পাখির পায়ে পরানো হয় আংটি

আগে কবুতরের পায়ে বেধে দেয়া হতো চিঠি, এখন পাখির পায়ে পরানো হয় আংটি। কি পাখি কখন আসে, কখন যায় তা জানার জন্য তাদের পায়ে পরিয়ে দেয়া হয় এক ধরণের হালকা এলুমিনিয়ামের তৈরী নম্বরযুক্ত আংটি। পরিয়ে দেয়া বিভিন্ন সাইজের আংটির নম্বরের সঙ্গে লেখা থাকে ‘কোন লোক যদি আংটিযুক্ত পাখি পায় তবে সে বা তারা যেন আংটি যে বা যারা পরিয়েছে তাদের জানিয়ে দেয়’।

এভাবে সনাক্ত করা হয়, কোথাকার পাখি, কখন কোখায় যায় আবার ফিরে আসে। পরিযায়ী পাখির চলমান অনেক গবেষণার অংশ হিসেবে কেউ কেউ এ পথ বেছে নিয়েছেন। বিশ্ব পরিযায়ী পাখি দিবসে বাংলাদেশ প্রাণি বিজ্ঞান সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও উপ প্রধান বন সংরক্ষক(অব.) ড. তপন কুমার দে এ তথ্য জানান।

দেশ বিদেশের বিভিন্ন পাখি বিশেষজ্ঞদের বরাতে তিনি জানান, পরিযায়ী পাখি নিয়ে অনেক গবেষণা হচ্ছে। কোন প্রজাতির পাখি কখন আসে যায় সেটা জানার জন্য জাল পেতে পাখি ধরে তাদের পায়ে, এক ধরণের হালকা এলুমিনিয়ামের তৈরী নম্বরযুক্ত আংটি পরিয়ে দেয়া হয়। বিভিন্ন প্রজাতির পাখির জন্য বিভিন্ন সাইজের আংটি থাকে।

আংটির ওপরে নম্বরের সঙ্গে এও লেখা থাকে যে কোন লোক যদি আংটিযুক্ত পাখি পায় তবে তারা যেন খবরটি যারা আংটি পরিয়েছেন তাদেরকে জানান। যেমন বোম্বে নেচারাল হিষ্ট্রী সোসাইটির আংটিতে লিখা থাকে ইনফরম বোম্বে নেট. হিস্ট. সোক.।

যে বছর আংটি পরানো হলো পরের বছর সেখানে জাল পেতে পাখি ধরে তাদের পায়ের আংটির সঙ্গে মিলালে দেখা যাবে আগের বছরের পাখিরা ফিরে এসেছে কিনা? এছাড়া বর্তমানে সেটেলাইট কলার, রেডিও কলার, ডিজিটাল ট্যাগ ও মাইক্রোচিপস ব্যবহার করা হচ্ছে এবং এর মাধ্যমে নতুন নতুন তথ্য ও উপাত্ত পাখিবিদরা সংগ্রহ করছেন।

পরিযায়ী পাখি প্রতি বছর যে ভৌগলিক পথে এক দেশ থেকে অন্য দেশে বা এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে নিয়মিত ভাবে পরিভ্রমন করে থাকে। যা উড়ন্ত পথ বা ফ্লাইওয়েস হিসেবে পরিচিত। দেশান্তরী হওয়ার মূল কারণ গুলোর মধ্যে ঋতু পরিবর্তন খাদ্যের স্বল্পতা, জলবায়ু পরিবর্তন ও বংশানুক্রমিক ধারা অন্যতম।

শীত মৌসুমে হিমালয় পর্বতমালা এবং সাইবেরিয়া থেকে, কদাচ উত্তর মেরু থেকেও কিছু পাখি বাংলাদেশে প্রতি বছরই আসে এবং আবার ফিরে যায়। বার্ষিক এই আসা-যাওয়াই হচ্ছে পাখির পরিব্রজন, অভিপ্রায়ন বা মাইগ্রেশন। অভিপ্রায়ত পাখিকে আমরা বলি শীতের পাখি, অতিথি পাখি, পরিব্রাজক, যাযাবর বা পরিযায়ী পাখি।

সারা দুনিয়ার পাখির প্রজাতির সংখ্যা প্রায় ৯৯০০ থেকে ১০০০০ বলে পাখি বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তান উপমহাদেশে পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১২০০।

যারা মোট ২৯৫ গণের ৬৪ টি পরিবারের ১৬ টি বর্গের অন্তর্ভূক্ত। বিশ্বে ৯টি ফ্লাইওয়ে সাইট নেটওয়ার্ক রয়েছে। এগুলো হচ্ছে; ইস্ট এশিয়ান- অস্ট্রেলিয়ান ফ্লাইওয়ে, ইস্ট আটলান্টিক ফ্লাইওয়ে, ব্লাক সী বা মেডিট্রানিয়ান ফ্লাইওয়ে, ওয়েস্ট এশিয়ান-ইস্ট আফরিকান ফ্লাইওয়ে,

সেন্ট্রাল এশিয়ান ফ্লাইওয়ে, ওয়েস্ট প্যাসিফিক ফ্লাইওয়ে, প্যাসিফিক আমেরিকাস ফ্লাইওয়ে, মিসিসিপি আমেরিকাস ফ্লাইওয়ে এবং আটলান্টিক ফ্লাইওয়ে।

এই ফ্লাইওয়ে দিয়ে বাংলাদেশ, ক্যাম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, রাশিয়া, উত্তর আমেরিকা (আলাস্কা), মঙ্গোলিয়া, চীন, উত্তর কোরিয়া, দক্ষিণ কুরিয়া, অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, ফিলিপিন্স, সিংঙ্গাপুর, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, লাও পি.ডি.আর, মায়ানমার, ব্রুনই, পাপুয়া নিউগিনি,

নিউজিল্যান্ড ও পূর্ব তিমুরসহ ২২টি দেশে পরিযায়ী পাখিরা আনাগোনা করে থাকে। বিশেষজ্ঞদের মতে ইএএএফ’র এই উড়ন্ত পথে পৃথিবীর ২৫০ প্রজাতির প্রায় ৫০ মিলিয়ন পরিযায়ী পাখি (৫ কোটি) চলাচল করে থাকে।

শেয়ার করুন: