর্যে শিশুর হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। আমাদের দেশে অনেক হেপাটাইটিস-বি ভাইরাসের রোগী এভাবেই এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকেন।

শেয়ার করুন: