মেহেরপুর

বিড়ির নেশায় আসক্ত শিশু ; নেশা কাটাতে এ কী করলো বাবা-মা!

বিড়ির নেশায় আসক্ত শিশু- মাত্র ১১ বছর বয়স তার, নাম পারভেজ ওরফে পবন। কিন্তু এখন সারাদিন তাকে থাকতে হয় শেকলে বন্দী। কারণ ছেলে জরিয়ে গেছে বিড়ির নেশায়। একদিকে পবন শিকলবন্দি জীবনযাপন করছে অন্যদিকে বাবা-মা ভাসছেন চোখের জলে। মেহেরপুরের গাংনী উপজেলার কাজীপুর গ্রামের মোল্লাপাড়ার দিনমজুর হোসেন আলীর এক ছেলে ও এক মেয়ের মধ্যে পবন বড়। চার সদস্যের পরিবার নিয়ে দিনমজুরীর আয়ে কোনো রকমে সংসার চলে।

অনেক স্বপ্ন নিয়ে পবনকে মাদরাসায় ভর্তি করেছিলেন তার বাবা। কিন্তু এক বছর আগে হঠাৎ সে বিড়ির নেশায় জড়িয়ে পড়ে। বিষয়টি নজরে এলে বাবা-মা তাকে নেশা থেকে ফেরাতে সব রকম চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। শনিবার বিকেলে পবনদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে টিভি দেখছে পবন। তার দু’হাত শিকল দিয়ে বেঁধে তালা দেয়া। খুঁটির সঙ্গেই রয়েছে বড় আরেকটি শিকল। রাতে খুঁটির শিকলের সঙ্গে তার হাতের শিকল বেঁধে রাখা হয়। পবনের চোখে মুখে খাঁচায় বন্দী পাখির মতো মুক্তির প্রতীক্ষা।

এর কারণ জানতে চাইলে হাউমাউ করে কেঁদে ওঠেন পবনের মা। চোখের পানি মুছতে মুছতে তিনি বলেন, সখ করে কেউ কি তার আদরের সন্তানকে এভাবে বেঁধে রাখে? এই বয়সে যদি বিড়ি খায় তাহলে বড় হলেতো অন্য নেশায় জড়িয়ে যাবে। তাকে ভালো করতেই শিকল দিয়ে বেঁধে রেখেছি। পবন জানায়, বছর খানেক আগে কাজীপুর সীমন্ত এলাকায় খেলতে গিয়ে সেলিম নামের এক ব্যক্তি তাকে একটি বিড়ি টানতে দেয়। প্রতিদিন খেলতে গেলেই সে বিড়ি দিত। এভাবেই সে বিড়ির নেশায় জড়িয়ে পড়ে। তবে এখন সে নেশা থেকে ফিরতে চায়।

পবনের মা বলেন, কোনো শাসন কাজে আসেনি। মাদরাসায় না গিয়ে সে বিভিন্ন লোকের সঙ্গে বিড়ি পান করে বেড়াতো। অন্য লোকের খেয়ে ফেলে দেয়া বিড়ির অংশও পবন তুলে নিয়ে টানা শুরু করত। কেউ বিড়ি দিলে তার পেছনেই সারা দিন ঘুরে বেড়াত। বিড়ির নেশায় সে মারাত্মকভাবে আসক্ত। কিন্তু চিকিৎসার মাধ্যমে তাকে নেশামুক্ত করার খরচ আমাদের পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব না।

পরে বিষয়টিকে জানানো হলে গাংনী উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিষ্ণুপদ পাল বলেন, যদিও পরিবার বাধ্য হয়ে করেছে তারপরও বিষয়টি অমানবিক। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি। এ বিষয়ে দ্রুত একটি ভালো ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন তিনি।

শেয়ার করুন: