যুক্তরাষ্ট্র

শেষ অবধি আম্মা পাশ করেছেন

রিমি রুম্মান, যুক্তরাষ্ট্র। আম্মা এদেশের নাগরিকত্বের শপথ নিয়ে এসেছেন। এখন থেকে তিনি আমেরিকার নাগরিক। এ বিষয়ে আম্মার পরিষ্কার যুক্তি, গত পনর বছর যাবত এদেশে থাকছেন, সুবিধাদি ভোগ করছেন, তবে নাগরিক হতে দোষ কী?

বয়সের কারণে আম্মা যেহেতু অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না, তাই ডাক্তারের পেপারসসহ প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে নাগরিকত্বের আবেদন করা হয়েছিলো এক বছরেরও অধিক সময় আগে।

সাধারণত নাগরিকত্বের ইন্টার্ভিউয়ে আমেরিকা সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্ন করা হয়ে থাকে। বয়স্ক কিংবা শারীরিকভাবে অসুস্থদের কথা ভিন্ন। যাক, অবশেষে ইন্টারভিউয়ের জন্যে দিন, তারিখ নির্ধারিত করা হয়। সময় যতই ঘনিয়ে আসে, আমরা চিন্তিত হয়ে উঠি। আম্মা প্রশ্নকর্তা অফিসারের প্রশ্নের উত্তর ঠিক ঠিক ভাবে দিতে পারবে তো!

সহসাই এ বয়সী যারা এমন ইন্টার্ভিউয়ের মুখোমুখি হয়েছেন, তেমন চেনা পরিচিতজনদের ফোন করি। জানতে চাই কী ধরনের প্রশ্ন জিজ্ঞেস করে। জানলাম, বড়জোর নাম, জন্ম তারিখ, ঠিকানা জাতীয় কিছু সহজ প্রশ্ন করবে হয়তো। নির্দিষ্ট দিনে সব বুঝিয়ে বলি আম্মাকে। বলি, আম্মা, আপনার জন্ম তারিখ বলেন তো ? আম্মার ঝটপট উত্তর, তেতাল্লিশ।

আমি বলি, এভাবে বললে তো হবে না। সুন্দর করে গুছিয়ে দিন, মাস, বছর বলতে হবে। এখন কী মাস চলতেসে? মার্চ মাস না? আপনার জন্ম মার্চ মাসে। জন্ম সাল উনিশ'শ বেয়াল্লিশ। মনে থাকবে?

আম্মার চোখ, মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠে। দৃঢ়তার সাথে মাথা দুলিয়ে বললেন, এইবার মনে থাকবে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্রের ফাইল রেডি করে মা-ছেলে'কে বিদায় দিতে দরজা পর্যন্ত এগিয়ে যাই। বলি, আম্মা, এবার বলেন তো আপনার জন্ম তারিখ?

সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামতে নামতে আম্মা আস্থার সাথে বললেন, তেতাল্লিশ! যাক্‌, শেষ অবধি আম্মা পাশ করে এসেছেন। দু'দিন আগে ইউনাইটেড স্টেটস কোর্ট হাউজে গিয়ে শপথ নিয়েছেন। পাসপোর্ট এর জন্যে আবেদন করেছেন। সহসাই দেশে বেড়াতে যাবেন।

গ্রামে, যেখানে জন্মেছেন, বেড়ে উঠেছেন, সেখানেও যাবেন। আম্মার খেলার সাথীদের কেউ বেঁচে আছেন কিনা জানি না। থাকলে তাঁদের সাথে গল্প করবেন হয়তো আমেরিকার যাপিত জীবন নিয়ে। শাশুড়ি আম্মার জন্যে শুভকামনা। (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

শেয়ার করুন: